মুনিরের হুমকির জবাবে কড়া প্রতিক্রিয়া দিলেন জয়সয়াল

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের আমেরিকা সফরের সময় ভারতের (Jaiswal) বিরুদ্ধে পারমাণবিক হুমকি দেওয়ার মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয় (MEA)। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র…

Jaiswal reacts on munir

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের আমেরিকা সফরের সময় ভারতের (Jaiswal) বিরুদ্ধে পারমাণবিক হুমকি দেওয়ার মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয় (MEA)। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এক বিবৃতিতে বলেছেন, “পাকিস্তানের পারমাণবিক হুমকি তাদের স্বাভাবিক কৌশল।

এই ধরনের মন্তব্যে পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্বের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা প্রকাশ পায় এবং এটি তাদের জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে সংযোগের বিষয়ে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগকে আরও জোরদার করে।” ভারত স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, এই ধরনের পারমাণবিক হুমকির কাছে তারা মাথা নত করবে না এবং জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার জন্য সব রকম পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

   

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির গত ১০ আগস্ট আমেরিকার ফ্লোরিডার টাম্পায় একটি কালো টাই পরিহিত নৈশভোজে অংশ নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “আমরা একটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। যদি আমরা মনে করি আমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন, তবে আমরা অর্ধেক বিশ্বকে আমাদের সঙ্গে ধ্বংস করে দেব।”

এছাড়া, তিনি সিন্ধু জল চুক্তি নিয়ে ভারতের বাঁধ নির্মাণের সমালোচনা করে বলেন, “ভারত যদি বাঁধ তৈরি করে, আমরা ১০টি মিসাইল দিয়ে তা ধ্বংস করে দেব।” এই মন্তব্য আমেরিকার মাটিতে দেওয়া প্রথম পারমাণবিক হুমকি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি করেছে।

ভারতের বিদেশমন্ত্রণালয় তাদের বিবৃতিতে বলেছে, “এই ধরনের মন্তব্য পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্বের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা এবং জঙ্গি সংগঠনগুলির সঙ্গে তাদের গভীর সম্পর্কের প্রমাণ। এটি পাকিস্তানের পারমাণবিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উপর বিশ্বব্যাপী সন্দেহকে আরও জোরদার করে।”

মন্ত্রণালয় এও বলেছে, “এই মন্তব্যগুলি একটি বন্ধুপ্রতিম তৃতীয় দেশ আমেরিকার মাটিতে করা হয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।” ভারত জোর দিয়ে বলেছে, তারা “পারমাণবিক ব্ল্যাকমেল” এর কাছে নতি স্বীকার করবে না এবং জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার জন্য সব রকম প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

মুনিরের এই হুমকি এমন এক সময়ে এসেছে, যখন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু জল চুক্তি নিয়ে উত্তেজনা চলছে। গত এপ্রিলে পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর ভারত এই চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যা পাকিস্তানের জন্য জল সরবরাহের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

মুনির দাবি করেছেন, এই সিদ্ধান্ত পাকিস্তানের ২৫০ মিলিয়ন মানুষের জন্য খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তিনি আরও বলেন, “সিন্ধু নদী ভারতের পারিবারিক সম্পত্তি নয়।” তবে, ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয় এই অভিযোগকে “অযৌক্তিক” বলে উড়িয়ে দিয়েছে।

Advertisements

মুনিরের মন্তব্যের জবাবে ভারতীয় রাজনৈতিক নেতারা তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। শিবসেনা (ইউবিটি) সাংসদ প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী বলেছেন, “এটি একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র এবং ব্যর্থ মার্শালের কাপুরুষোচিত হুমকি। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) উচিত পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া, কারণ এগুলি একজন উন্মাদ ব্যক্তির হাতে রয়েছে।”

বিজেপি নেতা গৌরব বল্লভ বলেন, “এটি নতুন ভারত, যেখানে গুলির জবাব গোলায় দেওয়া হয়। পাকিস্তানের সেনাপ্রধান সন্ত্রাসবাদের মুখ হয়ে উঠেছেন। আইএমএফ-এর উচিত তাদের আর্থিক সহায়তা বন্ধ করা।” কংগ্রেস নেতা ইমরান মাসুদ বলেন, “যদি ভারত পাক অধিকৃত কাশ্মীরে তেরঙা উড়িয়ে দিত, তাহলে মুনিরের এমন মন্তব্য করার সাহস হতো না।”

মুনিরের এই মন্তব্য আমেরিকার মাটিতে দেওয়া হয়েছে, যা ভারত-আমেরিকা সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন তুলেছে। ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয় বলেছে, “একটি বন্ধুপ্রতিম দেশের মাটিতে এই ধরনের মন্তব্য দুঃখজনক।”

বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই ঘটনা দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতার উপর নতুন চাপ সৃষ্টি করতে পারে। প্রাক্তন ভারতীয় কূটনীতিক রাজীব ডোগরা বলেন, “মুনিরের ‘পারিবারিক সম্পত্তি’ শব্দটি ঠিকই ব্যবহার করেছেন। সিন্ধু নদী ভারতের সম্পত্তি।”

চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য বড় সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকারের

পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের এই পারমাণবিক হুমকি ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয়ের কঠোর বিবৃতি এবং রাজনৈতিক নেতাদের প্রতিক্রিয়া স্পষ্ট করে যে, ভারত এই ধরনের হুমকির কাছে নতি স্বীকার করবে না। এই ঘটনা পাকিস্তানের পারমাণবিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।