ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ISRO) সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে, তারা ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা (ESA)-এর সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি সই করেছে, যার মাধ্যমে গগনযান মিশনের (Gaganyaan mission) জন্য ইউরোপের গ্রাউন্ড স্টেশনগুলো ব্যবহারের অনুমতি মিলেছে। এর মাধ্যমে গগনযাত্রীদের পৃথিবী কক্ষপথে পাঠানোর লক্ষ্যে কৌশলগত সহায়তা পাওয়ার জন্য বিশেষ এক পদক্ষেপ নেওয়া হলো। গগনযান মিশনটির জন্য, যার মধ্যে রয়েছে মানব যাত্রীদের মহাকাশে পাঠানোর পরিকল্পনা, ইউরোপের গ্রাউন্ড স্টেশনগুলো থেকে সংকেত প্রেরণ এবং গ্রহণের জন্য রেডিও যন্ত্রপাতি পরীক্ষার কাজ করা হয়েছিল। এই পরীক্ষাগুলি মূলত গগনযান ক্রু মডিউলের কার্যকারিতা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার সাথে ইউরোপীয় স্টেশনগুলোর সামঞ্জস্য নিশ্চিত করতে করা হয়।
গগনযান মিশনের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা
ডিসেম্বর ২০২৪ সালে ISRO ঘোষণা করেছে যে, তারা ESA-এর গ্রাউন্ড স্টেশনগুলোর মাধ্যমে গগনযান ক্রু মডিউলের রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি (RF) সামঞ্জস্য পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। এই পরীক্ষাগুলির মাধ্যমে গগনযান মিশনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হলো, যাতে গগনযান মিশন শুরুর আগে সমস্ত আর্কিটেকচার যাচাই করা যায়। এই পরীক্ষা সফল হওয়ার পর, এটা নিশ্চিত করা গেছে যে গগনযান ক্রু মডিউল এবং ESA স্টেশনগুলোর মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি সঠিকভাবে কাজ করছে। এর মাধ্যমে গগনযান মিশন চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় পুরোপুরি সক্ষম যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করা হয়েছে।
গগনযান মিশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ক্রু মডিউল পৃথিবী কক্ষপথে ঘুরবে এবং ভারতীয় গ্রাউন্ড স্টেশনগুলোর পক্ষে একে অবিচ্ছিন্নভাবে ট্র্যাক করা সম্ভব হবে না। এই কারণে, আন্তর্জাতিকভাবে মহাকাশ গবেষণা কার্যক্রমে অভিজ্ঞ দেশগুলি একে অপরের গ্রাউন্ড স্টেশন ব্যবহার করে এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। এর ফলে প্রতিটি দেশ খরচ কমাতে পারে এবং তাদের নিজস্ব মহাকাশ মিশনকে আরো সফল করতে পারে।
এই লিংকের মাধ্যমে গগনযান ক্রু মডিউলের টেলিমেট্রি, ট্র্যাকিং, কমান্ড, ডেটা হ্যান্ডলিং এবং অডিও-ভিডিও স্ট্রিমিং পরিষেবাগুলি ESA-র গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে করা হবে। এই যৌথ পরীক্ষার কাজটি আইএসআরও এবং ESA যৌথভাবে একটি টেকনিক্যাল ইমপ্লিমেন্টেশন প্ল্যানের অধীনে সম্পন্ন করেছে।
গগনযান প্রোগ্রামের অগ্রগতি
এছাড়াও, ডিসেম্বরে ISRO গগনযান G1 লঞ্চ ক্যাম্পেইন শুরু করেছে, যা গগনযান প্রোগ্রামের প্রথম উড়ান হবে। এখানে, Human-Rated Launch Vehicle Mark 3 ব্যবহৃত হবে, যা প্রথমে গগনযান ক্রু মডিউল বা মহাকাশযানকে একটি অমানবিক কনফিগারেশনে মহাকাশে পাঠাবে। এর মাধ্যমে নতুন যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির নিরাপত্তা পরীক্ষাগুলি করা হবে।
ISRO ২০২৫ সালে অন্তত তিনটি পরীক্ষামূলক উড়ান পরিচালনার পরিকল্পনা করেছে, যার মধ্যে প্রথম উড়ানটি মার্চ ২০২৫-এ হওয়ার কথা। এই পরীক্ষামূলক উড়ানগুলির মাধ্যমে গগনযান মিশনের নিরাপত্তা এবং কার্যকারিতা যাচাই করা হবে। প্রথম ক্রু মডিউল উড়ান ২০২৬ সালে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে এর আগে গগনযাত্রীরা মহাকাশে যাওয়ার সুযোগ পাবেন অ্যাক্সিয়াম ৪ মিশনের মাধ্যমে।
গগনযান মিশনের মহাকাশ যাত্রা:
গগনযান মিশনটি এক একটি অভূতপূর্ব উদ্যোগ, যা ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা এবং প্রযুক্তিতে একটি নতুন যুগের সূচনা করবে। গগনযাত্রীদের মহাকাশে পাঠানোর মাধ্যমে ভারত বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ মহাকাশ শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। এই মিশনের মাধ্যমে ভারত মহাকাশ গবেষণায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরো একটি পদক্ষেপ এগিয়ে যাবে।
এই মিশনের সফলতা ভারতের স্বয়ংসম্পূর্ণ মহাকাশ কর্মসূচিকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, পৃথিবী কক্ষপথে মানব মিশন পরিচালনা করা ভারতীয় মহাকাশ গবেষণার অন্যতম সাফল্য হয়ে থাকবে।
গগনযান মিশন এবং ভারতের ভবিষ্যত পরিকল্পনা
গগনযান মিশনের মাধ্যমে শুধু ভারতের মহাকাশ গবেষণার শক্তি বৃদ্ধি পাবে না, বরং এর মাধ্যমে ভারতের বিজ্ঞানী এবং প্রযুক্তিবিদদের পেশাগত দক্ষতা ও উদ্ভাবনশীলতারও অগ্রগতি হবে। এটি ভারতের আরেকটি বড় বৈজ্ঞানিক মাইলফলক হবে। একই সঙ্গে, ভারতীয় বিজ্ঞানী ও গবেষকরা পুরো বিশ্বের কাছে আরও দৃশ্যমান হয়ে উঠবেন।
ISRO-এর এই মিশন ভবিষ্যতে আরও গবেষণা এবং প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। প্রতিটি পরীক্ষামূলক উড়ান এবং এর পরবর্তী ক্রু মডিউল উড়ান ভারতের মহাকাশ গবেষণা উদ্যোগের প্রতি দুনিয়ার বিশ্বাস আরো দৃঢ় করবে।
গগনযান মিশন ভারতের মহাকাশ গবেষণার এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই মিশনটি শুধুমাত্র ভারতের জন্য নয়, বরং আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রেও নতুন দিগন্ত খুলবে। মহাকাশ প্রযুক্তিতে সাফল্য অর্জনের মাধ্যমে ভারত বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলির সঙ্গে একটি শক্তিশালী অংশীদারিত্ব স্থাপন করবে এবং পরবর্তী প্রজন্মের বিজ্ঞানীদের জন্য অনুপ্রেরণা যোগাবে।