সংবাদদাতা, রাঁচি: ঝাড়খণ্ডের পশ্চিম সিংভূম জেলার সারান্ডা জঙ্গল আবারও মাওবাদী হামলার সাক্ষী হল। শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটার সময় মাও-বিরোধী অভিযানের সময় হঠাৎ এক আইইডি বিস্ফোরণ ঘটে। এতে কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ বাহিনীর (সিআরপিএফ) ৬০ নম্বর ব্যাটালিয়নের ইন্সপেক্টর কে কে মিশ্র গুরুতরভাবে আহত হন।
সিআরপিএফ ও রাজ্য পুলিশের যৌথ বাহিনী সেদিন সমঠার পাহাড়ি অঞ্চলে সার্চ অপারেশনে নেমেছিল। সেই সময় মাওবাদীদের পেতে রাখা আইইডি বিস্ফোরণে তীব্র ধাক্কা লাগে। আহত ইন্সপেক্টরকে দ্রুত উদ্ধার করে প্রথমে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে তাঁকে ওড়িশার রাউরকেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বর্তমানে তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল হলেও প্রয়োজনে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাঁচির রাজ হাসপাতালে এয়ারলিফট করে নিয়ে যাওয়া হতে পারে। সূত্রের খবর, শনিবারই তাঁকে রাঁচিতে স্থানান্তর করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এলাকা ঘিরে ফেলল নিরাপত্তা বাহিনী
বিস্ফোরণের পরপরই গোটা অঞ্চল ঘিরে ফেলে নিরাপত্তা বাহিনী। তল্লাশি চালানো হচ্ছে বিস্ফোরকের অন্যান্য সম্ভাব্য ঘাঁটি খুঁজে বের করার জন্য। জ্যেষ্ঠ আধিকারিকরাও ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছেন। পুরো ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে তদন্ত শুরু হয়েছে।
সারান্ডায় বাড়ছে মাওবাদী তৎপরতা
প্রসঙ্গত, সারান্ডা অঞ্চলে মাওবাদী দমনে প্রায়শই অভিযান চালানো হয়। কিন্তু দুর্গম জঙ্গল ও পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় এখানে প্রায়ই নিরাপত্তা বাহিনীকে মাওবাদীদের ফাঁদে পড়তে হয়। বিশেষ করে, মাটির নীচে পুঁতে রাখা আইইডি বোমা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত কয়েক মাসে আইইডি বিস্ফোরণের একাধিক ঘটনা ঘটেছে। ৮ আগস্ট ২০২৫-এ সিআরপিএফের ২০৯ কোবরা ব্যাটালিয়নের দুই জওয়ান— রামপ্রবেশ সিং ও ছোটু কাশ্যপ— আইইডি বিস্ফোরণে আহত হয়েছিলেন। তারও আগে, ২২ মার্চ ২০২৫-এ সিআরপিএফের ১৯৩ ব্যাটালিয়নের সাব-ইন্সপেক্টর সুনীল কুমার মণ্ডল ও হেড কনস্টেবল পার্থ প্রতীম ডেকা বিস্ফোরণে আহত হন। মণ্ডলের পরে হাসপাতালে মৃত্যু হয়। এছাড়াও, ১২ এপ্রিল ২০২৫-এ ঝাড়খণ্ড জাগুয়ার বাহিনীর এক কনস্টেবল আইইডি বিস্ফোরণে প্রাণ হারান, আরেক সিআরপিএফ জওয়ান গুরুতরভাবে আহত হন।
বন্যপ্রাণীর উপরও প্রভাব
এলাকায় আইইডি বিস্ফোরণের প্রভাব শুধু মানুষ নয়, বন্যপ্রাণীর উপরও পড়ছে। সম্প্রতি সারান্ডায় তিনটি হাতি আইইডি বিস্ফোরণে আহত হয়েছে, যার মধ্যে দুটি মারা গেছে এবং একটির অবস্থা গুরুতর। এই ঘটনা শুধু নিরাপত্তার ক্ষেত্রেই নয়, পরিবেশগত ভারসাম্যের উপরেও মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
নিরাপত্তা বাহিনীর বড় চ্যালেঞ্জ
বিশেষজ্ঞদের মতে, সারান্ডার জঙ্গল মাওবাদীদের পুরোনো ঘাঁটি। ঘন বন, দুর্গম ভূখণ্ড এবং গ্রামাঞ্চলের জটিল যোগাযোগ ব্যবস্থা নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। তবুও কেন্দ্রীয় বাহিনী ও রাজ্য পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে, যাতে এলাকাটি ধীরে ধীরে মাওবাদীমুক্ত করা যায়।
সব মিলিয়ে, সারান্ডা অঞ্চলের সাম্প্রতিক বিস্ফোরণ আবারও প্রমাণ করল যে মাওবাদী দমন অভিযানে আইইডি সবচেয়ে বড় অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আহত ইন্সপেক্টরের সুস্থতার খবর কিছুটা স্বস্তি দিলেও এই ঘটনা নিরাপত্তা বাহিনীর সামনে নয়া সতর্কবার্তা হয়ে উঠল।