নয়াদিল্লি: দেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদ থেকে আচমকা ইস্তফা দিলেন জগদীপ ধনখড় (Jagdeep Dhankhar)। সোমবার রাতে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে চিঠি লিখে তিনি পদত্যাগ করেন। স্বাস্থ্যজনিত কারণে এই পদক্ষেপ বলে জানানো হলেও, শাসক দল থেকে বিরোধী সব মহলেই শুরু হয়েছে জল্পনা—এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে অন্য কোনও কারণ রয়েছে কি না। মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি মুর্মু তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন।
২০২২ সালের আগস্টে দেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। তিনি ২০২3 সালের এপ্রিল মাসে নতুন নির্মিত Vice President Enclave-এ উঠে যান, যা পার্লামেন্ট হাউস কমপ্লেক্সের কাছেই Church Road-এ অবস্থিত। প্রায় ১৫ মাস পর সেই বিলাসবহুল সরকারি বাসভবনও তিনি ছেড়ে দিচ্ছেন।
সোমবার রাতে পদত্যাগ করার পর থেকেই ধনখড়বাবু নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে ফেলতে শুরু করেছেন বলে সূত্রের খবর। সূত্রের আরও দাবি, সোমবার তাঁর সঙ্গে দেখা করার জন্য একাধিক বিরোধী নেতার পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হলেও, তিনি কারও সঙ্গে দেখা করেননি। যাঁরা দেখা করতে চেয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন শিবসেনা (ইউবিটি)-এর সঞ্জয় রাউত এবং এনসিপি (এসপি)-এর শরদ পাওয়ার।
তাঁর ইস্তফার কারণ হিসেবে সরকারি ভাবে স্বাস্থ্যগত সমস্যার কথা বলা হলেও রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে গুঞ্জন। কারণ, তাঁর মেয়াদ ছিল ২০২৭ সাল পর্যন্ত। ফলে অনেকেই মনে করছেন, ধনখড়ের এই পদক্ষেপের পিছনে শুধুই স্বাস্থ্যগত কারণ নয়, থাকতে পারে রাজনৈতিক কোনো অদৃশ্য চাপ বা অন্তর্দ্বন্দ্ব।
ধনখড়ের পদত্যাগ ও এনক্লেভ ত্যাগের পর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে—তিনি এখন কোথায় থাকবেন? এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় আবাসন ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ধনখড় সরকারি বাংলো পাওয়ার অধিকারী। তাঁকে টাইপ VIII ক্যাটাগরির বাংলো বরাদ্দ করা হবে। উল্লেখযোগ্য, এই ধরনের বাংলো সাধারণত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, রাজ্যপাল, বা জাতীয় স্তরের রাজনৈতিক নেতাদের দেওয়া হয়।
Central Vista প্রকল্পের অধীনে তৈরি হয়েছে এই নতুন Vice President Enclave, যা দেশের ভাইস প্রেসিডেন্টের দপ্তর ও আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ধনখড় ছিলেন এর প্রথম বাসিন্দা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই পদত্যাগ শাসক বিজেপি-র মধ্যেই নতুন চাপ তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে সংসদের চলতি বর্ষা অধিবেশন ও আসন্ন গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা যেমন অপারেশন সিঁদুর নিয়ে বিতর্কের প্রেক্ষাপটে এই সিদ্ধান্ত যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
ধনখড়ের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন নানা প্রশ্ন। তিনি কি সম্পূর্ণ অবসর নেবেন? না কি অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক বা রাজনৈতিক ভূমিকায় দেখা যাবে তাঁকে? সময়ই বলবে।