তদন্তে নয়া সূত্র! জইশ চক্রের সন্দেহভাজন মস্তিষ্ক সম্ভবত আফগানিস্তান পালিয়েছে

jaish-terror-conspiracy-mastermind-left-for-afghanistan-investigation-international-travel-leads

দিল্লির লালকেল্লায় সন্ত্রাসী হামলার এক গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা (Jaish terror conspiracy) সূত্র উঠে আসেছ৷ ভারতীয় সংবাদমাধ্যেমের রিপোর্ট অনুযায়ী, জইশ-ই-মহম্মদ–সংক্রান্ত একটি বড় ষড়যন্ত্রের সন্দেহভাজন প্রধান পরিকল্পনাকারী—ড. মুজাফফর রাথার—দুই মাস আগে ভারত ছেড়ে আফগানিস্তানের উদ্দেশে রওনা হয়। তথ্যানুসারে, সে দুবাই হয়ে আফগানিস্তানে প্রবেশ করেন। এই গোটা ঘটনার সত্যতা এখনও তদন্তাধীন হলেও, রিপোর্টটি তদন্ত সংস্থাগুলির নজরে এসেছে বলে সূত্র দাবি করছে।

Advertisements

NDTV–র এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে মুজাফফর রাথার হল আদিল নামে এক জইশ অপারেটিভের ভাই। গত কয়েক মাস ধরে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি জইশের একটি বৃহত্তর নেটওয়ার্ক সক্রিয় হওয়ার অভিযোগ তদন্ত করছিল। যদিও এই নেটওয়ার্ক সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, রিপোর্ট অনুযায়ী মুজাফফর রাথারের বিদেশযাত্রা ও অবস্থান গোয়েন্দাদের সন্দেহ বাড়িয়েছে।

   

প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়েছে যে এই নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত সন্দেহভাজন দুই ব্যক্তি—মুজামিল এবং উমর—গত দেড় বছরে সংযুক্ত আরব আমিরাত, নেপাল, সৌদি আরব এবং তুরস্কে ভ্রমণ করে। তদন্তকারী সংস্থাগুলি এখন এই সফরগুলিকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বিশ্লেষণ করছে। কারণ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস নেটওয়ার্কে বহু সময় বিভিন্ন দেশ হয়ে রুট তৈরি করা হয় এবং আর্থিক লেনদেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও লজিস্টিক সাপোর্ট এই বহু-দেশভ্রমণের মধ্যে লুকিয়ে থাকতে পারে।

সরকারি তদন্ত সংস্থাগুলির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তবে নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক সফর রেকর্ড, ইমিগ্রেশন ডেটা, ট্রাভেল প্যাটার্ন এবং যোগাযোগের ডিজিটাল ট্রেস খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে আফগানিস্তান–পাকিস্তান সীমান্তবর্তী অঞ্চলে জইশের কার্যকলাপ বহুদিন ধরেই আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও ইন্টেলিজেন্স মহলে উদ্বেগের বিষয়। ওই অঞ্চল থেকে নির্দেশমূলক বার্তা, প্রশিক্ষণ, কিংবা যোগাযোগ আদান–প্রদান হয় থাকতে পারে—এমন সম্ভাবনাও অস্বীকার করা যাচ্ছে না।

লালকেল্লায় সন্ত্রাসী হামলার তদন্ত এখনও চলছে। কিছু প্রাথমিক তদন্ত বিবরণে বলা হয়েছে যে সন্দেহভাজন নেটওয়ার্কের কিছু সদস্য দেশের বাইরে থেকে অর্থসাহায্য বা নির্দেশ পাচ্ছিল কি না, সেটিও খুঁজে দেখা হচ্ছে। বর্তমানে যেভাবে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস সংগঠনগুলি প্রযুক্তি ব্যবহার করে যোগাযোগ করে, তাতে বিভিন্ন দেশের সফর, রুট পরিবর্তন, এবং একাধিক ট্রানজিট পয়েন্ট ব্যবহার করা খুবই সাধারণ।

যদিও NDTV–র রিপোর্টে অনেক তথ্য “as per agencies” বা “as per intel sources” হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, তবুও তদন্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে থাকায় সব দিকই বিবেচনা করা হচ্ছে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা, সাইবার সেল, এবং কেন্দ্রীয় তদন্ত দলগুলি মিলিতভাবে ঘটনাটির সমস্ত সম্ভাব্য বিদেশি সংযোগ পরীক্ষা করছে।

Advertisements

তদন্তকারীদের মতে, যদি সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিক সফরগুলি সন্ত্রাস পরিকল্পনার সঙ্গে সংযুক্ত প্রমাণিত হয়, তাহলে তদন্ত অনেকটাই নতুন মোড় নেবে। সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সংস্থা, বিদেশি গোয়েন্দা ইউনিট এবং সংশ্লিষ্ট দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় বাড়ানো জরুরি হবে।

নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের একটি অংশ বলছে, লালকেল্লার মতো ঐতিহাসিক ও উচ্চ নিরাপত্তাসম্পন্ন স্থানে হামলা ঘটানো কোনও বিচ্ছিন্ন ‘লোন উলফ’ ঘটনা নয়। এর পেছনে একটি পরিকল্পিত নেটওয়ার্ক থাকতেই পারে। তবে সমস্ত অভিযোগই এখনও যাচাই চলছে—তাই তদন্তের স্বার্থে কর্মকর্তারা সাবধানে শব্দ ব্যবহার করছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ঘটনাগুলি ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আরও নজরদারি ও সতর্কতার প্রয়োজনীয়তা দেখিয়ে দেয়। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস নেটওয়ার্কের স্বরূপ বদলেছে, এবং তাতে ভারতকেও সমানভাবে গোপন তথ্য সংগ্রহ, সাইবার নজরদারি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের উপর জোর দিতে হবে।

সব মিলিয়ে, NDTV–র রিপোর্ট তদন্তে নতুন আলো ফেলেছে। লালকেল্লা হামলার তদন্ত, সন্দেহভাজনদের বিদেশ সফর, এবং মুজাফফর রাথারের আফগানিস্তানে যাত্রার মধ্যে কোনো স্পষ্ট সংযোগ আছে কি না—তা এখন নিরাপত্তা সংস্থাগুলির অনুসন্ধানের প্রধান বিষয়। তদন্ত যত এগোবে, আরও তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।