ট্রেনে সিঙ্গাড়া কেনা নিয়ে বচসা! খোয়াতে হল ঘড়ি

jabalpur-railway-station-samosa-dispute-passenger-loses-watch-incident

জব্বলপুর: ট্রেনে সিঙ্গাড়া কেনা নিয়ে এমন কাণ্ড ঘটল যে দেশের রেলযাত্রীদের মধ্যে ছড়িয়েছে ক্ষোভ ও আতঙ্ক। মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুর রেলওয়ে স্টেশনে ঘটে গেল এক অবিশ্বাস্য ঘটনা একজন যাত্রী সিঙ্গাড়া কিনতে গিয়ে বিক্রেতার হাতে পড়ে ঘড়ি পর্যন্ত খুইয়ে ফেললেন!

Advertisements

ঘটনাটি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার সকালে। সূত্রের খবর, যাত্রীটি প্ল্যাটফর্মে ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় এক বিক্রেতার কাছ থেকে দুটি সিঙ্গাড়া কিনেছিলেন। তিনি মোবাইল অ্যাপ PhonePe ব্যবহার করে পেমেন্ট করার চেষ্টা করেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে লেনদেন সম্পূর্ণ হয়নি। ট্রেন তখন ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

যাত্রীটি সিঙ্গাড়া ফেরত দিতে চাইলেও বিক্রেতা রাজি হননি। উল্টে তিনি যাত্রীর গলায় হাত দিয়ে কলার চেপে ধরেন এবং অভিযোগ করেন যে যাত্রী “সময় নষ্ট করছেন”। সামান্য খাবার কেনা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক এতটা বেড়ে যায় যে যাত্রীকে বাধ্য হয়ে নিজের হাতের ঘড়িটি খুলে বিক্রেতার হাতে দিতে হয় শুধু ট্রেন ধরার জন্য!

চোখের সামনে এই দৃশ্য দেখে হতভম্ব হয়ে যান অন্যান্য যাত্রীরা। অনেকে মোবাইলে ভিডিও করেন, কেউ কেউ রেলওয়ে পুলিশের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু ট্রেন তখন ইতিমধ্যেই ছেড়ে গিয়েছিল, আর যাত্রীটি চোখে-মুখে অপমানের ছাপ নিয়ে সিটে ফিরে যান।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘটনাটির ভিডিও ছড়িয়ে পড়তেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছে নেটিজেনরা। অনেকেই লিখেছেন “এ দেশে এখন ট্রেনে সিঙ্গাড়া খাওয়াও বিপজ্জনক!” কেউ লিখেছেন, “Phone Pe ব্যর্থ হলে কি মানুষের সম্মানও কেড়ে নেওয়া হবে?” রেল কর্তৃপক্ষ অবশ্য ঘটনাটি নিয়ে তদন্তের আশ্বাস দিয়েছে। জবলপুর রেলওয়ে ডিভিশনের এক আধিকারিক বলেন, “আমরা CCTV ফুটেজ খতিয়ে দেখছি। বিক্রেতা যদি অপরাধী প্রমাণিত হন, তাহলে তাঁর লাইসেন্স বাতিল করা হবে।”

Advertisements

রেল মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী প্ল্যাটফর্মে খাদ্য বিক্রেতাদের নির্দিষ্ট নীতি ও রেট লিস্ট মেনে চলতে হয়। কিন্তু অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায়, কিছু অননুমোদিত বিক্রেতা যাত্রীদের সঙ্গে বচসা বা প্রতারণা করে বসেন। এই ঘটনার পর যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন আরও তীব্র হয়েছে। স্থানীয় যাত্রীরা বলছেন, জবলপুরের মতো বড় স্টেশনে যদি এমন ঘটনা ঘটতে পারে, তাহলে দেশের ছোট স্টেশনগুলিতে যাত্রীদের নিরাপত্তা কতটা সুরক্ষিত, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

ঘটনার পর যাত্রী সংগঠনগুলোও সরব হয়েছে। ‘অল ইন্ডিয়া প্যাসেঞ্জার রাইটস ফোরাম’-এর সভাপতি বলেন, “এটা কেবল একটা ঘড়ি হারানোর ঘটনা নয়, বরং এক যাত্রীর আত্মসম্মানহানির উদাহরণ। রেল মন্ত্রণালয়কে অবিলম্বে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং যাত্রীকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।” দেশের সাধারণ মানুষও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশ্ন তুলছেন “যদি ফোনে পেমেন্ট না যায়, তাহলে কি মানুষকে নিজের জিনিসপত্র বিক্রি করে দিতে হবে?”

রেলের মতো সর্বাধিক ব্যবহৃত পরিবহনে এমন ঘটনা নিঃসন্দেহে উদ্বেগের। বিশেষজ্ঞদের মতে, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের উচিত প্ল্যাটফর্মে অনুমোদিত বিক্রেতাদের তালিকা প্রকাশ করা এবং ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যর্থ হলে বিকল্প ব্যবস্থা রাখা। ঘটনার সূত্র ধরে একটাই বার্তা স্পষ্ট ভারতে এখন ট্রেনে শুধু টিকিট নয়, নিজের নিরাপত্তা ও সম্মানও যেন সঙ্গে রাখতে হচ্ছে।