বেঙ্গালুরু: কর্ণাটক সরকারের বহুল আলোচিত জাতিগত সমীক্ষা (Caste Survey) নিয়ে ফের বিতর্কের ঝড় উঠেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজ্যের প্রায় ১৫ লক্ষাধিক মানুষ সমীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে অস্বীকার করেছেন।
এমনকি অনেক বাড়ি তালাবদ্ধ পাওয়া গেছে, আবার বহু পরিবার সমীক্ষকদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে এড়িয়ে গিয়েছেন। ফলে সমীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এই তথ্য আদৌ কতটা বিশ্বাসযোগ্য হবে?
সূত্রের খবর অনুযায়ী রাজ্য সরকারের নির্দেশে চলা এই সমীক্ষা রাজ্যের জাতিগত পরিসংখ্যান ও সামাজিক অবস্থান নির্ধারণের জন্য শুরু হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল বিভিন্ন জাতি, সম্প্রদায় ও অর্থনৈতিক স্তরের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা, যাতে সামাজিক ন্যায়বিচার নীতি আরও কার্যকর করা যায়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, বিশাল সংখ্যক মানুষ এই প্রক্রিয়া থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখছেন।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, অনেক গ্রাম ও শহুরে ওয়ার্ডে সমীক্ষকরা গিয়ে বাড়ি বন্ধ পেয়েছেন। কেউ কেউ সরাসরি অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। কারণ হিসেবে উঠে এসেছে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা, রাজনৈতিক অবিশ্বাস, এবং “জাতিগত বিভাজনের” আশঙ্কা। অনেকেই বলেছেন, “আমরা চাই না আমাদের জাতি আবার রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হোক।”
খেজুরিতে সংখ্যালঘু ভোটে থাবা! তৃণমূল ‘সেল’ সভাপতির বিজেপিতে যোগ
রাজ্য সরকারের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, এ ধরনের প্রতিরোধ সমীক্ষার মানকে প্রভাবিত করবে না। সমাজ কল্যাণ দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “আমরা একাধিকবার মাঠপর্যায়ে যাচ্ছি, মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। এটা তাঁদের অধিকার এবং রাজ্যের সামাজিক নীতি প্রণয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
তবে সমাজবিজ্ঞানীরা এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মতে, ১৫ লক্ষাধিক মানুষের অনুপস্থিতি মানে তথ্যের বিশাল ফাঁক থেকে যাওয়া। এমন অসম্পূর্ণ তথ্য দিয়ে জাতিগত প্রতিনিধিত্ব বা সংরক্ষণ নীতি নির্ধারণ করলে তা বাস্তবতাকে বিকৃত করতে পারে।
বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল ল’ স্কুলের সমাজবিজ্ঞানী ড. এস. কৃষ্ণমূর্তি বলেন, “যে রাজ্যে সামাজিক বৈষম্য ইতিমধ্যেই জটিল, সেখানে তথ্যের ঘাটতি মানে নীতিগত বিভ্রান্তি তৈরি হবে। সরকারের উচিত এই অনীহা কাটাতে আস্থাভিত্তিক প্রচার চালানো।”
রাজনৈতিক মহলেও এই সমীক্ষা নিয়ে মতভেদ প্রবল। কংগ্রেস সরকার বলছে, এই সমীক্ষা সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার পথে একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ, যা ওবিসি ও অন্যান্য প্রান্তিক সম্প্রদায়কে সঠিক প্রতিনিধিত্ব দেবে। অন্যদিকে, বিরোধী বিজেপি অভিযোগ করেছে, এই সমীক্ষা “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রণোদিত” নির্বাচনী হিসাব মেলাতে জাতিগত বিভাজনকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
রাজ্য সরকার জানিয়েছে, আগামী দুই মাসের মধ্যে সমীক্ষার প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। তবে এত বড় মাত্রার অনুপস্থিতি এবং অনীহা থাকলে সেই প্রতিবেদনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠছে।
সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে এক ধরনের বিভ্রান্তি কাজ করছে একদিকে জাতিগত তথ্যকে স্বচ্ছ সামাজিক নীতি নির্ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় বলে মনে করা হচ্ছে, অন্যদিকে মানুষ আশঙ্কা করছেন, এই তথ্য রাজনৈতিক অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে। এই দ্বৈত ভাবনাই আজ কর্ণাটকের জাতিগত সমীক্ষাকে দেশের অন্যতম বিতর্কিত সামাজিক উদ্যোগে পরিণত করেছে।


