জম্মুতে রেকর্ড বৃষ্টিতে ক্লাউডবার্স্ট, বৈষ্ণো দেবী যাত্রায় ৪১ মৃত

জম্মু ও কাশ্মীরের জম্মু (Jammu Cloudburst Tragedy) প্রদেশে মঙ্গলবার থেকে বুধবার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাতের জেরে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রবল বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট…

জম্মু ও কাশ্মীরের জম্মু (Jammu Cloudburst Tragedy) প্রদেশে মঙ্গলবার থেকে বুধবার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাতের জেরে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রবল বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট ক্লাউডবার্স্ট ও পাহাড়ি ধসের কারণে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৪১ জন মানুষ। মৃতদের মধ্যে বেশিরভাগই বৈষ্ণো দেবীর দর্শনার্থী বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। একের পর এক দুঃসংবাদে ভেঙে পড়েছে জম্মু প্রদেশ, এখনও নিখোঁজ রয়েছেন বহু মানুষ।

প্রশাসনিক সূত্রে খবর, জম্মুর রিয়াসি জেলার আধকুনওয়ারি এলাকায় মঙ্গলবার দুপুরে বৈষ্ণো দেবী মন্দিরগামী তীর্থযাত্রীদের উপর আচমকা নেমে আসে বিপর্যয়। প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে ঘটে যাওয়া এই ক্লাউডবার্স্ট মুহূর্তের মধ্যে তছনছ করে দেয় এলাকাটি। পাহাড়ি স্রোত ও কাদা-জলমিশ্রিত ধসের কারণে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৩৪ জন তীর্থযাত্রীর। অনেকেই গুরুতর আহত হয়ে জম্মুর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রশাসনিক কর্তারা।

   

এছাড়া, জম্মুর ডোডা জেলাতেও মঙ্গলবার সকালেই প্রবল বৃষ্টি ও হঠাৎ সৃষ্ট পাহাড়ি বন্যায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত চারজন। পাহাড়ি রাস্তা ও সেতু ভেঙে যাওয়ায় ডোডা জেলার একাধিক গ্রাম বর্তমানে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। উদ্ধারকারী দল এবং এনডিআরএফ (NDRF)-এর কর্মীরা নিরলস প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারের জন্য।

জম্মু-কাশ্মীর আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জম্মু প্রদেশে নথিভুক্ত হয়েছে সর্বাধিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তন এবং ক্রমবর্ধমান অপ্রতুল পাহাড়ি অবকাঠামো এই ধরনের বিপর্যয়ের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। অতিবৃষ্টির কারণে রিয়াসি থেকে কাটরা পর্যন্ত রাস্তা সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়েছে। ফলে বৈষ্ণো দেবী যাত্রা সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে। হাজার হাজার দর্শনার্থীকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

জম্মু ও কাশ্মীরের উপ-রাজ্যপাল মনোজ সিনহা গভীর শোক প্রকাশ করে মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে এবং দ্রুত পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করতে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

Advertisements

স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, মঙ্গলবার দুপুরে হঠাৎ কালো মেঘে ঢেকে যায় পাহাড়ি আকাশ। কিছুক্ষণের মধ্যেই মুষলধারে বৃষ্টি নামতে শুরু করে। পাহাড়ি খাল থেকে আচমকা জলধারা নেমে এসে গ্রাম ও যাত্রাপথ ভাসিয়ে দেয়। অনেকে সময়মতো আশ্রয় নিতে না পারায় এই মর্মান্তিক প্রাণহানি ঘটে। প্রতিদিন হাজার হাজার ভক্ত বৈষ্ণো দেবীর দর্শনের উদ্দেশ্যে কাটরায় পৌঁছান, তাই এই বিপর্যয় আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জম্মু প্রদেশে পর্যটন ও ধর্মীয় যাত্রাপথে পর্যাপ্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা না থাকায় এবং পাহাড়ি অঞ্চলে নির্বিচারে নির্মাণকাজ চলার ফলে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের প্রভাব বাড়ছে। ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা এড়াতে আবহাওয়া সতর্কতা ব্যবস্থা জোরদার করা ও যাত্রাপথে নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন তারা।

বর্তমানে জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন ও কেন্দ্র সরকারের একাধিক উদ্ধারকারী দল কাজ করছে। আহতদের চিকিৎসা ও অবিলম্বে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে দুর্গম এলাকায়। তবে এখনও বেশ কয়েকজন তীর্থযাত্রী নিখোঁজ রয়েছেন। উদ্ধারকাজ চলার পাশাপাশি জোরকদমে চলছে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের কাজ।

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News