ইন্ডিয়া জোটের উপ-রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী, সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি বি. সুদর্শন রেড্ডি (Justice Reddy)আম আদমি পার্টির (এএপি) জাতীয় আহ্বায়ক অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁর প্রার্থিতার সমর্থনে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
এই বৈঠকে কংগ্রেস সাংসদ প্রমোদ তিওয়ারি এবং সৈয়দ নাসির হুসেনও উপস্থিত ছিলেন। বিচারপতি রেড্ডি বলেন, “গতকাল অরবিন্দ কেজরিওয়াল আমার প্রার্থিতার সমর্থনে সঞ্জয় সিংকে পাঠিয়েছিলেন। আমি তাঁর এই উদারতার জন্য কৃতজ্ঞ।
আমি তাঁর সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানাতে এসেছি।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, উপ-রাষ্ট্রপতির পদ একটি সাংবিধানিক পদ, যা স্বাধীন, নিরপেক্ষ এবং অরাজনৈতিক হওয়া উচিত।
বিচারপতি রেড্ডি তাঁর বক্তব্যে বলেন, “আমি একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি নই। উপ-রাষ্ট্রপতির পদও কোনো রাজনৈতিক পদ নয়। অনেকেরই এই বিষয়ে ভুল ধারণা রয়েছে। এটি একটি উচ্চ সাংবিধানিক পদ, যার জন্য স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা এবং স্বায়ত্তশাসনের গুণাবলী প্রয়োজন। এই গুণগুলি একজন বিচারপতির মধ্যেও থাকা উচিত।
এই কারণেই আমি কিছু বন্ধুর অনুরোধ গ্রহণ করেছি, যা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের মতো প্রবীণ নেতার সমর্থন পেয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “কেজরিওয়ালের সমর্থন আমাদের সকলকে দেশে কী ঘটছে, কী কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে উৎসাহিত করেছে। আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নই, বরং দেশের উদ্বিগ্ন নাগরিকদের একজন হিসেবে কাজ করতে চাই।”
এই বৈঠকের পটভূমিতে, ইন্ডিয়া জোট ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিচারপতি রেড্ডিকে তাদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে। এই নির্বাচনকে জোট ‘আদর্শগত লড়াই’ হিসেবে অভিহিত করেছে, যেখানে তারা এনডিএ-র প্রার্থী সিপি রাধাকৃষ্ণনের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেন, “বিচারপতি রেড্ডি একজন বিশিষ্ট ও প্রগতিশীল আইনবিদ। তাঁর প্রার্থিতা সংবিধানের মূল্যবোধ রক্ষার জন্য।”
কেজরিওয়ালের এএপি, যদিও ইন্ডিয়া জোটের অংশ নয়, বিচারপতি রেড্ডির প্রার্থিতাকে সমর্থন করেছে। এএপি-র রাজ্যসভা সাংসদ সঞ্জয় সিং বলেন, “আমাদের জাতীয় আহ্বায়ক অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে আমরা প্রাক্তন সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতি বি. সুদর্শন রেড্ডিকে সমর্থন করব।” এই সমর্থনের জন্য তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন ১৯ আগস্ট কেজরিওয়ালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
বিচারপতি রেড্ডি তেলেঙ্গানার সন্তান এবং অবিভক্ত অন্ধ্রপ্রদেশে বেড়ে উঠেছেন। তিনি ১৯৭১ সালে হায়দ্রাবাদে আইনজীবী হিসেবে নথিভুক্ত হন এবং ১৯৯৫ সালে অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি নিযুক্ত হন।
২০০৫ সালে তিনি গৌহাটি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং ২০০৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হন। ২০১১ সালে তিনি অবসর নেন। সম্প্রতি তিনি তেলেঙ্গানায় কংগ্রেস সরকারের জাতি জরিপ বিশ্লেষণের জন্য গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির নেতৃত্ব দিয়েছেন।
রেড্ডি তাঁর বক্তব্যে বলেন, “এই নির্বাচনে দক্ষিণ, উত্তর, পূর্ব বা পশ্চিম কোনো বিষয় নয়। আমি এবং সিপি রাধাকৃষ্ণন উভয়ই ভারতীয় নাগরিক। উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সংসদ সদস্যরা ভোট দেন, এবং আমি তাদের সকলের কাছে সমর্থনের আবেদন জানাচ্ছি।” তিনি সংবিধানের মূল্যবোধ, সামাজিক ন্যায় এবং গণতন্ত্র রক্ষার উপর জোর দিয়েছেন।
কেজরিওয়ালের সমর্থন এই নির্বাচনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তিনি বলেন, “জাস্টিস রেড্ডি তেলুগু গৌরবের প্রতীক। অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানার রাজনৈতিক দলগুলির উচিত তাঁকে সমর্থন করা।” তবে, টিডিপি এবং জনসেনা এনডিএ-র শরিক হিসেবে রাধাকৃষ্ণনকে সমর্থন করছে, যখন ওয়াইএসআরসিপি এবং বিআরএস এখনও তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেনি।
এক্স-এ এই বৈঠক নিয়ে আলোচনা চলছে। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “বিচারপতি রেড্ডির প্রার্থিতা সংবিধান রক্ষার লড়াই।” তবে, এনডিএ-র সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে রাধাকৃষ্ণনের জয়ের সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করা হচ্ছে।
বিচারপতি রেড্ডির এই বৈঠক এবং তাঁর বার্তা সংবিধানের নিরপেক্ষতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের উপর জোর দিয়েছে। তাঁর প্রার্থিতা তেলুগু গৌরবের পাশাপাশি সাংবিধানিক আদর্শের প্রতিনিধিত্ব করে, যা এই নির্বাচনকে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক লড়াই হিসেবে চিহ্নিত করেছে।