নয়াদিল্লি: ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় হঠাৎ পদত্যাগ করায় রাজনৈতিক মহলে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পদত্যাগের কারণ হিসেবে ‘স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা’র কথা উল্লেখ করা হলেও, বিরোধী পক্ষ এই যুক্তিকে মানতে নারাজ (Jagdeep Dhankhar Resignation)। কারণ, ধনখড় দিনভর একাধিক সাংসদের সঙ্গে দেখা করেছেন, ফোনে কথা বলেছেন, এমনকি সংসদের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাতেও অংশ নিয়েছেন, কোথাও তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতির কোনও ইঙ্গিত ছিল না।
বিরোধী নেতাদের বিস্ময়
জ্যেষ্ঠ কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ জানিয়েছেন, তিনি পদত্যাগের খবর জানার ঠিক দু’ঘণ্টা আগে ধনখড়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। সে সময় ধনখড় সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ছিলেন এবং পরের দিনের আলোচনার পরিকল্পনাও করেন। বিকেল ৫টা নাগাদ জয়রাম রমেশ, প্রমোদ তিওয়ারি ও অখিলেশ প্রসাদ সিং মিলে ধনখড়ের সঙ্গে দেখা করেন। কথোপকথন ছিল একেবারে রুটিন মাফিক।
কংগ্রেস সাংসদ অখিলেশ প্রসাদ সিং, যিনি সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ ধনখড়ের অফিস থেকে শেষ ব্যক্তি হিসেবে বের হন, তিনি বলেন, “উনি যথেষ্ট স্বাভাবিক ছিলেন। নতুন একটি কমিটিতে তাঁর অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আলোচনা করছিলেন এবং তা নিয়ে যথেষ্ট আগ্রহও প্রকাশ করছিলেন। পদত্যাগের কোনও ইঙ্গিতই ছিল না।”
পরিস্থিতির নাটকীয় মোড়: অভিশংসন প্রসঙ্গ
জানা যাচ্ছে, দিনভর একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাও ঘটেছে সংসদে। রাজ্যসভায় বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বিরুদ্ধে ৬৩ জন বিরোধী সাংসদের পক্ষ থেকে অভিশংসনের প্রস্তাব জমা পড়ে। ধনখড় নিজেই ওই প্রস্তাবের সাংবিধানিক প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করেন রাজ্যসভায়, আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়ালকেও জানান যে লোকসভায় একই প্রস্তাব জমা পড়েছে। তিনি বলেন, একটি যৌথ কমিটি গঠন করা হবে বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য। তবে কোথাও তিনি নিজের স্বাস্থ্যের কথা বলেননি বা পদত্যাগের কোনও ইঙ্গিত দেননি।
বিজেপি শিবিরে গোপন তৎপরতা?
ধনখড়ের পদত্যাগের ঠিক পরে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের দফতরের সামনে চরম ব্যস্ততা দেখা যায়। বিজেপি সাংসদদের আনাগোনা শুরু হয়। অনেকে দাবি করছেন, সেখানে কিছু ‘ব্ল্যাঙ্ক ডকুমেন্ট’ স্বাক্ষর করানো হয়েছে, যদিও সরকারিভাবে কিছুই জানানো হয়নি। পুরো বিষয়টি আরও রহস্যময় হয়ে উঠছে।
বিরোধীদের কৌশল বদল?
বিরোধীরা আগে ধরে নিয়েছিল, বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব রাজ্যসভা থেকেই শুরু হবে। কারণ উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে ধনখড়ের প্রোটোকল অবস্থান ছিল লোকসভার স্পিকারের উপরে, ফলে প্রস্তাবটি প্রথম রাজ্যসভায় উঠলে তা বিরোধীদের জন্য কৌশলগতভাবে সুবিধাজনক হতো। এখন তাঁর পদত্যাগে পুরো পরিকল্পনায় ভাঁজ পড়েছে।
অতীতেও বিতর্কে জড়ানো ধনখড়
উল্লেখ্য, উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে ধনখড়ের মেয়াদ বিতর্কহীন ছিল না। তাঁর বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছিল বিরোধীরা। এমনকি একবার রাজ্যসভায় তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবও আনা হয়েছিল, যদিও তা ডেপুটি চেয়ারম্যান পরে খারিজ করে দেন।
পরবর্তী পদক্ষেপে নজর
ধনখড়ের পদত্যাগে বিরোধী জোট INDIA-তে এখন অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় জোটের ফ্লোর লিডারদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। বৈঠকে ধনখড়ের পদত্যাগের পরে ভবিষ্যৎ রণকৌশল কী হবে, তা স্থির করা হবে। এই বৈঠক থেকেই বিরোধীরা তাদের পরবর্তী রাজনৈতিক চাল ঠিক করবে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।