ট্রাম্পের শুল্কে ধুঁকছে কানপুরের চর্মশিল্প

উত্তরপ্রদেশের কানপুর, (Kanpur Leather) যিনি ভারতের চামড়া শিল্পের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের ৫০% শুল্ক আরোপের ফলে গভীর সংকটের মুখোমুখি…

Kanpur Leather

উত্তরপ্রদেশের কানপুর, (Kanpur Leather) যিনি ভারতের চামড়া শিল্পের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের ৫০% শুল্ক আরোপের ফলে গভীর সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। এই শুল্ক নীতি, যা ভারতের রাশিয়ার তেল ক্রয়ের প্রতিক্রিয়ায় আরোপিত হয়েছে, কানপুরের বার্ষিক ২,০০০ কোটি টাকার চামড়া রফতানি বাজারকে প্রায় সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

কানপুর এবং পার্শ্ববর্তী উন্নাওতে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানের সঙ্গে জড়িত এই শিল্প এখন অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।কাউন্সিল ফর লেদার এক্সপোর্টস (সিএলই)-এর কেন্দ্রীয় অঞ্চলের চেয়ারম্যান আসাদ ইরাকি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের জন্য উৎপাদন ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে, যদিও ক্রিসমাসের অর্ডার এসেছে।

   

তিনি বলেন, “ক্রেতা ও বিক্রেতারা ৫-১০% অতিরিক্ত খরচ সামলাতে পারে, কিন্তু ৫০% শুল্কের মতো এত বড় বৃদ্ধি কারও পক্ষে সামাল দেওয়া সম্ভব নয়।” তিনি সম্প্রতি কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের সঙ্গে দিল্লিতে বৈঠক করেন, যেখানে ২৫% শুল্কের ক্ষেত্রে সুদ ভর্তুকির মতো ত্রাণ ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু এখন শুল্ক ৫০%-এ পৌঁছে যাওয়ায় এই ব্যবস্থাগুলি অপ্রতুল বলে মনে করা হচ্ছে।

কানপুরের চামড়া ব্যবসায়ী জাভেদ ইকবাল বলেন, এই শুল্ক বৃদ্ধি কানপুর এবং উন্নাওর শিল্পকে বিধ্বস্ত করতে পারে। তিনি জানান, পাকিস্তান (১৯%), বাংলাদেশ (২০%), ভিয়েতনাম এবং কম্বোডিয়ার তুলনায় ভারতের উপর আরোপিত ৫০% শুল্ক আমেরিকান ক্রেতাদের অন্য দেশের দিকে ঝুঁকতে বাধ্য করবে।

“আমরা জাতীয় স্বার্থে ক্ষতি সহ্য করতে প্রস্তুত, কিন্তু এই পরিস্থিতি আমাদের শিল্পের জন্য ধ্বংসাত্মক,” তিনি বলেন। প্রেরণা ভার্মা, একজন চামড়া আনুষঙ্গিক রপ্তানিকারক, জানান, নতুন নীতির বিষয়ে বিভ্রান্তির কারণে উৎপাদন প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চাহিদা ইতিমধ্যে ৬০% কমে গেছে, যার ফলে কিছু ইউনিট শ্রমিক ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়েছে।

সিএলই-এর জাতীয় চেয়ারম্যান আর কে জালান জানিয়েছেন, এই শুল্কের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের চামড়া রফতানির ৯০% পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তিনি বলেন, “নতুন বাজারে প্রবেশ করা কখনোই দ্রুত প্রক্রিয়া নয়।”

তিনি রাশিয়া এবং আফ্রিকার দেশগুলোতে বাণিজ্য প্রতিনিধি দল পাঠানোর পরিকল্পনার কথা জানান, যদিও জুতোর আকার, ডিজাইন এবং গ্রাহকের পছন্দের পার্থক্যের কারণে বাজার পরিবর্তন করা সহজ নয়। বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল রাশিয়ায় এই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

Advertisements

কানপুরের আরেক রফতানিকারক জাফর ইকবাল জানান, মে মাসে যখন শুল্ক ছিল ১০%, তখন তারা অর্ডার ধরে রাখতে খরচের অর্ধেক বহন করেছিলেন। কিন্তু বর্তমান ৫০% শুল্কের পরিপ্রেক্ষিতে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের পক্ষেই এটি সামলানো অসম্ভব।

“আমাদের পাঁচটি কনটেইনার প্রস্তুত, কিন্তু আমরা কী করব জানি না,” তিনি বলেন। নাইয়ার জামাল, আরেকজন রফতানিকারক, জানান, নমামি গঙ্গে প্রকল্পের মতো পরিবেশগত নিয়মের কারণে শিল্প ইতিমধ্যে চাপের মুখে ছিল, এবং এই শুল্ক বৃদ্ধি তাদের জন্য আরও বড় ধাক্কা।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে কানপুর থেকে আমেরিকায় ২,৫০০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছিল, যার মধ্যে চামড়া রফতানি ছিল ১,০০০ কোটি টাকা। সিএলই-এর আঞ্চলিক প্রেসিডেন্ট আসাদ ইরাকি বলেন, এই শুল্ক আরোপ অন্যায্য, এবং ভারতের উচিত আমেরিকার উপর নির্ভরতা কমিয়ে অন্য দেশে ব্যবসা সম্প্রসারণ করা। তিনি জানান, এই সিদ্ধান্ত সরাসরি ও পরোক্ষভাবে কানপুরের ১০ লক্ষ মানুষের উপর প্রভাব ফেলবে এবং এক লক্ষ শ্রমিকের কর্মসংস্থান হুমকির মুখে পড়বে।

বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন, বাজার বৈচিত্র্যকরণ, পণ্যের পুনঃস্থাপন, এবং গুণগত মান উন্নতির মাধ্যমে এই ধাক্কা কিছুটা সামাল দেওয়া সম্ভব। তবে, সরকারি সহায়তা এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশন (এফআইইও)-এর সহকারী ডিরেক্টর অলোক শ্রীবাস্তব বলেন, কানপুরের চামড়া শিল্পকে বাঁচাতে সরকারের পক্ষ থেকে সুদ ভর্তুকি এবং রপ্তানি ঋণ সহায়তার মতো জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন।

ডিজিটাল পার্সোনাল ডেটা প্রোটেকশন আইনো ভারতীয় স্টার্টআপে প্রভাব

এই সংকটের মধ্যে কানপুরের ব্যবসায়ীরা আফ্রিকা এবং ইউরোপের বাজারে নতুন সম্ভাবনা খুঁজছেন। তবে, এই রূপান্তরে সময় লাগবে, এবং ততক্ষণে শিল্পের উপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়বে। এই পরিস্থিতি কানপুরের চামড়া শিল্পের ভবিষ্যৎ এবং এর সঙ্গে জড়িত লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের জীবিকার উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।