জারাঙ্গের অনশন অব্যাহত! উত্তপ্ত হচ্ছে মারাঠা রাজ্য

মুম্বইয়ের আজাদ ময়দানে মারাঠা সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষণের দাবিতে নেতা মনোজ জারাঙ্গে (Jarange Hunger Strike)পাটিলের নেতৃত্বে অনশন চলছে। অনির্দিষ্টকালের এই অনশন আজ পঞ্চম দিনে পৌঁছেছে। তিনি…

Jarange Hunger Strike

মুম্বইয়ের আজাদ ময়দানে মারাঠা সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষণের দাবিতে নেতা মনোজ জারাঙ্গে (Jarange Hunger Strike)পাটিলের নেতৃত্বে অনশন চলছে। অনির্দিষ্টকালের এই অনশন আজ পঞ্চম দিনে পৌঁছেছে। তিনি ঘোষণা করেছেন যে, মারাঠা সম্প্রদায়ের জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণ এবং তাদের কুনবি জাতি হিসেবে (যারা ওবিসি বিভাগের অধীনে তালিকাভুক্ত) স্বীকৃতি না পাওয়া পর্যন্ত তিনি মুম্বই ত্যাগ করবেন না।

তবে, বোম্বে হাইকোর্ট সোমবার একটি কঠোর নির্দেশ জারি করে জারাঙ্গে ও তাঁর সমর্থকদের মঙ্গলবার দুপুরের মধ্যে আজাদ ময়দান এবং আশপাশের রাস্তা খালি করার নির্দেশ দিয়েছে। আদালত সতর্ক করে বলেছে, এই নির্দেশ না মানলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এই ঘটনা মুম্বইয়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করে তুলেছে।

   

মনোজ জারাঙ্গে পাটিল, যিনি মারাঠা সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন, গত শুক্রবার (২৯ আগস্ট ২০২৫) থেকে আজাদ ময়দানে অনশন শুরু করেন। তিনি দাবি করেছেন, মারাঠাদের কুনবি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সরকারি চাকরি এবং শিক্ষায় ওবিসি কোটার আওতায় ১০ শতাংশ সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি বলেন, “আমি মৃত্যুবরণ করলেও এই মাটি ছাড়ব না। আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা মুম্বই ত্যাগ করব না।” তাঁর এই দৃঢ় অবস্থান এবং হাজার হাজার সমর্থকের উপস্থিতি মুম্বইয়ের দক্ষিণাঞ্চলের যানজট এবং জনজীবনকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে।বোম্বে হাইকোর্ট সোমবার একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে বলেছে, “মুম্বই শহর প্রায় অচল হয়ে পড়েছে এই আন্দোলনের কারণে।

বিক্ষোভকারীরা আদালতের নির্দেশিত শর্তগুলি লঙ্ঘন করেছে।” আদালত জানিয়েছে, গণতন্ত্র এবং বিক্ষোভ একসঙ্গে চললেও, এই ধরনের আন্দোলন শুধুমাত্র নির্দিষ্ট স্থানে এবং পূর্বানুমতি নিয়ে করতে হবে। আজাদ ময়দানে পুলিশের দেওয়া অনুমতি শুধুমাত্র একদিনের জন্য ছিল, যা পরে আরেকদিনের জন্য বাড়ানো হয়।

কিন্তু বিক্ষোভকারীরা রাস্তা অবরোধ, যানবাহন পার্কিং এবং অন্যান্য শর্ত লঙ্ঘন করায় পুলিশ জারাঙ্গে ও তাঁর মূল দলকে নোটিস জারি করে ময়দান খালি করতে বলেছে। হাইকোর্ট মঙ্গলবার দুপুরের মধ্যে রাস্তা পরিষ্কার করার জন্য এটিকে “শেষ সুযোগ” হিসেবে বর্ণনা করেছে।

জারাঙ্গের স্বাস্থ্যের অবনতি এই আন্দোলনের আরেকটি উদ্বেগের বিষয়। সোমবার থেকে তিনি জল পর্যন্ত বন্ধ করেছেন, ফলে তাঁর রক্তচাপ ৯০/৬০ মিমি এইচজি এবং রক্তে শর্করার মাত্রা ৮৫ মিগ্রা/ডিএল-এ নেমে এসেছে।

জে জে হাসপাতালের একটি চিকিৎসক দল তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছে এবং মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডনবিসের কাছে রিপোর্ট জমা দিয়েছে। তবুও জারাঙ্গে তাঁর অনশন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল। তিনি বলেন, “আমি গুলি খেতে প্রস্তুত, জেলে যেতে প্রস্তুত, কিন্তু আমাদের ন্যায্য অধিকার ছাড়া মুম্বই ছাড়ব না।”

Advertisements

এই আন্দোলন মুম্বইয়ের দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ টার্মিনাস (সিএসটিএম), মেরিন ড্রাইভ এবং হুতাত্মা চকে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী জড়ো হয়েছেন, যার ফলে যানজট এবং জনজীবন ব্যাহত হয়েছে।

মুম্বই ট্রাফিক পুলিশ সতর্কতা জারি করে জানিয়েছে, “আজাদ ময়দানে চলমান আন্দোলনের কারণে দক্ষিণ মুম্বইয়ের দিকে যানজটের সম্ভাবনা রয়েছে। বিকল্প পথ ব্যবহার করুন।” বৃহন্মুম্বই ইলেকট্রিক সাপ্লাই অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট (বিইএসটি) সিএসটিএম-গামী বাস পরিষেবা স্থগিত বা পুনর্নির্দেশিত করেছে।

মহারাষ্ট্র সরকার এই ইস্যুতে আইনি পরামর্শ নেওয়ার কথা জানিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডনবিস এবং মন্ত্রী রাধাকৃষ্ণ বিখে পাটিল, যিনি মারাঠা সংরক্ষণ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার উপ-কমিটির প্রধান, বলেছেন, সরকার এমন একটি সমাধান খুঁজছে যা আদালতে টিকবে। তারা হায়দ্রাবাদ গেজেটিয়ারের ভিত্তিতে কুনবি স্ট্যাটাস প্রয়োগের বিষয়ে আইনি মতামত নিচ্ছে।

এই ঘটনা রাজনৈতিক বিতর্কও সৃষ্টি করেছে। এনসিপি (এসপি) নেত্রী সুপ্রিয়া সুলে জারাঙ্গের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পর তাঁর গাড়ি বিক্ষোভকারীরা অবরোধ করে এবং শরদ পাওয়ারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। সুলে বিশেষ অধিবেশন এবং সর্বদলীয় বৈঠকের মাধ্যমে এই ইস্যু সমাধানের দাবি জানিয়েছেন।

মমতার স্বপ্নপূরণ, মহাপ্রসাদ পৌঁছাবে দিঘার ঘরে ঘরে

বোম্বে হাইকোর্টের নির্দেশ এবং জারাঙ্গের অটল অবস্থানের মধ্যে মুম্বইয়ের পরিস্থিতি উত্তপ্ত রয়েছে। বৃহন্মুম্বই পৌরসংস্থা (বিএমসি) আজাদ ময়দানে গভীর পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালিয়েছে, এবং পুলিশ কঠোর নজরদারি রাখছে। এই আন্দোলনের পরবর্তী দিক এবং সরকারের প্রতিক্রিয়া মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।