নয়াদিল্লি: পাকিস্তানের আন্তঃরাষ্ট্রীয় গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই–এর সঙ্গে যোগসূত্র থাকা একটি অস্ত্র সরবরাহ চক্রকে হাতে নাতে ধরল দিল্লি পুলিশ। দীর্ঘ তদন্ত এবং নজরদারির পর রাজধানীর স্পেশাল সেল এক বিশেষ অভিযানে চারজনকে গ্রেফতার করেছে অজয়, মনদীপ, দলবিন্দর এবং রোহন। এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, পাকিস্তান থেকে ড্রোনের মাধ্যমে ভারতে পাঠানো আধুনিক বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অপরাধচক্রের কাছে সরবরাহ করত এরা।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরেই পাঞ্জাব সীমান্ত এলাকায় ড্রোনের সাহায্যে আগ্নেয়াস্ত্র এবং গোলাবারুদ ফেলে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। সেই অস্ত্রগুলোর বেশিরভাগ ঝাড়খণ্ড, রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ এবং দিল্লির আন্ডারওয়ার্ল্ডে পাচার হতো। এই সরবরাহ রুটটির হদিস পাওয়ার পর স্পেশাল সেল গোপন সূত্রে তথ্য সংগ্রহ শুরু করে এবং ধীরে ধীরে চক্রটির মূল সদস্যদের অবস্থান শনাক্ত করে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়ে প্রথম রাতেই সম্রাটের এনকাউন্টার
অবশেষে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে একটি পরিকল্পিত অভিযানে পুলিশ এই চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে ১০টি উন্নতমানের বিদেশি পিস্তল এবং মোট ৯২ রাউন্ড কার্তুজ। উদ্ধার হওয়া অস্ত্রগুলোর বেশিরভাগ তৈরি তুরস্ক ও চীনে, এবং তদন্তকারীদের প্রাথমিক অনুমান, পাকিস্তানের আইএসআই–এর সাহায্যেই অস্ত্রগুলো ড্রোনে ফেলে ভারতের সীমান্তে পাঠানো হয়েছিল।
পুলিশ কর্মকর্তাদের বক্তব্য, এই চক্রটি শুধুমাত্র অস্ত্র পাচারই করতো না, বরং সক্রিয়ভাবে নতুন ক্রেতা এবং অপরাধী নেটওয়ার্কের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতো। এটি আন্তর্জাতিক অস্ত্র পাচারের একটি বড় চক্র, যার সুতো পাকিস্তানের মাটিতে পৌঁছাচ্ছে—এমনই দাবি পুলিশের। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, আটক চারজনের মধ্যে একজনের মোবাইল থেকে আইএসআই–ঘনিষ্ঠ পাকিস্তানি নম্বরের সঙ্গে কথোপকথনের অডিও রেকর্ডিং পাওয়া গেছে।
অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে। জানা গেছে, এই চক্রটি আগেও দুইবার একই পদ্ধতিতে ড্রোনের মাধ্যমে ভারতে অস্ত্র সংগ্রহ করেছে। প্রতিবারই পাঞ্জাবের সীমান্তবর্তী একটি নির্দিষ্ট স্থানে অস্ত্র নিক্ষেপ করা হতো এবং তা সংগ্রহ করে দ্রুত অন্য রাজ্যে পাচার করা হতো। এমনকি অস্ত্র কেনাবেচার সমস্ত লেনদেন হতো ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে, যাতে ট্রানজ্যাকশন ট্র্যাক করা কঠিন হয়।
পুলিশ অনুমান করছে, দেশের বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী সংগঠন এবং অপরাধচক্রের কাছেও এই অস্ত্রগুলি পৌঁছানোর উদ্দেশ্য ছিল। ফলে গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরও বড় যোগাযোগ চক্রের সন্ধান মিলতে পারে। স্পেশাল সেল এখন পাঞ্জাব ও সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে যোগাযোগ রেখে এই নেটওয়ার্ক ধ্বংসের চেষ্টা করছে।
এই ঘটনার পর নিরাপত্তা মহলে উদ্বেগ বেড়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত উন্নতমানের ড্রোন প্রযুক্তি পাচার চক্রের হাতে পৌঁছানো ভারতের নিরাপত্তার জন্য বড় হুঁশিয়ারি। শুধু অস্ত্র নয়, ভবিষ্যতে বিস্ফোরক, নেশাদ্রব্য, এমনকি সন্ত্রাসবাদী সরঞ্জামও একইভাবে প্রবেশ করানো হতে পারে যদি নজরদারি আরও জোরদার না করা হয়।
গ্রেফতার হওয়া চারজনকে আদালতে তোলা হলে বিচারক পুলিশ কাস্টডির নির্দেশ দেন। তদন্তকারীরা এখন পাকিস্তানের আইএসআই–এর সঙ্গে সরাসরি সংযোগের প্রমাণ খুঁজতে চারজনকে মুখোমুখি জেরা করছে। পুলিশের ধারণা, এই নেটওয়ার্কের পেছনে আরও একাধিক বড় দালাল, অর্থদাতা ও বিদেশি হ্যান্ডলার সক্রিয় রয়েছে, যাদের ধরতে পারলে আন্তর্জাতিক অস্ত্র পাচারের একটি বড় চক্র ভেঙে পড়বে।
ভারতের রাজধানীতে এই অভিযান নিঃসন্দেহে বড় সাফল্য হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। তবে একই সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সামনে সতর্কবার্তা—ড্রোনের মাধ্যমে সীমান্তে অস্ত্র পাচার এখন নতুন হুমকি, এবং এর বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি কার্যকর কৌশল না নিলে ঝুঁকি আরও বাড়তে পারে।
