বেঙ্গালুরু জেলবন্দি আইএসআইএস জঙ্গির হাতে মোবাইল ফোন! নিরাপত্তা নিয়ে চাঞ্চল্য

isis-terrorist-zuhab-hameed-shakeel-manna-using-mobile-in-bengaluru-jail

বেঙ্গালুরুর সেন্ট্রাল জেলে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। সেখানে বন্দি এক আইএসআইএস (ISIS) জঙ্গি—জুহাব হামিদ শাকিল মান্নাকে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দেখা গিয়েছে বলে সূত্রের দাবি। এই ঘটনার খবর প্রকাশ্যে আসতেই নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র প্রশ্ন। জানা গিয়েছে, জুহাব হামিদ শাকিল মান্না আইএসআইএস-এর জন্য অর্থ জোগাড় করার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিল৷ গত কয়েক বছর ধরে সে বেঙ্গালুরুর এই কেন্দ্রীয় জেলে বন্দি। কিন্তু এত উচ্চ নিরাপত্তার জেলের ভেতরে কীভাবে একজন সন্ত্রাসবাদে অভিযুক্ত বন্দির হাতে মোবাইল পৌঁছল, তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে রাজ্য প্রশাসনে।

Advertisements

সূত্রের খবর, সম্প্রতি একটি ভিডিও ফুটেজ এবং অভ্যন্তরীণ তদন্তে দেখা গিয়েছে, জুহাব হামিদের হাতে একটি স্মার্টফোন ধরা পড়েছে, যার মাধ্যমে সে বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করছিল৷ প্রাথমিকভাবে ধারণা, মোবাইল ফোনটি জেলের ভেতরে চোরাপথে প্রবেশ করেছে, এবং এতে জড়িত থাকতে পারে জেলের কিছু কর্মীও। বেঙ্গালুরু পুলিশ ইতিমধ্যে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে, পাশাপাশি কারা দপ্তরকেও একটি রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।

   

উল্লেখ্য, জুহাব হামিদ শাকিল মান্নাকে কয়েক বছর আগে এনআইএ (NIA) গ্রেফতার করে, আইএসআইএসের হয়ে অর্থ সংগ্রহ, রিক্রুটমেন্ট ও প্রচারের অভিযোগে। তদন্তে উঠে এসেছিল যে সে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তরুণদের মগজধোলাই করত এবং তাদের জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিতে উদ্বুদ্ধ করাত। আদালতের নির্দেশে তাঁকে উচ্চ নিরাপত্তায় রাখা হয়েছিল, কারণ তার সঙ্গে বিদেশি জঙ্গি সংগঠনের সংযোগও সন্দেহ করা হচ্ছে। সেই ব্যক্তির হাতেই যদি জেলের ভিতর মোবাইল থাকে, তা হলে তা শুধু বেঙ্গালুরু জেলের নয়, দেশের কারা নিরাপত্তার জন্যও একটি বড় সতর্কবার্তা।

কারা সূত্রের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “আমরা বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছি। মোবাইলটি কোথা থেকে এল, কার মাধ্যমে এল এবং কতদিন ধরে এটি ব্যবহার হচ্ছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” তদন্তকারীরা ফোনের ডেটা উদ্ধার করার চেষ্টা করছেন, যাতে জানা যায়, জুহাব কাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছিল এবং কোনও জঙ্গি নেটওয়ার্ক কি নতুন করে সক্রিয় হচ্ছে কি না।

এই ঘটনার পর থেকেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। বেঙ্গালুরুর কেন্দ্রীয় জেলের ভিতরে বিশেষ তল্লাশি চালানো হচ্ছে, যাতে অন্য কোনও বন্দির কাছেও মোবাইল বা অবৈধ গ্যাজেট রয়েছে কি না, তা নিশ্চিত করা যায়। অতীতে বহুবার দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলে বন্দিরা গোপনে মোবাইল ব্যবহার করে বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে—কখনও অপরাধী চক্র, কখনও জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে। কিন্তু এই ঘটনা বিশেষভাবে উদ্বেগজনক, কারণ এতে দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বিষয় জড়িত।

Advertisements

বিশেষজ্ঞদের মতে, “যদি সত্যিই কোনও আইএসআইএস জঙ্গি জেলের ভেতর থেকে যোগাযোগ রাখতে পারে, তবে তা গোয়েন্দা সংস্থার জন্যও বিপজ্জনক সংকেত। এতে স্পষ্ট বোঝা যায়, জেল প্রশাসনের ভিতরে কোথাও না কোথাও ফাঁকফোকর রয়েছে।” এই ঘটনার তদন্তে এখন এনআইএ এবং কর্ণাটক পুলিশের সন্ত্রাসবিরোধী শাখা যুক্ত হতে পারে বলে খবর।

সরকারি মহল জানিয়েছে, রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে দেশের সমস্ত কেন্দ্রীয় জেলে নিরাপত্তা স্ক্যানিং প্রক্রিয়া আরও কড়া করার নির্দেশও দেওয়া হতে পারে।

দেশের নিরাপত্তা নিয়ে এত গুরুত্বপূর্ণ এক বন্দি যদি জেলের ভিতর থেকেও যোগাযোগ রাখতে পারে, তাহলে সাধারণ কারাবন্দিদের ক্ষেত্রেও প্রশ্ন ওঠে—কতটা নিরাপদ ভারতের জেলব্যবস্থা? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে এখন নেমেছে গোটা প্রশাসন।