তুরস্ক সফর, টেলিগ্রাম চ্যাট, জইশ হ্যান্ডলার! কীভাবে মৌলবাদে জড়াল ‘ডাক্তারদের মডিউল’?

JeM Doctor Module Turkey Link

লাল কেল্লা বিস্ফোরণ মামলায় তদন্তে নেমে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি চাঞ্চল্যকর তথ্যের সন্ধান পেয়েছে। দিল্লির ঐতিহাসিক লাল কেল্লার কাছে গাড়ি বিস্ফোরণে ১০ জনের মৃত্যু ও ২০ জনেরও বেশি আহত হওয়ার ঘটনায় জড়িত তথাকথিত “ডাক্তার মডিউল”-এর মূল শিকড় পাওয়া গিয়েছে দুটি টেলিগ্রাম গ্রুপে। এই দুটি গোপন অনলাইন গ্রুপের নাম, ‘ফরজানদানে দারুল উলুম (দেওবন্দ)’ এবং ‘উমর বিন খত্তাব’, যা পাকিস্তান-ভিত্তিক জইশ-ই-মহম্মদের এক জঙ্গি অপারেটিভ পরিচালনা করত বলে জানা গিয়েছে।

Advertisements

‘ডিজিটাল দারুল উলুম’ থেকে র‌্যাডিকালাইজেশন

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, এই দুটি গ্রুপই ভারতীয় চিকিৎসক-চক্রের র‌্যাডিকালাইজেশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। এখানেই প্রথম যোগাযোগ স্থাপন হয়েছিল জম্মু-কাশ্মীরের শোপিয়ানের ইমাম ইরফান আহমেদ ওয়াগাহ এবং ডাঃ উমর নবি-র মধ্যে।

   

প্রথমে আলোচনার বিষয় ছিল “কাশ্মীরের স্বাধীনতা” এবং “কাশ্মীরিদের ওপর দমননীতি”। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আলোচনার ধারা বদলে যায়— প্রসঙ্গ আসে “গ্লোবাল জিহাদ” ও “প্রতিশোধের ধর্মীয় তত্ত্ব”-এর।

তদন্তকারীদের মতে, এই সময়ই পাকিস্তান-ভিত্তিক একাধিক হ্যান্ডলার অনলাইনে সংযোগ স্থাপন করে ভারতীয় সদস্যদের সঙ্গে। তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের বিদেশ সফরের সময় সরাসরি সাক্ষাৎও ঘটে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

তুরস্ক সফর: গোষ্ঠী গঠনের বাঁকবদল JeM Doctor Module Turkey Link

সূত্র অনুযায়ী, দলের কয়েকজন সদস্যের তুরস্ক সফর-ই হয়ে ওঠে এই সন্ত্রাস-চক্রের মোড় ঘোরানোর মুহূর্ত। সেই সফরের পরই গোষ্ঠীটির কাঠামো আরও সুসংগঠিত হয় এবং ভারতজুড়ে তাদের নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে পড়ে।

ফিরে এসে ডাঃ মুজাম্মিল গনাই যোগ দেন ফরিদাবাদের আল ফালাহ মেডিক্যাল কলেজে। অপর সদস্য ডাঃ আদিল নিযুক্ত হন সাহারানপুরে। এই সদস্যদের অনেকেই চিকিৎসক পরিচয় ব্যবহার করেই বিভিন্ন রাজ্যে গোপনে নিয়োগ ও লজিস্টিক সহযোগিতার কাজ চালাতে থাকে।

Advertisements

সূত্রের দাবি, এখন সংস্থাগুলি খতিয়ে দেখছে, দেশের কোন কোন রাজ্যে এই চক্রের সদস্যরা সক্রিয় ছিল এবং কারা তাঁদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখত।

‘ডাক্তার মডিউল’-এর নেটওয়ার্ক

তদন্তে উঠে এসেছে, ডাঃ উমর নবি, ডাঃ মুজাম্মিল গনাই ও ডাঃ শাহিন— এই তিনজনই ছিলেন নয়-দশ সদস্যের একটি লজিস্টিক নেটওয়ার্কের মূল অংশ, যার মধ্যে পাঁচ-ছয়জনই পেশায় চিকিৎসক।
তাঁরা নিজেদের পেশাগত পরিচয় ও প্রবেশাধিকারের সুযোগ নিয়ে বিস্ফোরক জোগাড়, সংযোজন ও পরিবহনের কাজ করতেন।

একইসঙ্গে তাঁরা বিভিন্ন মেডিক্যাল সাপ্লাই চেইন এবং বিদেশি উৎসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন— যাতে তদন্ত এড়ানো সহজ হয়।

প্রযুক্তিগত তদন্তে নতুন সূত্র

বিস্ফোরণের দিন বিকেল ৩টা থেকে ৬.৩০ পর্যন্ত— এই সময়ের মধ্যে ডাঃ উমর কার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন, তা জানতেই এখন বিশ্লেষণ চলছে মোবাইল টাওয়ার ডেটার।
লাল কেল্লা-সংলগ্ন এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ, কল রেকর্ড এবং সোশ্যাল মিডিয়া মেটাডেটা— সব কিছুই স্ক্যান করা হচ্ছে।

তদন্তকারীরা বলছেন, এই ডেটা বিশ্লেষণেই হয়তো মিলবে সেই সূত্র, যেখান থেকে জানা যাবে— কোন উৎস থেকে এসেছে তহবিল, কারা সরবরাহ করেছে বিস্ফোরক, এবং কার নির্দেশে ঘটানো হয়েছিল লাল কেল্লা বিস্ফোরণ।