নয়াদিল্লি: ভারতবর্ষে বছরের পর বছর ধরে চলছে জাতিগত সংরক্ষণ। তা নিয়ে বিতর্কও হয়েছে কখনও। এবার এই সংরক্ষণ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে মন্তব্য করলেন জগৎগুরু রামভদ্রচার্য। চিত্রকূটের তুলসী পীঠাধীশ্বর, মহাভারতের আধুনিক ব্যাখ্যাতা এবং বিশ্বহিন্দু পরিষদের অন্যতম প্রধান পৃষ্ঠপোষক জগৎগুরু স্বামী রামভদ্রাচার্য এবার সরাসরি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “বেদে অবর্ণ বা সবর্ণ বলে কিছু নেই। বর্ণ বলতে গুণকর্মের কথা বলা হয়েছে, জন্মের নয়। সুতরাং জাতিভিত্তিক কোনো সংরক্ষণ থাকা উচিত নয়।
আর এসসি/এসটি অ্যাক্ট (অত্যাচার নিবারণ আইন) সম্পূর্ণ বাতিল করা উচিত।” এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই সারা দেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। একদিকে দলিত-আদিবাসী সংগঠনগুলো ক্ষোভে ফেটে পড়ছে, অন্যদিকে হিন্দুত্ববাদী মহলের একাংশ এই বক্তব্যকে ‘বৈদিক সত্যের পুনঃপ্রতিষ্ঠা’ বলে অভিহিত করছে।রামভদ্রাচার্য আরও বলেন, “আমি নিজে জন্মান্ধ। আমার জন্য কোনো সংরক্ষণ নেই।
ITR রিফান্ড আটকে? জানুন দেরির কারণ এবং প্যান দিয়ে কীভাবে চেক করবেন
কিন্তু আমি সমাজে প্রতিষ্ঠিত। তাহলে জাতি দেখে সংরক্ষণ কেন? বেদ-উপনিষদে কোথাও জাতিভেদের সমর্থন নেই। যে যোগ্য, সে উপরে উঠবে এটাই বৈদিক নিয়ম।” তাঁর বক্তব্যের মূল যুক্তি হলো, বর্তমান সংরক্ষণ ব্যবস্থা বৈদিক ধর্মের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং এটি সমাজে বিভেদ বাড়াচ্ছে। তিনি দাবি করেন, ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়-বৈশ্য-শূদ্র এই বর্ণব্যবস্থা গুণ ও কর্মের ওপর নির্ভর করত, জন্মের ওপর নয়। সুতরাং আধুনিক কঠোর জাতিভিত্তিক সংরক্ষণ ‘মনুবাদী বিকৃতি’র ফল।
এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসার সঙ্গে সঙ্গে দলিত রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে ঝড় উঠেছে। বহুজন সমাজ পার্টির (বিএসপি) মুখপাত্র রাজকুমার গৌতম বলেন, “জগৎগুরু হয়ে যিনি এসসি/এসটি আইন বাতিল করতে বলছেন, তিনি আসলে মনুবাদের প্রতিনিধি। এই আইন না থাকলে দলিতদের ওপর অত্যাচার আরও বাড়বে।”
চন্দ্রশেখর আজাদের ভীম আর্মি এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা করে বলেছে, “যাঁরা নিজেরা কখনো জাতিগত বঞ্চনার শিকার হননি, তাঁরাই আজ সংরক্ষণের বিরোধিতা করছেন।” অন্যদিকে, রিপাবলিকান পার্টি অফ ইন্ডিয়া (আঠাওয়ালে) নেতা রামদাস আঠাওয়ালে সাবধানী প্রতিক্রিয়া দিয়ে বলেন, “সংরক্ষণ ছাড়া দলিত-আদিবাসীদের উন্নয়ন সম্ভব নয়। জগৎগুরুর বক্তব্য দুর্ভাগ্যজনক।”
হিন্দুত্ববাদী শিবিরে অবশ্য এই মন্তব্যকে স্বাগত জানানো হচ্ছে। আরএসএস-এর এক শীর্ষ নেতা বলেন, “জগৎগুরু যা বলেছেন, তা বৈদিক দৃষ্টিভঙ্গি। আমরাও মনে করি সংরক্ষণ অর্থনৈতিক ভিত্তিতে হওয়া উচিত, জাতিভিত্তিক নয়।” বিশ্ব হিন্দু পরিষদের আন্তর্জাতিক সভাপতি আলোক কুমার বলেন, “স্বামীজি বৈদিক সনাতন ধর্মের কথা বলেছেন। আজকের জাতিবিদ্বেষ ব্রিটিশরা তৈরি করেছে।”
রাজনৈতিক মহলেও ঝড় উঠেছে। বিজেপির একাংশ এই বিষয়ে চুপ থাকলেও, উত্তরপ্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী কেশবপ্রসাদ মৌর্য (ওবিসি নেতা) পরোক্ষভাবে বলেন, “সংরক্ষণ নিয়ে আলোচনা হতেই পারে, কিন্তু এসসি/এসটি অত্যাচার আইন বাতিলের প্রস্তাব অগ্রহণযোগ্য।” কংগ্রেস নেতা পি এল পুনিয়া বলেন, “এটা সংবিধানের মূল চেতনার বিরুদ্ধে আঘাত। বাবাসাহেব আম্বেদকরের স্বপ্নকে অস্বীকার করা হচ্ছে।”
