দেশজুড়ে রথযাত্রা! জগন্নাথধামে জনজোয়ার, ঐতিহ্যের পথে নতুন অধ্যায় দিঘায়

কলকাতা: প্রতি বছর আষাঢ় মাসের পবিত্র দিনে পালিত হয় জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উৎসব৷ এটা শুধুমাত্র ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক মহাকাব্যিক উদযাপন। ভারতের…

Jagannath Rath Yatra

কলকাতা: প্রতি বছর আষাঢ় মাসের পবিত্র দিনে পালিত হয় জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উৎসব৷ এটা শুধুমাত্র ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক মহাকাব্যিক উদযাপন। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে এই উৎসব মহাসমারোহে পালিত হয়৷ তবে এই উৎসবের মূল কেন্দ্র ওড়িশার পুরী৷ এখানে রয়েছে জগন্নাথদেবের প্রাচীনতম মন্দির৷ এই বছর পুরীর পাশাপাশি নজর কেড়েছে পশ্চিমবঙ্গের দিঘা৷ এখানে নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দিরে প্রথমবার রথযাত্রা পালন করা হবে৷  গোটা কর্যক্রমের তত্ত্বাবধানে থাকবেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ 

পুরীধামে রথযাত্রা

ওডিশার পুরী শহরে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বিশাল ও বিখ্যাত জগন্নাথ মন্দিরের বাড়ি। প্রতি বছর আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে পালিত হয় ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রা উৎসব৷ মন্দির ছেড়ে পথে বেরিয়ে আসেন ভগবান জগন্নাথ, বলরাম ও দেবী সুভদ্রা৷ বিশালাকার তিনটি রঙিন রথে চড়ে মাসির বাড়ি যান তাঁরা। প্রতিটি রথের উচ্চতা প্রায় ৪০ ফুটের কাছাকাছি ৷ কাঠের কারুকাজ অতুলনীয়। এই রথযাত্রায় লক্ষ লক্ষ ভক্ত অংশগ্রহণ করেন, যারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে রথ টানার অভিজ্ঞতা লাভ করেন। নিরাপত্তার কথা ভেবে বেশ কড়াকড়ি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়৷ ড্রোন ও সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে চলে নজরদারি৷ স্বাস্থ্য সেবা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পরিচালিত হয়। উৎসব শুধু ধর্মীয় ভাবেই নয়, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ঐক্যের নিদর্শন হিসেবেও প্রশংসিত।

   

জনে উঠেছে সৈকত শহর দিঘা Jagannath Rath Yatra

অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গের সমুদ্র শহর দিঘায় এবার প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে জগন্নাথ রথযাত্রা, যা স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস সৃষ্টি করেছে। এই মহোৎসবের পেছনে সরাসরি আছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি উৎসবের প্রস্তুতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা তত্ত্বাবধান করছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে এসে মন্দির কর্তৃপক্ষকে আম, পেয়ারা ও নতুন পোশাকের বিশেষ উপহার তুলে দিয়েছেন, যা আনা হয়েছে তাঁর কালীঘাটের বাড়ির বাগান থেকে৷ দিঘার জগন্নাথ মন্দির চত্বর ফুলে ফুলে সাজানো হয়েছে, গাঁদা ও বাহারি ফুলের মালা ও রঙিন আলো মন্দিরকে এক আভিজাত্যপূর্ণ রূপ দিয়েছে।

তত্ত্বাবধানে মুখ্যমন্ত্রী

রথ প্রস্তুতির যাবতীয় কাজ মনোযোগ সহকারে পরিদর্শন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিশেষভাবে নজরদারি করা হয়েছে রথের দৈর্ঘ্য, রাস্তাঘাট ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর। উৎসবের দিন সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে পুজোপাঠ শুরু হবে, দুপুর ২টা থেকে ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত বিশেষ আরতি অনুষ্ঠিত হবে, এরপরই রথ টানার মহোৎসব শুরু হবে। নিমকাঠের বিগ্রহ রথে উঠানো হবে, আর মূল পাথরের বিগ্রহ মন্দিরে সংরক্ষিত থাকবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার রাখতে দিঘায় মোতায়েন রয়েছে ৩ হাজারেরও বেশি পুলিশ, রয়েছেন সাদা পোশাকের পুলিশ ও মহিলা বাহিনী, রয়েছে ড্রোন ও সিসিটিভি ক্যামেরা। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাও অত্যন্ত শক্তিশালী রাখা হয়েছে, যেখানে রয়েছে একাধিক স্বাস্থ্য শিবির, মোবাইল হেলথ ইউনিট এবং লাইফ সাপোর্ট অ্যাম্বুল্যান্স। জরুরি অবস্থায় ব্যবহারের জন্য হেলিপ্যাডেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ও একটি হেলিকপ্টার।

Advertisements

অন্যান্য শহরেও রথযাত্রা

পুরী ও দিঘার পাশাপাশি দেশের অন্যান্য শহরেও উৎসব পালিত হচ্ছে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসাহের সঙ্গে। কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে আজ রথযাত্রা হবে৷ উৎসব পালিত হবে রাজ্যের অন্যান্য প্রান্তেও৷ ইসকন ও মাহেশের রথ বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য৷ মাহেশের রথ ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীনতম এবং বাংলার প্রাচীনতম রথযাত্রা উৎসব। প্রতিটি স্থানীয় রথযাত্রায় স্বকীয় সাংস্কৃতিক পরিচয় এবং ধর্মীয় রীতি-নীতি দৃঢ়ভাবে ফুটে ওঠে।

আজকের এই রথযাত্রা আমাদের প্রাচীন ধর্ম ও সংস্কৃতির এক অসাধারণ মেলবন্ধন। এটি শুধু ভগবান জগন্নাথ, বলরাম ও দেবী সুভদ্রার প্রতি ভক্তির প্রকাশ নয়, এটি সামাজিক ঐক্য ও মানবতাবোধের এক উজ্জ্বল প্রতীক। দেশজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সমন্বয়ে ভারতীয় সংস্কৃতি বিশ্বে কতটা অনন্য। দিঘা ও পুরীর রথযাত্রা এই বার্তা আরও দৃঢ় করে তুলেছে যে, ধর্ম ও সংস্কৃতির আলোয় আমরা এক সঙ্গে পথ চলছি অতীতের ঐতিহ্য রক্ষায় এবং ভবিষ্যতের সোনালী স্বপ্ন বোনার তাগিদে।