উত্তরপ্রদেশের গোরখপুরে অবস্থিত ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (Defense Rakhi)-র ছাত্ররা ভারতের সীমান্তে মোতায়েন ভারতীয় সৈনিকদের জন্য একটি অভিনব ‘ডিফেন্স রাখি’ প্রোটোটাইপ তৈরি করেছে। এই রাখিগুলি অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত, যার মধ্যে রয়েছে ব্লুটুথ, জিপিএস, মাইক্রোফোন, মাইক্রোপ্রসেসর এবং একটি ট্রিগার বোতাম।
এই প্রযুক্তি সৈনিকদের দূর থেকে তাদের অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম করবে। এই উদ্ভাবন ভারতীয় সৈন্যদের নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আইটিএম-এর উদ্ভাবন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে এই প্রকল্পটি সম্পন্ন হয়েছে, যা ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য বিভিন্ন প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি তৈরির কাজে নিয়োজিত রয়েছে।‘
ডিফেন্স রাখি’র বৈশিষ্ট্য
এই ‘ডিফেন্স রাখি’ প্রোটোটাইপটি সৈনিকদের জন্য একটি পরিধানযোগ্য ডিভাইস হিসেবে ডিজাইন করা হয়েছে, যা তাদের কব্জিতে বাঁধা যাবে। এতে ব্লুটুথ প্রযুক্তি রয়েছে, যা সৈনিকদের তাদের অস্ত্রের সঙ্গে বেতার যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম করে। জিপিএস ট্র্যাকারের মাধ্যমে সৈনিকদের অবস্থান নির্ভুলভাবে নির্ধারণ করা যায়, যা যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক।
মাইক্রোফোনটি কন্ট্রোল রুম বা বেস ক্যাম্পের সঙ্গে তাৎক্ষণিক যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হবে, যা জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। মাইক্রোপ্রসেসরটি ডিভাইসের সমস্ত ফাংশন নিয়ন্ত্রণ করে, এবং ট্রিগার বোতাম সৈনিকদের দূর থেকে অস্ত্র চালনার সুবিধা দেয়। এই রাখিটি হালকা ও টেকসই উপাদান দিয়ে তৈরি, যাতে যুদ্ধক্ষেত্রের কঠিন পরিস্থিতিতেও এটি কার্যকর থাকে।
আইটিএম-এর উদ্ভাবনী ইতিহাস
আইটিএম, জিআইডিএ গোরখপুরের ছাত্ররা এর আগেও ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য বিভিন্ন উদ্ভাবনী প্রকল্পে কাজ করেছে। ২০২৩ সালে চারজন ছাত্র একটি ওয়াই-ফাই সক্ষম রিমোট অটোমেটিক বন্দুকের প্রোটোটাইপ তৈরি করেছিল, যা ১০০ মিটার দূর থেকে গুলি চালাতে পারে। তারা এই বন্দুকের পরিসর ১ কিলোমিটারের বেশি করার জন্য কাজ করছে।
এছাড়া, ২০২২ সালে ছাত্ররা একটি এআই-ভিত্তিক ফায়ারিং হেলমেট তৈরি করেছিল, যাতে জিপিএস ট্র্যাকার এবং ভিডিও প্রেরণের ক্ষমতা ছিল। ২০২৪ সালে তারা একটি এআই-চালিত পুলিশ স্টিক এবং একটি ২ কিলোমিটার পরিসরের এআই হিউম্যান রোবট তৈরি করে। এই ‘ডিফেন্স রাখি’ তাদের সর্বশেষ উদ্ভাবন, যা সৈনিকদের নিরাপত্তা ও কার্যক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
প্রকল্পের তাৎপর্য
এই ‘ডিফেন্স রাখি’ প্রকল্পটি ভারতীয় সৈনিকদের জন্য একটি উদ্ভাবনী সমাধান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সীমান্তে মোতায়েন সৈনিকদের প্রায়ই বিপজ্জনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়, যেখানে দ্রুত যোগাযোগ এবং অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ। এই রাখির মাধ্যমে সৈনিকরা দূর থেকে অস্ত্র চালাতে পারবেন, যা তাদের নিরাপত্তা বাড়াবে।
জিপিএস ট্র্যাকার তাদের অবস্থান নিরীক্ষণে সহায়তা করবে, এবং মাইক্রোফোন জরুরি পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ নিশ্চিত করবে। আইটিএম-এর ডিরেক্টর ড. এন.কে. সিং বলেন, “এই প্রকল্পটি আমাদের ছাত্রদের উদ্ভাবনী ক্ষমতার প্রমাণ। আমরা ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাজ করে এই প্রোটোটাইপটি আরও উন্নত করব এবং এটির পেটেন্ট নিশ্চিত করব।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
আইটিএম-এর ছাত্ররা এই প্রোটোটাইপটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে পেশ করার পরিকল্পনা করছে। তারা ভারতীয় সেনাবাহিনীর পরামর্শ নিয়ে এই রাখিতে আরও কিছু বৈশিষ্ট্য যুক্ত করতে চায়। উদাহরণস্বরূপ, তারা রাখির পরিসর বাড়ানো এবং এটিকে আরও হালকা ও টেকসই করার জন্য কাজ করছে।
এছাড়া, এই ডিভাইসে ক্যামেরা এবং লাইভ ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের সুবিধা যুক্ত করার পরিকল্পনাও রয়েছে। ছাত্ররা জানিয়েছেন, এই প্রকল্পের জন্য তারা স্থানীয়ভাবে উপলব্ধ উপকরণ এবং সাশ্রয়ী প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে, যার মোট ব্যয় প্রায় ২৫,০০০ টাকা।
মাত্র ৪৭-৬০ টাকা কেজি দরে পাওয়া যাচ্ছে টমেটো
সামাজিক ও প্রতিরক্ষা তাৎপর্য
এই ‘ডিফেন্স রাখি’ ভারতের প্রতিরক্ষা খাতে ছাত্রদের অবদানের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। এটি কেবল সৈনিকদের নিরাপত্তাই বাড়াবে না, বরং ভারতের ‘আত্মনির্ভর ভারত’ দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
আইটিএম-এর উদ্ভাবন কেন্দ্র দেশের প্রতিরক্ষা চাহিদা পূরণে তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করছে। এই প্রকল্পটি প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (ডিআরডিও) এবং ইনোভেশন ফর ডিফেন্স এক্সিলেন্স (আইডিইএক্স) প্রকল্পের সঙ্গে সহযোগিতার সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
আইটিএম, জ্বিআইডিএ-র ছাত্রদের তৈরি ‘ডিফেন্স রাখি’ ভারতীয় সৈনিকদের জন্য একটি উদ্ভাবনী এবং ব্যবহারিক সমাধান। এই প্রোটোটাইপটি প্রযুক্তি ও ঐতিহ্যের একটি অনন্য সমন্বয়, যা সৈনিকদের নিরাপত্তা ও কার্যক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম।
আগামী দিনে এই প্রকল্পটি যদি বাণিজ্যিক উৎপাদনে যায়, তবে এটি ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য একটি গেম-চেঞ্জার হতে পারে। ছাত্রদের এই উদ্ভাবন ভারতের প্রতিরক্ষা খাতে তরুণ প্রতিভার সম্ভাবনাকে তুলে ধরেছে।