ওড়িশায় দুর্ঘটনার কবলে কামাক্ষ্যা এক্সপ্রেস

ওড়িশার কটক জেলার নির্গুন্ডি রেলওয়ে স্টেশনের কাছে আজ দুপুরে বেঙ্গালুরু থেকে গুয়াহাটিগামী কামাক্ষ্যা এসি সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস (kamakhya express) (ট্রেন নম্বর ১২৫৫১) লাইনচ্যুত হয়েছে। এই দুর্ঘটনায়…

kamakhya express accedent

ওড়িশার কটক জেলার নির্গুন্ডি রেলওয়ে স্টেশনের কাছে আজ দুপুরে বেঙ্গালুরু থেকে গুয়াহাটিগামী কামাক্ষ্যা এসি সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস (kamakhya express) (ট্রেন নম্বর ১২৫৫১) লাইনচ্যুত হয়েছে। এই দুর্ঘটনায় ট্রেনের ১১টি বগি ট্র্যাক থেকে ছিটকে পড়েছে।

   

ঘটনাটি ঘটেছে দুপুর ১১:৫৪ মিনিটে, যখন ট্রেনটি চৌদ্দার এলাকার মঙ্গুলি যাত্রী হল্টের কাছাকাছি পৌঁছেছিল। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি বলে রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন, যদিও এটি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত হয়নি।

Advertisements

দুর্ঘটনার বিবরণ (kamakhya express)

ইস্ট কোস্ট রেলওয়ের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক অশোক কুমার মিশ্র জানিয়েছেন, “আমরা কামাক্ষ্যা সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসের কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হওয়ার খবর পেয়েছি। এখন পর্যন্ত কোনো আহত বা হতাহতের তথ্য আমাদের কাছে নেই।” তিনি আরও বলেন, দুর্ঘটনার কারণ এখনও নির্ধারণ করা যায়নি এবং তদন্ত শুরু হয়েছে। দুর্ঘটনার পর ট্রেনের বগিগুলো ট্র্যাক থেকে ছিটকে পড়ে আশপাশের জঙ্গল ও ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়ে। B-6 থেকে B-14 পর্যন্ত বগিগুলো লাইনচ্যুত হয়েছে বলে জানা গেছে।

দুর্ঘটনার পর যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং অনেকে ট্রেন থেকে লাফিয়ে পড়েন। তীব্র গরমের কারণে আটকে পড়া যাত্রীদের মধ্যে পানির জন্য হাহাকার শুরু হয়। স্থানীয়রা ও প্রশাসন দ্রুত উদ্ধারকাজে নেমে পড়ে।

আরো দেখুন ২০২৪-২৫ মরসুমেই লিগ ডবল অতীত! হ্যটট্রিকের লক্ষ্যে ‘বিস্ফোরক’ বেনালি

রেলওয়ের তৎপরতা

দুর্ঘটনার খবর পাওয়া মাত্রই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। খুরদা রোড ডিভিশনের ডিআরএম, ইস্ট কোস্ট রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছেন। দুর্ঘটনা ত্রাণ ট্রেন এবং চিকিৎসা ত্রাণ ট্রেনও দ্রুত ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। আটকে পড়া যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে রেলওয়ে জানিয়েছে। কটকে হেল্পলাইন নম্বর ৮৯৯১১২৪২৩৮ চালু করা হয়েছে।

দুর্ঘটনার কারণে এই রুটে চলাচলকারী বেশ কয়েকটি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ১২৮২২ (BRAG), ১২৮৭৫ (BBS), এবং ২২৬০৬ (RTN) ট্রেনগুলো এই দুর্ঘটনার জন্য অবিলম্বে রুট পরিবর্তন করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের বক্তব্য

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ট্রেনটি (kamakhya express) কটক স্টেশন ছেড়ে নির্গুন্ডির দিকে যাওয়ার সময় হঠাৎ তীব্র ঝাঁকুনি দিয়ে লাইনচ্যুত হয়। একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “আমরা বিকট শব্দ শুনে ছুটে এসেছি। বগিগুলো ট্র্যাক থেকে ছিটকে পড়ে জঙ্গলে গিয়ে পড়েছে। যাত্রীরা চিৎকার করছিল, অনেকে ভয়ে লাফিয়ে পড়ছিল।” আরেকজন জানান, “গরমের মধ্যে যাত্রীরা জলের জন্য হাহাকার করছিল। আমরা যতটা পারি সাহায্য করার চেষ্টা করেছি।”

তদন্ত ও সম্ভাব্য কারণ

দুর্ঘটনার কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ট্র্যাকের ত্রুটি, সিগন্যালিং সমস্যা বা যান্ত্রিক ত্রুটি এর পিছনে থাকতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তদন্তে ট্র্যাকের রক্ষণাবেক্ষণ এবং ট্রেনের গতিপথ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উপর বিশেষ নজর দেওয়া হবে। গত বছর ওড়িশার বালাসোরে ঘটে যাওয়া ত্রৈ-ট্রেন দুর্ঘটনার পর রেল নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল, এবং এই ঘটনা আবারও সেই উদ্বেগকে সামনে এনেছে।
রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া

ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং দ্রুত উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমের নির্দেশ দিয়েছেন। বিরোধী দলগুলো রেলওয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থার সমালোচনা করেছে। স্থানীয়রা এবং যাত্রীদের পরিবারের সদস্যরা দ্রুত তদন্ত ও দায়ীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে।

ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ

এই দুর্ঘটনা ভারতীয় রেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। ২০২৩ সালের বালাসোর দুর্ঘটনার পর কবচ সিস্টেমের মতো নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করার পরিকল্পনা করা হলেও, এই রুটে তা এখনও কার্যকর হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেলের অবকাঠামো উন্নয়ন ও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণে আরও জোর দেওয়া প্রয়োজন।

এই মুহূর্তে উদ্ধারকাজ চলছে এবং আটকে পড়া যাত্রীদের সাহায্য করা হচ্ছে। তদন্তের ফলাফলের জন্য সবাই অপেক্ষা করছে, যা এই দুর্ঘটনার কারণ ও ভবিষ্যৎ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।