কার্গিল যুদ্ধের ২৬ বছরেও অমলিন বীরত্বের গাঁথা

প্রতি বছর ২৬ জুলাই কার্গিল বিজয় দিবস (Kargil War) হিসেবে পালিত হয়। যা একদিকে যেমন ভারতবর্ষের জন্য গর্বের। আবার তার সাথে জড়িয়ে আছে কিছু বেদনাময়…

Kargil War 26 year of glory

প্রতি বছর ২৬ জুলাই কার্গিল বিজয় দিবস (Kargil War) হিসেবে পালিত হয়। যা একদিকে যেমন ভারতবর্ষের জন্য গর্বের। আবার তার সাথে জড়িয়ে আছে কিছু বেদনাময় স্মৃতি। ১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধে প্রাণ বিসর্জন দেওয়া ভারতীয় সৈনিকদের অপরিসীম সাহস ও ত্যাগের প্রতি প্রত্যেক বছর শ্রদ্ধা জানায় সমগ্র ভারতবাসি ।

এই দিনটি দেশপ্রেম, গর্ব এবং কৃতজ্ঞতার বোধ জাগিয়ে তোলে। বিশেষ করে আজকের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে জাতীয় ঐক্য ও ত্যাগের চেতনাকে আরও শক্তিশালী করে। ১৯৯৯ সালের মে মাসে পাকিস্তানি সৈন্য ও জঙ্গিরা নিয়ন্ত্রণ রেখা (LoC) অতিক্রম করে জম্মু ও কাশ্মীরের কার্গিল অঞ্চলের চূড়াগুলি দখল করে। এই কারণেই শুরু হয় ভারত পাক সংঘর্ষ।

   

কয়েক সপ্তাহের তীব্র যুদ্ধের পর ভারতীয় সেনাবাহিনী সমস্ত দখল করে নেওয়া করছিল পুনরুদ্ধার করে। ২৬ জুলাই, ১৯৯৯-এ যুদ্ধ আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত হয়। এই বছর কার্গিল বিজয় দিবসের ২৬তম বার্ষিকী। আর এই ২৬তম বার্ষিকীতেও দেশ এবং দেশবাসি বীর যোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছে যারা লাদাখের বরফে ঢাকা উচ্চতায় অসম্ভব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে জাতির স্বাধীনতা রক্ষা করেছেন।

কার্গিল যুদ্ধের পটভূমি

১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধ ছিল হিমালয়ের সবচেয়ে উঁচু জায়গায় হওয়া ভারত পাক সামরিক সংঘর্ষ। পাকিস্তানি সৈন্য ও জঙ্গিরা বাটালিক, দ্রাস এবং কাকসার অঞ্চলে অনুপ্রবেশ করে গুরুত্বপূর্ণ চূড়াগুলি দখল করে নেয়। এই অনুপ্রবেশ লাহোর শান্তি চুক্তির ঠিক পরেই ঘটে। লাহোর শান্তি চুক্তির পর এই অনুপ্রবেশ ছিল পাকিস্তানের তরফ থেকে একটি নিয়ম লঙ্ঘন

ভারত নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম না করে শৃঙ্খলা ও দৃঢ়তার সঙ্গে এই হুমকির জবাব দেয়। ভারতীয় সেনাবাহিনী অপারেশন বিজয় শুরু করে হারানো অবস্থান পুনরুদ্ধারের জন্য। টোলোলিং, টাইগার হিল এবং পয়েন্ট ৪৮৭৫-এর মতো যুদ্ধে সৈনিকরা অসাধারণ সাহসিকতা প্রদর্শন করে।

ক্যাপ্টেন বিক্রম বাটরা, মেজর রাজেশ অধিকারী, লেফটেন্যান্ট ক্লিফোর্ড নংরুম, গ্রেনেডিয়ার যোগেন্দ্র সিং যাদব এবং রাইফেলম্যান সঞ্জয় কুমারের মতো বীররা নিজের জীবন বলিদান দিয়ে শেষ রক্ত বিন্দু অবধি লড়াই করেন।

ত্যাগ ও সম্মান

কার্গিল যুদ্ধে ৫৪৫ জন ভারতীয় সৈনিক শহীদ হয়েছেন, কিন্তু তাদের ত্যাগ জাতীয় ঐক্যকে শক্তিশালী করেছে এবং ভারতের সংযমের জন্য আন্তর্জাতিক সম্মান অর্জন করেছে। এই যুদ্ধে অসাধারণ বীরত্বের জন্য ভারত সরকার ৪টি পরম বীর চক্র, ৯টি মহাবীর চক্র, ৫৫টি বীর চক্র, ১টি সর্বোত্তম যুদ্ধ সেবা মেডেল, ৬টি উত্তম যুদ্ধ সেবা মেডেল, ৮টি যুদ্ধ সেবা মেডেল, ৮৩টি সেনা মেডেল এবং ২৪টি বায়ু সেনা মেডেল প্রদান করে।

Advertisements

পরম বীর চক্র বিজয়ীদের মধ্যে রয়েছেন ক্যাপ্টেন মনোজ কুমার পাণ্ডে (মরণোত্তর, ১১ গোর্খা রাইফেলস), গ্রেনেডিয়ার যোগেন্দ্র সিং যাদব (১৮ গ্রেনেডিয়ার্স), ক্যাপ্টেন বিক্রম বাটরা (মরণোত্তর, ১৩ জেকে রাইফেলস) এবং রাইফেলম্যান সঞ্জয় কুমার (১৩ জেকে রাইফেলস)।

এছাড়া, মহাবীর চক্র পাওয়া বীরদের মধ্যে রয়েছেন ক্যাপ্টেন অনুজ নায়ার (মরণোত্তর, ১৭ জাট), মেজর রাজেশ অধিকারী (মরণোত্তর, ১৮ গ্রেনেডিয়ার্স), মেজর বিবেক গুপ্ত (মরণোত্তর, ২ রাজপুতানা রাইফেলস) এবং লেফটেন্যান্ট ক্লিফোর্ড নংরুম (মরণোত্তর, ১২ জেকে এলআই)। এই সম্মানগুলি কার্গিল যুদ্ধের তীব্রতা এবং সৈনিকদের অসাধারণ সাহসের প্রতীক।

কোচবিহারে ফের এনআরসি নোটিশ, নিশিকান্ত দাসের কাগজপত্র নিয়ে অসন্তোষ ট্রাইব্যুনাল

কার্গিল বিজয় দিবসের তাৎপর্য

কার্গিল বিজয় দিবস শুধু একটি স্মরণ দিবস নয়, সমগ্র ভারতবাসীর জন্য একটি পবিত্র স্মৃতি। এই দিনটি সেই বীরদের স্মরণ করায় যারা লাদাখের বরফে ঢাকা উচ্চতায় অসম্ভব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে দেশের সম্মান রক্ষা করেছেন। দ্রাসে অবস্থিত কার্গিল যুদ্ধ স্মৃতিসৌধ তাদের ত্যাগ ও বীরত্বের চিরস্থায়ী প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে।

কার্গিল বিজয় দিবস ভারতের ইতিহাসের এক অমর গাথা। এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে আমাদের সৈনিকরা কীভাবে তাদের জীবন উৎসর্গ করে দেশের স্বাধীনতা ও গৌরব রক্ষা করেছেন। ক্যাপ্টেন বিক্রম বাটরার “ইয়ে দিল মাঙ্গে মোর” স্লোগান এবং তাদের অসাধারণ সাহস সমগ্র জাতির হৃদয়ে মননে গাঁথা হয়ে থাকবে। এই দিনটি তরুণদের স্বপ্ন দেখতে, সাহসী হতে এবং দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে অনুপ্রাণিত করে।

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News