সংসদের বাদল অধিবেশনে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে (Kalyan Banerjee) আলোচনার সময় তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মন্তব্য করে রাজনৈতিক মহলে ঝড় তুলেছেন। পহেলগাঁও হামলার জবাবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অপারেশন সিঁদুর এবং তার পরবর্তী যুদ্ধবিরতি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতার দাবি ঘিরে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন।
কল্যাণের মন্তব্যে মোদীর কূটনৈতিক অবস্থান এবং মার্কিন প্রভাবের প্রশ্ন উঠেছে, যা সংসদে তীব্র বিতর্কের সূচনা করেছে।কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সংসদে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী মোদী, আপনি একবারও কেন আপনার এক্স হ্যান্ডেলে লিখলেন না যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট যা বলেছেন তা ভুল? মার্কিন প্রেসিডেন্টের সামনে দাঁড়ালে আপনার উচ্চতা ৫ ফুটে নেমে আসে, আর ৫৬ ইঞ্চির বুক ৩৬ ইঞ্চিতে নেমে যায়।
আপনি মার্কিন প্রেসিডেন্টকে এত ভয় পান কেন?” তাঁর এই কটাক্ষপূর্ণ মন্তব্য সংসদের ভিতরে এবং বাইরে তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। তিনি আরও দাবি করেন, অপারেশন সিঁদুরের সময় পাকিস্তান যখন হাঁটু গেড়ে বসতে প্রস্তুত ছিল, তখন হঠাৎ যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পিছনে মার্কিন চাপ ছিল, যা ভারতের সার্বভৌমত্বের প্রতি প্রশ্ন তুলেছে।
২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিরীহ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এর জবাবে ৬-৭ মে ভারতীয় সেনাবাহিনী ‘অপারেশন সিঁদুর’ চালিয়ে পাকিস্তান ও পাক-অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরে (পিওজেকে) জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করে। কিন্তু ১০ মে হঠাৎ যুদ্ধবিরতি ঘোষণা এবং ট্রাম্পের দাবি যে তিনি ২৬ বার ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতা করেছেন, তা নিয়ে বিরোধী দলগুলো সরকারের কাছে স্বচ্ছতা দাবি করছে।
কল্যাণের মন্তব্য এই বিতর্ককে আরও উসকে দিয়েছে।তৃণমূলের এই সাংসদ আরও বলেন, “অপারেশন সিঁদুরে আমাদের সেনাবাহিনী অভূতপূর্ব সাফল্য দেখিয়েছে। কিন্তু যখন পাকিস্তান পরাজয়ের মুখে ছিল, তখন কেন যুদ্ধবিরতি? এর পিছনে কি মার্কিন চাপ ছিল? প্রধানমন্ত্রী কেন এই বিষয়ে জাতির কাছে স্পষ্ট জবাব দিচ্ছেন না?”
তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ভারতের সার্বভৌম সিদ্ধান্ত কি বিদেশি শক্তির হাতে প্রভাবিত হচ্ছে?বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী কল্যাণের মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করে বলেন, “তৃণমূলের সাংসদরা দেশের গর্বকে ছোট করছেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী বিশ্ব মঞ্চে ভারতের মর্যাদা বাড়িয়েছেন। তৃণমূলের এই ধরনের মন্তব্য শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য।”
তিনি আরও বলেন, অপারেশন সিঁদুর ছিল ভারতের স্বাধীন সিদ্ধান্ত, এবং যুদ্ধবিরতি দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ফল।সোশাল মিডিয়ায় কল্যাণের মন্তব্য ঘিরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। একজন নেটিজেন লিখেছেন, “কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সঠিক প্রশ্ন তুলেছেন। মার্কিন প্রভাবের কাছে ভারত কেন নতজানু হবে?”
আরেকজন লিখেছেন, “প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এমন ব্যক্তিগত কটাক্ষ লজ্জাজনক। তৃণমূল দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কথা বলছে।” এই বিতর্কের মাঝে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং সংসদে জানিয়েছেন, অপারেশন সিঁদুরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কোনো ক্ষতি হয়নি এবং এটি সম্পূর্ণ সফল ছিল।
প্রাক্তন সাংসদ রাম্যার অনলাইন ট্রোলিং বন্ধে কড়া পদক্ষেপের দাবি কর্ণাটক রাজ্য মহিলা কমিশনের
তিনি ট্রাম্পের মধ্যস্থতার দাবি খারিজ করে বলেছেন, “যুদ্ধবিরতি ভারত ও পাকিস্তানের পারস্পরিক সিদ্ধান্ত ছিল।” তবে, কল্যাণের মন্তব্য এই আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই ঘটনা তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই বিতর্ক তৃণমূলের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।