নয়াদিল্লি: মাত্র ১২ দিন আগেই জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে (JNU) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় বলেছিলেন, “২০২৭ সালের অগাস্টে অবসর নেব, যদি না ঈশ্বর অন্য কিছু চান।” সেই ‘ঈশ্বরের ইচ্ছেই’ কি সত্যি রূপ নিল? সোমবার, সংসদের বাদল অধিবেশনের প্রথম দিনের পর, হঠাৎই নিজের পদ থেকে ইস্তফা দিলেন তিনি (Jagdeep Dhankhar’s shock exit)। কারণ হিসেবে দেখালেন, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা। কিন্তু রাজনৈতিক মহলে উঠেছে একটাই প্রশ্ন,“এতটাই কি সোজা?”
জল্পনার কেন্দ্রে ধনখড়ের পদত্যাগ
৭৪ বছর বয়সি ধনখড়ের এই পদত্যাগ নিয়ে এখনও পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি ভবন ছাড়া সরকার বা উপরাষ্ট্রপতির দফতর থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি আসেনি। বিষয়টি নিয়ে প্রথমে চুপ ছিল বিজেপি নেতৃত্বও। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইস্তফার ১৫ ঘণ্টা পর টুইট করে ধনখড়কে ‘কিষাণপুত্র’ বলে সম্মান জানিয়ে লেখেন, “দেশসেবার বহু সুযোগ পেয়েছেন তিনি। তাঁর সুস্বাস্থ্যের কামনা করি।”
কিন্তু বিরোধীদের মতে, স্বাস্থ্য সমস্যাকে সম্মান জানানো উচিত হলেও, এই ইস্তফার নেপথ্যে যে অন্য কিছুর ইঙ্গিত রয়েছে, তা স্পষ্ট। বিরোধী দলনেতা ও কংগ্রেসের যোগাযোগ শাখার প্রধান জয়রাম রমেশ বলেন, “এটা নজিরবিহীন। এর পিছনে গভীর কিছু কারণ নিশ্চয়ই আছে।”
‘নাটকের শুরু’ সংসদের প্রথম দিনেই?
সোমবার সংসদে বাদল অধিবেশনের প্রথম দিনে, ধনখড় বিরোধীদের দেওয়া একটি নোটিস গ্রহণ করেন, যেখানে বিচারপতি যশবন্ত বর্মার অপসারণ চেয়ে ৬৮ জন সাংসদের স্বাক্ষর ছিল। ওই বিচারপতির বাড়ি থেকে বড় অঙ্কের নগদ উদ্ধারের প্রেক্ষিতে এই উদ্যোগ। সেই সময় লোকসভায় সরকার পক্ষের গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব চলছিল। এই প্রসঙ্গে বিরোধীদের দাবি, ধনখড়ের এমন তড়িঘড়ি পদক্ষেপে সরকার খুশি হয়নি। আরও জল্পনা ছড়ায়, যখন রাজ্যসভার বিজনেস অ্যাডভাইসরি কমিটির বৈঠকে বিজেপি সভাপতি তথা রাজ্যসভার দলনেতা জেপি নাড্ডা ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু অনুপস্থিত থাকেন।
এই ঘটনার ব্যাখ্যায় নাড্ডা বলেন, তাঁরা আগেই ধনখড়কে জানিয়েছিলেন যে জরুরি কাজ রয়েছে। কিন্তু কংগ্রেসের মতে, এটা এক প্রকার ‘অসম্মান’ ছিল।
বিচারবিভাগ নিয়ে বিতর্কিত অবস্থান
উপরাষ্ট্রপতি হওয়ার পর থেকেই ধনখড়ের একাধিক মন্তব্য শোরগোল ফেলে। বিশেষ করে বিচারবিভাগ নিয়ে তাঁর তীব্র সমালোচনা, বিশেষ করে সুপ্রিম কোর্টের এনজিএসি (ন্যাশনাল জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কমিশন) আইন খারিজের বিরোধিতা। অনেকের মতে, ধনখড়ের এই স্পষ্টবাদিতা সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলছিল, কারণ তা সরকারপন্থী অবস্থান বলেই ধরা হচ্ছিল।
বিহার নির্বাচনের সঙ্গে কোনও যোগ?
রাজনৈতিক অন্দরমহলে ঘুরছে আরও একটি তত্ত্ব, ধনখড়ের ইস্তফা আসলে আসন্ন বিহার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিজেপির কৌশল। শোনা যাচ্ছে, উপরাষ্ট্রপতির পদে জেডিইউ নেতা তথা মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে বসানোর ভাবনা রয়েছে বিজেপির। এমনকি, বিজেপি বিধায়ক হরিভূষণ ঠাকুরও প্রকাশ্যে বলেন, “নীতীশ কুমারকে যদি উপরাষ্ট্রপতি করা হয়, তা হলে বিহারের জন্য ভাল হবে।”
বর্তমানে রাজ্যসভার উপসভারপতি হরিবংশ নারায়ণ সিং, যিনি নিজেও বিহারের, তিনিই এখন অধিবেশনের কার্যত ভার নিয়েছেন। এতে বিজেপির পক্ষে রাজনৈতিক বার্তাও তৈরি হতে পারে।