প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর ইতিহাস খোঁজার প্রয়োজন নেই বলে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশ (Jairam Ramesh)। তিনি বলেন, “নেহরু প্রায় ৬০ বছর আগে মারা গেছেন। নেহরু নিজেই ইতিহাস হয়ে গেছেন, আমরা ইতিহাস খুঁজতে চাই না।” তাঁর এই মন্তব্যে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক।
এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জয়রাম রমেশ বলেন, “বর্তমান সমস্যার মুখে ইতিহাস খোঁজার কোনও মানে নেই। দেশের বর্তমান চ্যালেঞ্জ নিয়ে সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী চীনের প্রসঙ্গে নীরব। ২০২০ সালের ১৯ জুন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং চীনকে ‘ক্লিন চিট’ দিয়েছিলেন। আজ চীন ও পাকিস্তানের সম্পর্ক কোথায় দাঁড়িয়ে আছে, সেটা সবাই জানে। অথচ প্রধানমন্ত্রী সেই বিষয়ে কিছু বলেন না। তিনি শুধু ‘অপারেশন সিন্ধূর’-এর কৃতিত্ব নিচ্ছেন, রাজনৈতিক মঞ্চে ফিল্মি সংলাপ দিচ্ছেন। চলছে সংলাপবাজি, কিন্তু বাস্তব সমস্যার কোনও উত্তর নেই।”
চীন ও পাকিস্তানের বর্তমান ভূরাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, সরকার শুধুমাত্র রাজনীতি করছে, কিন্তু জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে কোনও সদর্থক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।
জয়রাম রমেশের কথায়, “আমরা চেয়েছিলাম সর্বদলীয় বৈঠক হোক এবং প্রধানমন্ত্রী নিজে সেই বৈঠকে সভাপতিত্ব করুন। কিন্তু যা হয়েছে তা ছিল নিছক আনুষ্ঠানিকতা। প্রতিরক্ষামন্ত্রী বৈঠকে সভাপতিত্ব করেছেন, কোনও আলোচনার পরিবেশ ছিল না। আমরা যেসব প্রশ্ন তুলেছিলাম, তা ছিল অত্যন্ত গঠনমূলক ও সংবেদনশীল দৃষ্টিভঙ্গিতে। কিন্তু কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।”
তিনি আরও বলেন, “১০ মে, মল্লিকার্জুন খাড়গে ও রাহুল গান্ধী প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লেখেন বিশেষ সংসদ অধিবেশন ডাকতে। কেন সেই অধিবেশন জরুরি? ১৯৯৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি সর্বসম্মতভাবে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল—পিওকে এবং সন্ত্রাসবাদ নিয়ে। ৩০ বছরে অনেক কিছু বদলে গেছে। এখন দুই দেশই পারমাণবিক শক্তিধর, এবং তার থেকেও বড় কথা—পাকিস্তানে চীনের প্রভাব বেড়েছে। এটা আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তাই আজকের দিনে সেই প্রস্তাব পুনরায় সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হওয়া উচিত।”
কংগ্রেস নেতার মতে, সরকার যদি সত্যিই জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকত, তবে এই বিষয়গুলিতে সর্বদলীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে এগিয়ে আসত। কিন্তু তার পরিবর্তে সরকার চুপচাপ রয়েছে। “বিশ্ববাসীর কাছে একটি শক্ত বার্তা পৌঁছে দেওয়া জরুরি—যে ভারতের সব রাজনৈতিক দল দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার প্রশ্নে একত্রিত। কিন্তু সরকার সেই দায়িত্ব নিচ্ছে না,” মন্তব্য রমেশের।
তার এই বক্তব্যে বিজেপি শিবির এখনও পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না দিলেও, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষয়টি নিয়ে উত্তাল আলোচনা চলছে। কংগ্রেস নেতার নেহরু প্রসঙ্গে মন্তব্যকে অনেকে কৌশলগত বিচ্যুতি বলছেন, আবার কেউ কেউ বলছেন—এটি বর্তমান বাস্তবতার প্রতি মনোযোগ ফেরানোর প্রচেষ্টা।
নেহরুকে কেন্দ্র করে রাজনীতির উত্তাপ নতুন কিছু নয়। তবে জয়রাম রমেশের মন্তব্যের মাধ্যমে একটি বড় রাজনৈতিক বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা—কংগ্রেস এখন অতীত নয়, বর্তমান ও ভবিষ্যতের রাজনীতি নিয়ে বেশি মনোযোগী।