জয়পুর: জয়পুরের স্বনামধন্য সওয়াই মানসিংহ (এসএমএস) হাসপাতালে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড৷ মৃত্যু হল অন্তত সাতজন রোগীর। রবিবার গভীর রাতে হাসপাতালের ট্রমা ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) আচমকাই আগুন লাগে। ঘটনায় আরও কয়েকজন রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। সোমবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী ভজনলাল শর্মা উচ্চপর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন৷ তাঁর নির্দেশ মেনে ছয় সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
কীভাবে ঘটল আগুন লাগার ঘটনা
এসএমএস হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারের ইনচার্জ ডা. অনুরাগ ধাকড় জানান, দ্বিতীয় তলার ট্রমা আইসিইউতেই প্রথমে আগুন লাগে। প্রাথমিক অনুমান, শর্ট সার্কিট থেকেই এই দুর্ঘটনা। মুহূর্তের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং ঘন ধোঁয়ায় আইসিইউ ভর্তি হয়ে যায়। ওই সময় ২৪ জন রোগী ভর্তি ছিলেন—যার মধ্যে ১১ জন ট্রমা আইসিইউতে এবং ১৩ জন সংলগ্ন সেমি-আইসিইউতে।
ধাকড় বলেন, “আমাদের অনেকেই কোমায় ছিলেন, নড়াচড়া করতে পারছিলেন না। তবুও নার্সিং অফিসার ও ওয়ার্ড স্টাফদের সহায়তায় আমরা যতজন সম্ভব রোগীকে স্থানান্তর করতে পেরেছি। তবে ছয়জন রোগীকে সিপিআর ও রিসাসিটেশনের সব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বাঁচানো যায়নি,” বলেন ডা.।
মৃতদের মধ্যে দুই মহিলা ও চারজন পুরুষ বলে জানা গিয়েছে। অধিকাংশের মৃত্যু হয়েছে ধোঁয়ায় ফুসফুস পুড়ে যাওয়া ও দগ্ধ-জনিত জটিলতায়।
তদন্ত শুরু, সরকারের আশ্বাস Jaipur SMS Hospital Fire
দমকল ও হাসপাতালের কর্মীরা যৌথভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং আইসিইউ থেকে সকল রোগীকে সরিয়ে আনেন। তবে অনেকেই ইতিমধ্যেই বিষাক্ত গ্যাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। জয়পুরের পুলিশ কমিশনার বিজু জর্জ জোসেফ জানিয়েছেন, ফরেনসিক টিমের (এফএসএল) তদন্তেই আগুনের প্রকৃত কারণ জানা যাবে। “প্রাথমিকভাবে শর্ট সার্কিটই সন্দেহ, তবে চূড়ান্ত রিপোর্ট এফএসএল তদন্তের পরেই বলা সম্ভব,” বলেন তিনি।
আহতদের পরিবারের ক্ষোভ
অগ্নিকাণ্ডে মৃতদের পরিবারের সদস্যরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন। এক শোকাহত আত্মীয় বলেন, “আইসিইউতে আগুন লাগলেও একটাও অগ্নিনির্বাপক ছিল না। জল ছিল না, অক্সিজেন সিলিন্ডারও কাজ করছিল না। কোনও ব্যবস্থাই ছিল না। আমরা শুধু অসহায়ভাবে দেখেছি, ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছিল ঘর, আমার মা বাঁচতে পারলেন না।”
রাজ্যের নির্দেশ: সব সরকারি হাসপাতালে অগ্নি-নিরাপত্তা পর্যালোচনা
ঘটনার পর রাজ্য সরকার জানিয়েছে, এই অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও সম্ভাব্য গাফিলতি খতিয়ে দেখতে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি রাজ্যের সব সরকারি হাসপাতালের অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুনর্বিবেচনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসএমএস হাসপাতালে আপাতত পাঁচজন গুরুতর আহত রোগীর চিকিৎসা চলছে।
এদিকে এই মর্মান্তিক ঘটনায় রাজস্থানের স্বাস্থ্য অবকাঠামো ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রশ্ন আবারও উঠে এসেছে নতুন করে।