লালকেল্লা বিস্ফোরণে জইশ যোগ? জম্মু-কাশ্মীরে উদ্ধার চিঠিতে সূত্র

দিল্লির লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের কাছে ভয়াবহ বিস্ফোরণের একদিন পরেই সামনে এল বিস্ময়কর তথ্য। শীর্ষ গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই হামলার ধরন ও বিস্ফোরণের প্যাটার্ন জইশ-ই-মহম্মদ (Jaish-e-Mohammed)-এর এক ঘনিষ্ঠ সংগঠনের কাজের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে।

Advertisements

সিএনএন-নিউজ১৮-এর হাতে এসেছে এক গোপন চিঠি, যা নওগাঁও (জম্মু ও কাশ্মীর)-এ পাল্টা-অভিযান চলাকালীন উদ্ধার করেছে নিরাপত্তাবাহিনী। গোয়েন্দাদের দাবি, এই চিঠিই লালকেল্লা বিস্ফোরণের নেপথ্যে থাকা জঙ্গি নেটওয়ার্কের চরিত্র ও মানসিকতা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র দিচ্ছে।

   

জঙ্গি নেটওয়ার্কের ‘অভ্যন্তরীণ সতর্কবার্তা’

গোয়েন্দাদের মতে, চিঠিটি তারিখ ১৭ অক্টোবর, ২০২৫—একটি নিষিদ্ধ পাকিস্তানভিত্তিক সংগঠনের নামে জারি করা এবং তা সম্ভবত পাকিস্তান বা জম্মু ও কাশ্মীরের কোনও স্থানীয় নেতার উদ্দেশে লেখা। এটি মূলত এক ধরনের অভ্যন্তরীণ নির্দেশিকা বা হুঁশিয়ারি, যা ২০১৬-২০২১ সালের মধ্যে প্রচারিত জইশের পুরনো সার্কুলারের সঙ্গে মিল খুঁজে পাচ্ছে তদন্তকারীরা।

চিঠিতে ভরপুর জিহাদি স্লোগান, ধর্মীয় উক্তি ও হুমকি। সেখানে সংগঠনের ‘বিশ্বাসঘাতক’দের বিরুদ্ধে ‘শাস্তি ও প্রতিশোধের’ কথা বলা হয়েছে। উল্লেখ রয়েছে এক ‘আমিরা-কম্যান্ডার’-এর নামও, যিনি সংগঠনের নির্দেশ কার্যকর করার দায়িত্বে আছেন বলে ধারণা।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, চিঠিটি মূলত এমন এক শাখা বা ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে লেখা, যিনি নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তথ্য আদানপ্রদান করছেন বলে সন্দেহ করা হয়েছিল। সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, “বিশ্বাসঘাতকতা চলতে থাকলে প্রতিশোধ অবশ্যম্ভাবী।”

অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের প্রভাবেই কি লালকেল্লা বিস্ফোরণ?

সেনা গোয়েন্দাদের একাংশের মতে, এই চিঠি প্রমাণ করছে যে জইশ নেটওয়ার্কের মধ্যে বর্তমানে চরম অবিশ্বাস ও চাপা সংঘাত চলছে। সেই অন্তর্দ্বন্দ্বই সম্ভবত সাম্প্রতিক হামলাগুলিকে উস্কে দিয়েছে—যার মধ্যে লালকেল্লা মেট্রো বিস্ফোরণও অন্যতম।

Advertisements

এক শীর্ষ নিরাপত্তা আধিকারিক বলেন, “চিঠির ভাষা ও সময়—দুটোই গুরুত্বপূর্ণ। এটি দেখাচ্ছে যে জম্মু ও কাশ্মীরে লাগাতার পাল্টা-অভিযানের ফলে সংগঠনটি প্রবল চাপে রয়েছে এবং নিজেদের উপস্থিতি জানাতে রাজধানীতে প্রতীকী হামলা চালাচ্ছে।”

মসুদ আজহার ও ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর প্রতিশোধ

তদন্তে উঠে এসেছে আরও একটি দিক। জইশ প্রধান মসুদ আজহার নাকি ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ পরিবারের সদস্যদের মৃত্যুর পর থেকেই “নির্মম প্রতিশোধ”-এর প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। পাকিস্তানের বাহাওয়ালপুরে জইশের সদর দফতরে ভারতীয় বাহিনীর সেই অভিযানে অন্তত দশজন আজহার পরিবারের সদস্য নিহত হন।

তার পর থেকেই সংগঠনের ভেতরে প্রতিশোধস্পৃহা ও উগ্রপন্থার নতুন ঢেউ দেখা গেছে বলে দাবি গোয়েন্দাদের।

দিল্লি বিস্ফোরণ নিয়ে বহু দফার তদন্ত চলছে

দিল্লি পুলিশ ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি বর্তমানে ইউএপিএ ও এক্সপ্লোসিভ অ্যাক্টে মামলা রুজু করে যৌথ তদন্ত চালাচ্ছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ, ফোন ডাম্প ডেটা ও ফরেনসিক রিপোর্ট খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সোমবার সন্ধ্যায় ঐতিহাসিক লালকেল্লার গেট নম্বর ১-এর কাছে একটি Hyundai i20 গাড়িতে বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় অন্তত নয় জনের, আহত বহু। এই বিস্ফোরণ এখন ভারতের রাজধানীতে সন্ত্রাসবিরোধী গোয়েন্দা-তৎপরতার কেন্দ্রবিন্দুতে।