নয়াদিল্লি ১৮ নভেম্বর: দিল্লির লালকেল্লার কাছে হওয়া ভয়াবহ বিস্ফোরণের সাত দিন পর আন্তর্জাতিক (jaishankar)মঞ্চে সোজাসাপ্টা বার্তা দিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস. জয়শঙ্কর। মঙ্গলবার রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে অনুষ্ঠিত সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও)–এর হেডস অফ গভর্নমেন্ট সামিটে তাঁর বক্তব্য ঘিরে ফের সরগরম বিশ্ব কূটনীতি।
হামলার ক্ষত এখনও শুকোয়নি, শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখনও টানটান, আর ঠিক সেই সময়েই জয়শঙ্কর জানিয়ে দিলেন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারত কোনও চাপ, প্রলোভন বা আন্তর্জাতিক লবির কাছে মাথা নত করবে না।
WBSSC নতুন পরীক্ষায় বৈষম্যের অভিযোগ, সল্টলেকে উত্তাল বিক্ষোভ
মস্কোর ঠান্ডা বাতাসে যেন তাঁর কণ্ঠের দৃঢ়তা আরও জোরালো শোনাচ্ছিল। তিনি বলেন, “বিশ্বকে সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে শূন্য সহনশীলতা দেখাতেই হবে। সন্ত্রাসবাদকে কোনওভাবেই ন্যায্যতা দেওয়া যায় না, চোখ বন্ধ করে থাকা যায় না, আর কারও হয়ে সাফাইও গাওয়া চলে না।” তাঁর বক্তব্যের প্রতিটি শব্দে ছিল স্পষ্ট বার্তা যে রাষ্ট্র বা গোষ্ঠী সন্ত্রাসবাদকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রশ্রয় দেয়, তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও কঠোর, আরও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
দিল্লির বিস্ফোরণে ১৫ জন নিরপরাধ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। আহত বহু। ঘটনাটি গোটা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। হামলাকারীরা সীমান্তের কোন পাশ থেকে প্রভাবিত হয়েছিল, কারা তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিল এসব প্রশ্ন এখন তদন্তের কেন্দ্রে। এই পটভূমিতেই জয়শঙ্করের বক্তব্য আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। মস্কোর বৈঠকে তিনি সরাসরি কোনও দেশের নাম না নিলেও তাঁর বার্তা ছিল যথেষ্ট স্পষ্ট ভারত জানে, কারা সন্ত্রাসকে ‘কৌশলগত সম্পদ’ হিসেবে ব্যবহার করে।
তিনি বলেন, “ভারত যে তার নাগরিকদের রক্ষা করার অধিকার রাখে, তা আমরা আগেও দেখিয়েছি, ভবিষ্যতেও দেখাব।” তাঁর ইঙ্গিত স্পষ্ট—পুলওয়ামা বা উরি-পরবর্তী ভারতের অপ্রতিরোধ্য প্রতিক্রিয়ার কথা বিশ্বের সব দেশই জানে। আর এবারও ভারত প্রয়োজনে সেই পথেই হাঁটতে পারে।
এসসিও–এর মঞ্চে উপস্থিত রাশিয়া, চিন, পাকিস্তানসহ মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের মুখে তখন ছিল নীরবতা। বিশেষত পাকিস্তান প্রতিনিধিদলের চেহারায় সেই অস্বস্তি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল—কারণ দোষ চাপিয়ে দেওয়ার বা ‘দ্বিমুখী সন্ত্রাসবাদ’ তত্ত্ব প্রচারের সুযোগ এবার ছিল না। দিল্লি বিস্ফোরণের নয়া নথি এবং আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট ইতিমধ্যেই ভারতের বক্তব্যকে শক্তিশালী করেছে।
জয়শঙ্করের ভাষণ শুধু কূটনৈতিক বক্তব্য নয়, বরং দেশের নাগরিকদের প্রতি আস্থার বার্তাও ছিল। দিল্লির হাসপাতালের সামনে এখনও অপেক্ষা করছে আহতদের পরিবারের সদস্যরা, শহরের রাস্তায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে, তদন্তের কাজ চলছে বহুস্তরে। এই আবহে মস্কো থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর স্পষ্ট ঘোষণা সাধারণ ভারতীয়দের মনে নতুন ভরসা জাগিয়েছে—ভারত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কোনও অবস্থাতেই পিছপা হবে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিজনেস–অ্যাজ–ইউজ্যুয়াল কূটনীতির বাইরে গিয়ে জয়শঙ্করের বক্তব্য বিশ্বমঞ্চে সন্ত্রাসবাদ বিষয়ক বিতর্ককে নতুন মাত্রা দিয়েছে। যেখানে অনেক দেশ রাজনৈতিক প্রয়োজনে সন্ত্রাসীদের নিয়ে নরম বা দ্ব্যর্থক অবস্থান নেয়, সেখানে ভারত যেভাবে পরিষ্কার অবস্থান নিচ্ছে, তা আগামী দিনে আন্তর্জাতিক নীতিনির্ধারণেও প্রভাব ফেলতে পারে।
সারাবিশ্ব যখন গাজা–ইউক্রেন–মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত নিয়ে ব্যস্ত, তখন দিল্লি বিস্ফোরণ আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা চিত্রকে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করেছে। আর ভারতের বক্তব্য—সন্ত্রাস কারও পক্ষে নয়, মানবতার বিরুদ্ধে—এটি এখন আবারও আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে।
