ভারতের সীমান্ত সুরক্ষায় এবার ময়দানে ইসরো

ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ISRO) এর চেয়ারম্যান ড. ভি. নারায়ণনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তিনি জানিয়েছেন যে আগামী তিন বছরে ISRO…

ISRO to Launch 100-150 Satellites to Bolster India’s Border Security

ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ISRO) এর চেয়ারম্যান ড. ভি. নারায়ণনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তিনি জানিয়েছেন যে আগামী তিন বছরে ISRO ১০০ থেকে ১৫০টি উপগ্রহ মহাকাশে প্রেরণ করার পরিকল্পনা করেছে, যা ভারতের সীমান্ত সুরক্ষাকে আরও শক্তিশালী করবে। এই উদ্যোগটি বিশেষ করে পাকিস্তান এবং চিনের সঙ্গে সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্ত উল্লংঘন এবং সংঘাতের ঘটনা বেড়ে গেছে। এই নতুন উপগ্রহগুলো সীমান্তে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি করবে এবং রিয়েল-টাইম ইন্টেলিজেন্স সরবরাহ করবে, যা ভারতীয় সেনাবাহিনীকে তাদের কাজে সহায়তা করবে।

Also Read | ‘রুদ্র’ থেকে ‘শক্তিবান’: অল-আর্মস ব্রিগেড ও ড্রোন ইউনিটে সেনার রূপান্তর

   

অপারেশন সিন্দুরের সাফল্য: উপগ্রহের ভূমিকা
এই পরিকল্পনার পটভূমিতে গত বছরের অপারেশন সিন্দুরের কথা উল্লেখযোগ্য। ২০২৫ সালের এপ্রিলে পাহালগামে একটি সন্ত্রাসী আক্রমণের পর ভারতীয় বিমান বাহিনী গভীর শত্রুপক্ষের অঞ্চলে হামলা চালিয়েছিল। এই অভিযানে ISRO-এর ১০টি উপগ্রহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। বার্তা শক্তি (Bharat Shakti) এর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, এই উপগ্রহগুলো রিয়েল-টাইম ইন্টেলিজেন্স, নিরাপদ যোগাযোগ এবং সঠিক নেভিগেশন সরবরাহ করে সেনাবাহিনীকে সহায়তা করেছিল। ফলে ভারতের সামরিক কার্যকলাপ সফল হয়েছিল এবং আন্তর্জাতিক সীমানা অতিক্রম না করে শত্রুদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করা সম্ভব হয়েছিল। এই সাফল্য ISRO-এর উপগ্রহ প্রযুক্তির শক্তি প্রমাণ করে এবং নতুন উপগ্রহ প্রকল্পের জন্য ভিত্তি স্থাপন করে।

সীমান্ত নিরাপত্তায় নতুন দৃষ্টিভঙ্গি
ISRO-এর এই নতুন পরিকল্পনা ভারতকে বিদেশী প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেবে। গত কয়েক বছরে পাকিস্তানের ড্রোন আক্রমণ এবং চিনের সঙ্গে সীমান্তে সংঘাতের ঘটনা বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে, The Hindu-এর ৩০ জুন, ২০২৫-এর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারত ৫২টি সামরিক উপগ্রহের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করেছে, যা সীমান্ত জুড়ে নজরদারি এবং পর্যবেক্ষণে সহায়তা করবে। নতুন ১০০-১৫০টি উপগ্রহ যোগ করা হলে ভারতের সামরিক ক্ষমতা আরও শক্তিশালী হবে। এই উপগ্রহগুলো উচ্চ রেজোলিউশন চিত্রকরণ এবং উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা সরবরাহ করবে, যা সীমান্তে কোনো গোপন আন্দোলন শনাক্ত করতে সহায়ক হবে।

Also Read | ভারতবন্ধু কমিউনিস্ট ফিদেল কাস্ত্রোর শতবার্ষিকী ফুটবলে বাইচুং ঝলক

Advertisements

চ্যালেঞ্জ এবং সমালোচনা
তবে এই পরিকল্পনার কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। X-এর কিছু ব্যবহারকারী ISRO-এর ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, ISRO বর্তমানে বছরে ৩-৪টি উপগ্রহ ছাড়া আর বেশি কিছু করতে পারে না। তবে ঐতিহাসিক তথ্য বলে, ২০১৭ সালে ISRO একবারে ৪২টি উপগ্রহ মহাকাশে প্রেরণ করেছিল, যা এই সমালোচনার জবাব দিতে পারে। তবে, NaVIC নেভিগেশন সিস্টেম এখনও সম্পূর্ণ কার্যকর হয়নি, যা উপগ্রহগুলোর কার্যক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। X ব্যবহারকারী গণেশ কুমারের মতে, NaVIC-এর উন্নতি না হলে এই উপগ্রহগুলোর সম্পূর্ণ সম্ভাবনা ব্যবহার করা যাবে না।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
এই উদ্যোগটি ভারতের মহাকাশে সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার দিকে একটি বড় পদক্ষেপ। ISRO-এর সফলতা ইতিমধ্যে গগনযান মিশন এবং NISAR (ISRO-NASA যৌথ উপগ্রহ) প্রকল্পের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। ৩০ জুলাই, ২০২৫-এ GSLV-F16 মাধ্যমে NISAR-এর প্রক্ষেপণ ISRO-এর ক্ষমতার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। ভবিষ্যতে, এই নতুন উপগ্রহগুলো শুধুমাত্র সামরিক ক্ষেত্রে নয়, কৃষি, আবহাওয়া পূর্বাভাস এবং দূরসংযোগ চিকিৎসার মতো ক্ষেত্রেও ভারতকে সাহায্য করবে।

ISRO-এর এই পরিকল্পনা ভারতের জনগণের মনে আশা আর আত্মবিশ্বাসের সঞ্চার করেছে। যদিও কিছু প্রযুক্তিগত এবং ব্যবহারিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, ISRO-এর অতীতের সাফল্য এই লক্ষ্য অর্জনের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে। ভারতের সীমান্ত সুরক্ষা এবং মহাকাশে শক্তি প্রতিষ্ঠার এই যাত্রায় ISRO একটি নতুন অধ্যায় শুরু করেছে। দেশবাসী এখন অপেক্ষা করছে তাদের এই গর্বের সংস্থার আরও বড় সাফল্য দেখতে।