জম্মু ও কাশ্মীরের পাহলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় কমপক্ষে ২৬ জন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন তালিকাতে রয়েছেন তিন বঙ্গবাসী ও। এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে রাজ্যসভার সাংসদ কপিল সিব্বল ( kapil sibal) বুধবার দাবি করেছেন যে এই হামলার জন্য দায়ী সন্ত্রাসীদের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) বিচার করা উচিত। তিনি আরও জানিয়েছেন যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উচিত পাকিস্তানকে “সন্ত্রাসী রাষ্ট্র” হিসেবে ঘোষণা করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত
নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং আগ্রাসনের মতো গুরুতর অপরাধের তদন্ত ও বিচার করে। কপিল সিব্বল সংবাদ মাধ্যম কে বলেন, “এই হামলার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার করা উচিত।
আমি ( kapil sibal) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করছি পাকিস্তানকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করতে এবং আইসিসিতে এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে।” তবে, ভারত রোম স্ট্যাটিউটে স্বাক্ষর করেনি, যা আইসিসির কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আন্তর্জাতিক চুক্তি। ফলে ভারত আইসিসির ‘অ্যাসেম্বলি অফ স্টেটস পার্টিস’-এর সদস্য নয়।
“পাগলামি ও উন্মাদনার কাজ” ( kapil sibal)
সিব্বল ( kapil sibal) এই হামলাকে “পাগলামি ও উন্মাদনার কাজ” হিসেবে চিহ্নিত করে বলেন, “এটি কেবল পাগলামি বা উন্মাদনার কাজ নয়, এর পেছনে আরও গভীর পরিকল্পনা রয়েছে। বাইসারান উপত্যকা পাহলগাম থেকে কিছুটা উঁচুতে অবস্থিত, যেখানে গাড়ি দিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। ফলে নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষে সেখানে দ্রুত পৌঁছানো কঠিন।”
তিনি আরও বলেন, “সন্ত্রাসীরা এই স্থানটি বেছে নিয়ে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে। তারা একে-৪৭ এবং অন্যান্য অস্ত্র বহন করছিল এবং পুরুষদের আলাদা করে তাদের লক্ষ্যবস্তু করেছে। এই হামলার পরিকল্পনা আগে থেকেই করা হয়েছিল, কারণ তারা জানত নিরাপত্তা বাহিনীর সেখানে পৌঁছাতে সময় লাগবে।”
দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট
এই হামলার দায় স্বীকার করেছে দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ), যিনি পাকিস্তান-ভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠন লস্কর-ই-তইবার একটি প্রক্সি গ্রুপ। ভারত সরকার ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে টিআরএফ-কে ইউএপিএ-র অধীনে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছিল। জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) এই গ্রুপের একজন শীর্ষ সদস্য শেখ সাজ্জাদ গুলের বিরুদ্ধে পুরস্কার ঘোষণা করেছে।
এই হামলার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে লস্কর-ই-তইবার কমান্ডার সাইফুল্লাহ সাজিদ জাট, যিনি সাইফুল্লাহ কাসুরি নামেও পরিচিত, তার নাম উঠে এসেছে। তিনি পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের শাঙ্গামাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা এবং পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে।
‘এই শোকের সময়ে রাজ্য সরকার পাশে থাকবে’—মমতার বার্তা নিহতদের পরিবারের জন্য
সিব্বল দাবি করেছেন
সিব্বল ( kapil sibal) দাবি করেছেন যে এই হামলার পেছনে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় সমর্থন রয়েছে। তিনি পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের সাম্প্রতিক বক্তব্যের উল্লেখ করে বলেন, “মুনির কাশ্মীরকে পাকিস্তানের ‘জুগুলার ভেইন’ বলেছেন। এই বক্তব্যের পর পাকিস্তান-ভিত্তিক একটি গ্রুপ এই হামলা চালিয়েছে, যা স্পষ্টতই রাষ্ট্র-স্পনসর্ড সন্ত্রাসবাদ।”
তিনি ( kapil sibal) আরও বলেন, “আমি নিশ্চিত যে বিরোধী দল, বিশেষ করে কংগ্রেস, সরকার যদি পাকিস্তানকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করার পদক্ষেপ নেয়, তবে তারা এই সিদ্ধান্তের পাশে দাঁড়াবে। আমি নিজেও প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পাশে থাকব।”
এই হামলা দেশজুড়ে শোকের ছায়া ফেলেছে। স্থানীয় সম্প্রদায় এই ঘটনার প্রতিবাদে বন্ধের ডাক দিয়েছে। হামলার পর নিরাপত্তা বাহিনী বুধবার থেকে সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করতে ব্যাপক তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে। সাধারণত পর্যটকদের ভিড়ে মুখরিত পাহলগামের রাস্তাগুলো এখন নির্জন। নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কঠোর করা হয়েছে।
এই হামলায় নিহতদের মধ্যে দুজন বিদেশি নাগরিক—একজন নেপালের এবং অপরজন সংযুক্ত আরব আমিরাতের। বিশ্ব নেতারাও এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান উরসুলা ফন ডের লেইন ভারতের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন। ট্রাম্প প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ফোনে কথা বলে এই হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের পাশে রয়েছে।”
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সৌদি আরব সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠক করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ শ্রীনগরে পৌঁছে নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছেন এবং নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও এই হামলার নিন্দা জানিয়ে নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।
এই হামলা কাশ্মীর উপত্যকায় ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর সবচেয়ে মারাত্মক ঘটনা। ভারত সরকার এবং নিরাপত্তা বাহিনী এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কপিল সিব্বলের আইসিসিতে বিচার এবং পাকিস্তানকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ঘোষণার দাবি ভারতের কূটনৈতিক ও আইনি পদক্ষেপের দিকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছে। তবে, ভারতের আইসিসির সদস্য না হওয়া এই প্রক্রিয়ায় জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।