জয়সলমের: রাজস্থানের মরুপ্রান্তে মঙ্গলবার বিকেলে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। জয়সলমের থেকে যোধপুরগামী একটি বেসরকারি বাসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ২০ জন যাত্রী জীবন্ত পুড়ে মারা গিয়েছেন, গুরুতর জখম আরও ১৬ জন। বিকেল তিনটার কিছু আগে জয়সলমের-যোধপুর হাইওয়েতে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটে।
সূত্রের খবর, ‘কে কে ট্রাভেলস’-এর ওই বাসটি মাত্র পাঁচ দিন আগেই এই রুটে চালু হয়েছিল। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, এটি একটি সাধারণ এসি বাস হলেও কিছুদিন আগে সেটিকে স্লিপার কোচে রূপান্তর করা হয়। ওই পরিবর্তিত গঠনই পরিণত হয় মৃত্যুফাঁদে।
আগুন লাগার মুহূর্তে পালানোর পথ বন্ধ
দুর্ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাসের পেছনের অংশ থেকে ধোঁয়া বেরোতে শুরু করে। চালক সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি থামালেও মুহূর্তের মধ্যে পুরো বাস জ্বলে ওঠে। যাত্রীদের মধ্যে চিৎকার, আতঙ্ক আর হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়।
অভ্যন্তরীণ কাঠামো ফাইবারের তৈরি হওয়ায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। জানালাগুলি ছিল শক্ত কাঁচের, যা ভাঙা প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে। আরও বিপত্তি ঘটে যখন বৈদ্যুতিক সংযোগে শর্ট সার্কিট হয়ে সামনের দরজার লক আটকে যায়—ফলে পালানোর একমাত্র পথও বন্ধ হয়ে যায়।
কেউ কেউ মরিয়া হয়ে কাঁচ ভেঙে বেরোবার চেষ্টা করেন, কিন্তু অধিকাংশই ভেতরে আটকে পড়েন। বাসটি তখন যাত্রীতে পরিপূর্ণ, এমনকি করিডরেও অনেকে বসেছিলেন।
সেনাবাহিনীর তৎপরতা ও স্থানীয় সাহায্য Jaisalmer Jodhpur Bus Fire Tragedy
ঘটনাস্থল থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে একটি সেনা ঘাঁটি থাকায় দ্রুত সাহায্য পৌঁছে যায়। সেনার একটি দল এসে জেসিবি মেশিন দিয়ে বাসের দরজা ভেঙে উদ্ধারকাজ শুরু করে।
পাশের একটি মদের দোকানের ঠিকাদারও সেনার সঙ্গে হাত মিলিয়ে সাহায্যে এগিয়ে আসেন। তিনি আর্মি এলাকার ভেতর থেকে একটি জলবাহী ট্যাঙ্কার এনে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন।
স্থানীয়দের ক্ষোভ, দমকল পৌঁছতে সময় লেগেছে অন্তত ৪৫ মিনিট। ততক্ষণে আগুনে বাস প্রায় সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই।
আহতদের অবস্থা গুরুতর, প্রধানমন্ত্রীর শোকপ্রকাশ
প্রথমে আহতদের জয়সলমেরের জওহর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে ১৬ জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় জোধপুরে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। টুইট বার্তায় তিনি নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে প্রত্যেকের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে অনুদান ঘোষণা করেছেন। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ও উপরাষ্ট্রপতি সি.পি. রাধাকৃষ্ণনও ঘটনাটিতে শোকপ্রকাশ করেছেন।
মুখ্যমন্ত্রীর পরিদর্শন ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ
রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী ভজনলাল শর্মা দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন। তিনি জেলা প্রশাসনকে আহতদের চিকিৎসার সমস্ত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
সরকারের পক্ষ থেকে হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে এবং জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু হয়েছে।