উত্তর কেরালার কান্নুরে (Kannur) দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য কয়েক দশক ধরে সেবা দিয়ে আসা জনপ্রিয় চিকিৎসক ডাঃ এ কে রাইরু গোপাল (AK Rairu Gopal) রবিবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
ডাঃ গোপালকে স্থানীয় মানুষ স্নেহভরে ডাকতেন ‘দুই টাকার ডাক্তার’ নামে। কারণ, দীর্ঘ ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি মাত্র ২ টাকা ফি নিয়ে চিকিৎসা করতেন। পরবর্তীতে তিনি সামান্য বাড়িয়ে ৪০–৫০ টাকা নিলেও, যেখানে অন্যান্য চিকিৎসকদের পরামর্শ ফি কয়েকশ টাকা, সেখানে তাঁর ফি সবসময়ই গরিবদের নাগালের মধ্যে ছিল।
বাণিজ্যিকীকৃত স্বাস্থ্যসেবার যুগে তিনি থেকে গিয়েছিলেন উদারতা ও মানবিক নীতিশাস্ত্রের প্রতীক হিসেবে। এক দরিদ্র রোগীর বাড়িতে গিয়ে করুণ অবস্থা প্রত্যক্ষ করার পর থেকেই তাঁর এই স্বেচ্ছাসেবী চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। এরপর থেকে তিনি দিনমজুর, ছাত্রছাত্রী এবং অভাবী মানুষদের জন্য সহজলভ্য চিকিৎসা প্রদানে জীবন উৎসর্গ করেন।
উল্লেখ্য, কর্মজীবনের সময় তিনি প্রায় প্রতিদিন ভোর ৩টা থেকে রোগী দেখা শুরু করতেন। কখনও কখনও দিনে ৩০০ জনেরও বেশি রোগী তাঁর কাছে চিকিৎসা নিতে আসতেন। তাঁর দৈনন্দিন জীবন ছিল সরল ও শৃঙ্খলাবদ্ধ—ভোর ২টা ১৫ মিনিটে ঘুম থেকে উঠে গরুর যত্ন নেওয়া, দুধ সংগ্রহ ও প্রার্থনার পর সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে থান মানিককাভু মন্দিরের পাশে তাঁর বাড়ি থেকেই রোগী দেখা শুরু করতেন।
দীর্ঘ সারিতে অপেক্ষারত রোগীদের চিকিৎসা দিতে তাঁর সহায়ক ছিলেন স্ত্রী ডাঃ শকুন্তলা এবং একজন সহকারী, যারা ওষুধ বিতরণ ও ভিড় সামলাতেন।
শারীরিক অসুস্থতার কারণে শেষ দিকে রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমলেও তাঁর অঙ্গীকার কখনও নড়বড়ে হয়নি। তাঁর বাবা, সম্মানিত চিকিৎসক ডাঃ এ গোপালন নাম্বিয়ারের কাছ থেকে পাওয়া নীতি— “যদি অর্থ উপার্জনের কথা হয়, তবে অন্য কিছু করুন”— ছিল তাঁর জীবনের মূলমন্ত্র।
ফলে তিনি কখনও কর্পোরেট প্রলোভন নেননি, ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের আপ্যায়ন প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং সবসময়ই কম দামের কার্যকর ওষুধ লিখেছেন। তাঁর ভাই ডাঃ বেণুগোপাল ও ডাঃ রাজগোপালের সঙ্গে মিলে তিনি পারিবারিক ঐতিহ্য হিসেবে নিঃস্বার্থ চিকিৎসার ধারা বজায় রেখেছিলেন।
কান্নুর আজ বিদায় জানাল এক কিংবদন্তিকে—যিনি প্রমাণ করে গিয়েছেন যে চিকিৎসা শুধুই ব্যবসা নয়, বরং মানবসেবার মহান ব্রত।