কঠুয়া-বিলাওয়ারের পাহাড়ি এলাকায় সেনা-জঙ্গি সংঘর্ষ

জম্মু-কাশ্মীরের কঠুয়া ও বিলাওয়ারের পাহাড়ি এলাকায় সুরক্ষাবাহিনী এবং সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকে পড়া জঙ্গিদের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ (Jammu-Kashmir Encounter) চলছে। উজ্জ নদীর তীরে সুফাইনের আম্বে নাল…

Jammu-Kashmir Encounter

জম্মু-কাশ্মীরের কঠুয়া ও বিলাওয়ারের পাহাড়ি এলাকায় সুরক্ষাবাহিনী এবং সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকে পড়া জঙ্গিদের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ (Jammu-Kashmir Encounter) চলছে। উজ্জ নদীর তীরে সুফাইনের আম্বে নাল নামক জায়গায় জঙ্গিদের ঘিরে ফেলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল আটটা থেকে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষে এখনও পর্যন্ত দুই জঙ্গি নিহত হয়েছে। তবে, এই গোলাগুলিতে একজন ডিএসপি-সহ পাঁচজন সুরক্ষাকর্মী আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে একজন প্যারা কমান্ডোকে এয়ারলিফ্ট করে সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

   

জঙ্গিদের দ্বিতীয়বার ঘেরাও

গত রবিবার হিরানগরের সান্যাল গ্রামের কাছে সুরক্ষাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের পর ঘেরাও থেকে পালিয়ে যাওয়া জঙ্গিরা আবারও সুরক্ষাবাহিনীর জালে আটকা পড়েছে। এবার তাদের উজ্জ নদীর তীরে আম্বে নালে ঘিরে ফেলা হয়েছে, যেটি আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত। সুরক্ষাবাহিনী এই অঞ্চলের পাহাড়ি এলাকায় তাদের পালিয়ে যাওয়ার সমস্ত পথ বন্ধ করে দিয়ে অভিযান শুরু করেছে।

Advertisements

তীব্র গোলাগুলি, আহত জওয়ানরা

সূত্রের খবর অনুযায়ী, বুধবার রাত দুটো থেকে এসএসপি কঠুয়ার নেতৃত্বে এসওজি (স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ) এবং সিআরপিএফ-এর ২০০-এর বেশি জওয়ান এলাকায় জঙ্গিদের খুঁজতে অভিযান শুরু করেন। ভোরের প্রথম আলোয় জঙ্গিদের উপস্থিতি টের পেয়ে সুরক্ষাবাহিনী ঘেরাও শুরু করে। সকাল আটটায় জঙ্গিদের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ শুরু হয় এবং তীব্র গোলাগুলি চলে। প্রাথমিক গোলাগুলিতে কয়েকজন জওয়ান আহত হন। তবে, চলমান গোলাগুলির মধ্যে আহতদের হাসপাতালে পৌঁছাতে সময় লাগে। সকাল ১১:১৫ নাগাদ অখনুরের বাসিন্দা এসপিও ভারত চলোত্রাকে জিএমসি জম্মুতে ভর্তি করা হয়। বিকেল পাঁচটায় হিরানগরের ভগবানা চকের বাসিন্দা এসপিও হ্যাপি শর্মাকে জিএমসি কঠুয়ায় আনা হয়। গ্রেনেড হামলায় আহত হ্যাপি শর্মাকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর জিএমসি জম্মুতে পাঠানো হয়।

বিকেল পাঁচটার কাছাকাছি জঙ্গি ও সুরক্ষাবাহিনীর মধ্যে ফের ভারী গোলাগুলি শুরু হয়। এই সময় একজন প্যারা কমান্ডো আহত হন এবং তাকে এয়ারলিফ্ট করে সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এছাড়া, অভিযানের মধ্যে ডিএসপি বর্ডার ধীরজ কটোচও গুলিবিদ্ধ হন। তাকে সন্ধ্যার সময় মুখোমুখি সংঘর্ষের স্থান থেকে বের করে জিএমসি কঠুয়ায় চিকিৎসার জন্য আনা হয়।

চিকিৎসা ব্যবস্থা ও অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত

কঠুয়ার সিএমও জানিয়েছেন, দুই আহত জওয়ানকে জিএমসি কঠুয়ায় চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। একজন প্যারা কমান্ডোর হাতে আঘাত লেগেছে। আরও কয়েকজনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে, তবে তাদের এখনও সংঘর্ষের এলাকা থেকে বের করে আনা সম্ভব হয়নি। ঘটনাস্থলে চারটি অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে যাতে আহতদের দ্রুত চিকিৎসা দেওয়া যায়।

আইজি, ডিআইজি-র নেতৃত্বে অভিযান

সুফাইনের জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা জঙ্গিদের নিশ্চিহ্ন করতে প্যারা কমান্ডো মোতায়েন করা হয়েছে। আইজি ভীম সেন টুটি, ডিআইজি শিব কুমার এবং সিআরপিএফ-এর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়ে অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সুরক্ষাবাহিনীর পরিকল্পনা ছিল অন্ধকার নামার আগেই জঙ্গিদের শেষ করে ফেলা। গতবারও অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে জঙ্গিরা সান্যাল থেকে পালিয়ে গিয়েছিল। গত চার দিন ধরে সুরক্ষাবাহিনী জঙ্গলের প্রতিটি কোণে তল্লাশি চালাচ্ছিল।

জঙ্গিদের নিপাতের জন্য বড় অভিযান

জঙ্গিদের নিশ্চিহ্ন করতে সুরক্ষাবাহিনী একদিকে কঠুয়ার জুথানা থেকে ঘেরাও করেছে, অন্যদিকে বিলাওয়ারের ধরালতা ও সুন্দরীকোট থেকেও তাদের চারপাশে জাল বিছিয়েছে। সুরক্ষাবাহিনী জানে, আম্বে নাল থেকে পালিয়ে গেলে জঙ্গিদের কাছে পাহাড়ের দিকে পালানোর একাধিক পথ খুলে যাবে। তাই সীমিত ঘেরাওয়ের মধ্যেই তাদের শেষ করার জন্য এই অভিযান চালানো হচ্ছে।

অভিযানের পটভূমি

গত রবিবার সান্যালে শুরু হওয়া সংঘর্ষের পর থেকে সুরক্ষাবাহিনী জঙ্গিদের খুঁজে বের করতে কঠোর পরিশ্রম করছে। এই জঙ্গিরা পাকিস্তান সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঢুকে পড়েছিল বলে মনে করা হচ্ছে। তাদের হাতে আধুনিক অস্ত্র এবং গ্রেনেড রয়েছে, যা এই অভিযানকে আরও চ্যালেঞ্জিং করে তুলেছে। সুফাইনের জঙ্গল ও পাহাড়ি এলাকা জঙ্গিদের জন্য লুকানোর সুবিধাজনক স্থান হলেও, সুরক্ষাবাহিনী তাদের পালানোর সমস্ত পথ বন্ধ করে দিয়েছে।

স্থানীয়দের ভূমিকা ও প্রভাব

স্থানীয় বাসিন্দারা এই অভিযানে সুরক্ষাবাহিনীকে সহযোগিতা করছেন। গতবারের মতো জঙ্গিরা যাতে পালাতে না পারে, সেজন্য গ্রামবাসীরা সতর্ক রয়েছে। তবে, এই সংঘর্ষের কারণে স্থানীয়দের জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটছে। স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখা হয়েছে, এবং সাধারণ মানুষকে নিরাপদ স্থানে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

কঠুয়া ও বিলাওয়ারের পাহাড়ি এলাকায় চলমান এই সংঘর্ষ সুরক্ষাবাহিনীর দৃঢ়তা ও সাহসিকতার প্রমাণ। দুই জঙ্গি নিহত হলেও, অভিযান এখনও শেষ হয়নি। আহত জওয়ানদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করা হচ্ছে। এই ঘটনা দেশের নিরাপত্তার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ লড়াই, এবং সুরক্ষাবাহিনীর এই প্রচেষ্টা জাতির গর্ব। অন্ধকার নামার আগে বাকি জঙ্গিদের নিশ্চিহ্ন করাই এখন সুরক্ষাবাহিনীর লক্ষ্য।