রাজ্যসভার স্বতন্ত্র সাংসদ কপিল সিব্বাল (Kapil Sibal) বলেছেন, ভারতীয় জাতীয় উন্নয়নমূলক অন্তর্ভুক্তিমূলক জোট (ইন্ডিয়া) বিরোধী জোটকে জনসমক্ষে একটি “ব্লক” হিসেবে উপস্থাপিত করা উচিত, “আন-ব্লক” হিসেবে নয়। পিটিআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, ইন্ডিয়া জোটের দলগুলির একটি সমন্বিত নীতি, আদর্শিক কাঠামো এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি সুস্পষ্ট কর্মসূচি থাকা প্রয়োজন। তিনি এই জোটের জন্য একটি আনুষ্ঠানিক কাঠামো এবং মুখপাত্র নিয়োগের পক্ষে দীর্ঘদিন ধরে সওয়াল করে আসছেন, যারা জোটের মতামতকে প্রতিনিধিত্ব করবে।
সিব্বাল বলেন, “ইন্ডিয়া জোটকে একটি ব্লক হিসেবে দেখাতে হবে, জনসমক্ষে এটি যেন নিজেকে ভেঙে না ফেলে। তাদের একটি সমন্বিত নীতি, আদর্শিক কাঠামো এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি সমন্বিত কর্মসূচি থাকতে হবে।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমি রাজ্য বা জাতীয় স্তরের কথা বলছি না। জাতীয় গুরুত্বের বিষয়গুলির উপর চিন্তাভাবনায় একটি সমন্বয় থাকতে হবে। যতক্ষণ না এই ব্যবস্থা তৈরি হয় এবং ইন্ডিয়া জোটের মতামত প্রকাশের জন্য মুখপাত্র নিযুক্ত না হয়, ততক্ষণ এটি কার্যকরভাবে এগিয়ে যেতে পারবে না।”
রাজ্য নির্বাচনে ইন্ডিয়া জোটের অসঙ্গতি
আরো দেখুন কলকাতায় সিঙ্গল-ইউজ প্লাস্টিক নিষিদ্ধ নিয়ে কেএমসি ও পিসিবির বাকযুদ্ধ
সাম্প্রতিক রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে ইন্ডিয়া জোটের শরিক দলগুলির মধ্যে দ্বন্দ্ব এবং তীব্র বাক্যবিনিময় নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সিব্বাল বলেন, এটি জোটের জন্য একটি খারাপ চিত্র তুলে ধরেছে। বিশেষ করে দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস এবং আম আদমি পার্টির (আপ) মধ্যে তীক্ষ্ণ বাদানুবাদ উল্লেখযোগ্য।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, লোকসভা নির্বাচনের পর ইন্ডিয়া জোটের এই অসঙ্গতির কারণে বিজেপি হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র এবং দিল্লিতে জয়লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। সিব্বাল বলেন, “একটি আনুষ্ঠানিক রাজনৈতিক কাঠামোর প্রয়োজনীয়তা আমি দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি। হয়তো এটি কারও কাছে গ্রহণযোগ্য নয়, অথবা তারা মনে করে এখন এটির উপযুক্ত সময় নয়। তবে আমি জোটের পক্ষে কথা বলতে পারি না।”
তবে, তিনি বিরোধীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী। তিনি বলেন, “আমি বিরোধীদের জন্য একটি ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছি। এটি কী রূপ নেবে, কী কাঠামো হবে, তা সময় বলবে।” লোকসভা নির্বাচনের আগে কেন্দ্রে বিজেপি-নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোটের (এনডিএ) মোকাবিলা করতে ইন্ডিয়া জোট গঠিত হয়েছিল।
ওয়াকফ (সংশোধন) বিল নিয়ে সিব্বালের মতামত
চলমান বাজেট অধিবেশনে ওয়াকফ (সংশোধন) বিল উত্থাপিত হতে পারে। এ বিষয়ে সিব্বাল বলেন, এনডিএ জোটের শরিকদের অবস্থান কী হবে, তা দেখতে হবে, কারণ বিজেপির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। তিনি বলেন, “বিহারে নির্বাচন আসছে। যদি তারা এই বিল আনেন, তবে তারা চিন্তিত হতে পারেন যে এটি বিহারের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কী প্রভাব ফেলবে। ফলাফল কী হবে, তা জানি না। অপেক্ষা করে দেখা যাক। যদি বিল পাস হয়, তবে যারা এটির বিরোধিতা করতে চান, তাদের জন্য বিকল্প রয়েছে।” এই বিলটি বর্তমানে যৌথ সংসদীয় কমিটির বিবেচনাধীন রয়েছে এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে এটি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে উদ্বেগ
সীমানা পুনর্নির্ধারণ (ডিলিমিটেশন) ইস্যু নিয়ে সিব্বাল বলেন, এটি দেশের রাজনীতির জন্য গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্টালিন এই বিষয়ে একটি বৈঠক ডেকেছিলেন, যেখানে কংগ্রেসসহ বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “এটি আমাদের রাজনীতির ভবিষ্যতের উপর প্রভাব ফেলবে। তবে শর্ত হলো, নতুন জনগণনা না হলে সীমানা পুনর্নির্ধারণ হবে না। ২০২১ সালেও জনগণনা হয়নি। প্রথমে জনগণনা, তারপর সীমানা পুনর্নির্ধারণ। তাই, ‘অভি দিল্লি দূর অস্ত’।”
সিব্বালের রাজনৈতিক পটভূমি
কপিল সিব্বাল ইউপিএ ১ এবং ইউপিএ ২ সরকারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন। ২০২২ সালের মে মাসে তিনি কংগ্রেস ত্যাগ করেন এবং সমাজবাদী পার্টির সমর্থনে স্বতন্ত্র সাংসদ হিসেবে রাজ্যসভায় নির্বাচিত হন। তিনি একজন প্রখ্যাত আইনজীবী এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবেও পরিচিত।
ইন্ডিয়া জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা
সিব্বালের মতে, ইন্ডিয়া জোটের অভ্যন্তরীণ সমন্বয়হীনতা এবং স্পষ্ট কাঠামোর অভাব এটির কার্যকারিতার পথে বড় বাধা। রাজ্য নির্বাচনে শরিক দলগুলির মধ্যে দ্বন্দ্ব জোটের ঐক্যের উপর প্রশ্ন তুলেছে। তিনি মনে করেন, জাতীয় গুরুত্বের বিষয়ে একটি সুসংহত দৃষ্টিভঙ্গি এবং মুখপাত্রের মাধ্যমে জোটের মতামত প্রকাশ না করলে, এটি জনগণের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হবে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইন্ডিয়া জোটের সাফল্য নির্ভর করবে এটি কীভাবে নিজেকে একটি ঐক্যবদ্ধ শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করে এবং সাধারণ মানুষের জন্য একটি বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে তার উপর। সিব্বালের পরামর্শ অনুসারে, একটি আনুষ্ঠানিক কাঠামো এবং সমন্বিত নীতি এই জোটকে শক্তিশালী করতে পারে। তবে, শরিক দলগুলির মধ্যে মতৈক্য গড়ে তোলা এবং এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।
কপিল সিব্বালের এই মন্তব্য ইন্ডিয়া জোটের ভবিষ্যৎ কৌশল নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছে। ওয়াকফ বিল এবং সীমানা পুনর্নির্ধারণের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে জোটের অবস্থান কী হবে, তা এটির ঐক্য ও কার্যকারিতার পরীক্ষা হবে। সিব্বালের আশাবাদ সত্ত্বেও, জোটকে একটি শক্তিশালী বিকল্প হিসেবে গড়ে তুলতে দলগুলির মধ্যে সমন্বয় এবং একটি স্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। আগামী দিনে এই জোট কীভাবে নিজেকে সংগঠিত করে এবং জনগণের সামনে উপস্থাপন করে, তা ভারতীয় রাজনীতির গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।