কল্পনার পর নির্বাচিত দ্বিতীয় মহিলা ভারতীয় নভোশ্চর জাহ্নবী

অন্ধ্রপ্রদেশের পশ্চিম গোদাবরী জেলার ছোট্ট শহর পালাকোল্লুর জাহ্নবী ডাঙ্গেটি (Jahnavi) ভারতের তরুণ প্রজন্মের প্রতিভা ও দৃঢ়সংকল্পের প্রতীক হয়ে উঠেছেন। তিনি টাইটান্স স্পেস অ্যাস্ট্রোনট ক্লাস অফ…

Jahnavi new female astronaut from India

অন্ধ্রপ্রদেশের পশ্চিম গোদাবরী জেলার ছোট্ট শহর পালাকোল্লুর জাহ্নবী ডাঙ্গেটি (Jahnavi) ভারতের তরুণ প্রজন্মের প্রতিভা ও দৃঢ়সংকল্পের প্রতীক হয়ে উঠেছেন। তিনি টাইটান্স স্পেস অ্যাস্ট্রোনট ক্লাস অফ ২০২৫-এর জন্য অ্যাস্ট্রোনট ক্যান্ডিডেট (এএসক্যান) হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন, যা তাকে ২০২৯ সালে মহাকাশে যাওয়ার পথ প্রশস্ত করেছে।

নাসার আন্তর্জাতিক বায়ু ও মহাকাশ প্রোগ্রামের সঙ্গে যুক্ত এই অভিযানে জাহ্নবীর (Jahnavi) নির্বাচন ভারতীয় তরুণদের জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। তাঁর এই সাফল্যে গোটা দেশ গর্বিত, এবং সামাজিক মাধ্যমে তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। জাহ্নবী ডাঙ্গেটির এই অসাধারণ যাত্রা শুরু হয়েছিল পালাকোল্লুর এক সাধারণ পরিবার থেকে।

   

যেখানে বেশিরভাগ তরুণের স্বপ্ন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, সেখানে জাহ্নবী (Jahnavi) চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন, “আমি তোমার কাছে আসছি!” তাঁর এই দৃঢ় সংকল্প ও অক্লান্ত পরিশ্রম তাঁকে টাইটান্স স্পেসের অ্যাস্ট্রোনট প্রোগ্রামে স্থান করে দিয়েছে। এই প্রোগ্রামে তিনি নাসার অভিজ্ঞ মহাকাশচারীদের নেতৃত্বে প্রশিক্ষণ নেবেন এবং ২০২৯ সালে মহাকাশে যাত্রা করবেন।

জাহ্নবী (Jahnavi) ইতিমধ্যেই অ্যানালগ মিশনে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, যা মহাকাশ মিশনের জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। তাঁর এই নির্বাচন ভারতের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত (স্টেম) ক্ষেত্রে তরুণীদের জন্য একটি উৎসাহের বার্তা। অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নাইডু তাঁর অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, “জাহ্নবীর এই সাফল্য তেলুগু গৌরবের প্রতীক। তিনি তরুণ ভারতীয়দের জন্য একটি নতুন পথ দেখিয়েছেন।”

সামাজিক মাধ্যমে জাহ্নবীর (Jahnavi) এই অর্জন নিয়ে উচ্ছ্বাসের ঢেউ উঠেছে। এক্স-এ একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “জাহ্নবী ডাঙ্গেটি ভারতের পরবর্তী মহাকাশ আইকন হতে চলেছেন। তাঁর এই যাত্রা আমাদের সকলের জন্য গর্বের বিষয়।” আরেকটি পোস্টে বলা হয়, “পালাকোল্লুর এই মেয়ে মঙ্গল গ্রহের পথে! তিনি তরুণীদের জন্য একটি আলোকবর্তিকা।” এই পোস্টগুলো জাহ্নবীর প্রতি দেশবাসীর ভালোবাসা ও সমর্থনের প্রতিফলন।

জাহ্নবীর এই সাফল্য ভারতের মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ভারত ইতিমধ্যেই চন্দ্রযান ও মঙ্গলযানের মতো মিশনের মাধ্যমে বিশ্বে নিজের স্থান পাকা করেছে। এবার জাহ্নবীর মতো তরুণ প্রতিভারা ভারতের মহাকাশ স্বপ্নকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর নির্বাচন নাসার সঙ্গে ভারতের ক্রমবর্ধমান সহযোগিতারও একটি প্রমাণ।

পালাকোল্লুর স্থানীয় বাসিন্দারা জাহ্নবীর (Jahnavi) এই অর্জনে গর্বিত। তাঁর স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক রামকৃষ্ণ রাও বলেন, “জাহ্নবী ছোটবেলা থেকেই খুব মেধাবী ও কৌতূহলী ছিল। সে সবসময় বড় স্বপ্ন দেখত। আজ সে আমাদের শহরের গর্ব।” তাঁর পরিবারও তাঁর এই সাফল্যে আনন্দিত। জাহ্নবীর বাবা বলেন, “আমার মেয়ে প্রমাণ করেছে যে কঠোর পরিশ্রম ও স্বপ্ন দিয়ে সবকিছু সম্ভব। আমরা তার জন্য গর্বিত।”

Advertisements

জাহ্নবীর (Jahnavi) এই যাত্রা তরুণীদের জন্য বিশেষভাবে অনুপ্রেরণাদায়ী। ভারতে স্টেম ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ এখনও তুলনামূলকভাবে কম। জাহ্নবীর মতো তরুণীরা এই ধারণা ভেঙে দিচ্ছেন যে মহাকাশ গবেষণা কেবল পুরুষদের জন্য। তিনি বলেন, “আমি চাই আমার গল্প অন্য মেয়েদের স্বপ্ন দেখতে এবং তা পূরণ করতে উৎসাহিত করে। মহাকাশে কোনো সীমানা নেই, আমাদের স্বপ্নেও নয়।”

টাইটান্স স্পেস অ্যাস্ট্রোনট ক্লাস অফ ২০২৫-এর জন্য জাহ্নবীর নির্বাচন তাঁর মহাকাশ যাত্রার প্রথম ধাপ। আগামী চার বছর তিনি কঠিন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেকে প্রস্তুত করবেন। এর মধ্যে রয়েছে মহাকাশে পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো, শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি, এবং উন্নত প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ। তাঁর এই প্রশিক্ষণ নাসার অভিজ্ঞ মহাকাশচারীদের তত্ত্বাবধানে হবে।

রাশিয়ার GRAD সিস্টেমের যুগ শেষ, ৬টি পিনাকা রেজিমেন্টের নির্মাণ কাজ শেষ হবে ২০২৬-এর মধ্যে 

জাহ্নবীর (Jahnavi) এই সাফল্য ভারতের তরুণ প্রজন্মকে বড় স্বপ্ন দেখতে উৎসাহিত করেছে। অন্ধ্রপ্রদেশের মন্ত্রী নারা লোকেশ তাঁর অভিনন্দন বার্তায় বলেন, “জাহ্নবীর যাত্রা পশ্চিম গোদাবরী থেকে নাসার আন্তর্জাতিক প্রোগ্রাম পর্যন্ত, ভারতীয় তরুণদের প্রতিভা ও দৃঢ়তার প্রমাণ। তাঁর আগামী মিশনের জন্য শুভকামনা।”

রাজনৈতিক নেতা থেকে সাধারণ মানুষ, সকলেই জাহ্নবীর এই অর্জনকে উদযাপন করছেন। তাঁর এই সাফল্য ভারতের মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা। আগামী ২ৰ৯ সালে জাহ্নবী যখন মহাকাশে পাড়ি দেবেন, তখন তিনি কেবল পালাকোল্লুর নয়, গোটা ভারতের গর্ব হয়ে উঠবেন। তাঁর এই যাত্রা তরুণ প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখতে এবং তা বাস্তবায়িত করতে প্রেরণা জোগাবে।