নয়াদিল্লি, ২৫ নভেম্বর: ভারতের নিরাপত্তা অঙ্গনে নতুন করে উদ্বেগের ছায়া। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা ISI এবার সন্ত্রাসের কৌশল পাল্টে “হোয়াইট–কলার টেরর মডিউল” গঠনের উদ্দেশ্যে বিদেশে থাকা ভারতীয় ছাত্রদের টার্গেট করছে।
বিশেষ করে মেডিক্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে পড়তে যাওয়া ভারতীয় ছাত্রদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা ব্যবহার করে সাইবার সন্ত্রাস, অর্থপাচার, ডিজিটাল র্যাডিক্যালাইজেশন ও তথ্য-চুরি কার্যক্রমে নিযুক্ত করার চেষ্টা চলছে বলে সূত্রের দাবি।
এয়ার শোতে বিমান ওড়ানোর জন্য পাইলটদের কীভাবে নির্বাচন করা হয়
গোয়েন্দাদের ভাষায়, “গান ও গ্রেনেডের সন্ত্রাস এখন আর আইএসআইয়ের একমাত্র অস্ত্র নয়। নতুন লক্ষ্য উচ্চদক্ষ শিক্ষিত ভারতীয় যুবকদের পেশাদার পরিচয়ের আড়ালে স্লিপার সেল তৈরি করা।” তারা জানিয়েছেন, এই নতুন “হোয়াইট–কলার টেররিস্ট”রা সাধারণ ছাত্রের মতোই থাকে, ভালো ফলাফল করে, সমাজে মিশে যায়। কিন্তু ধীরে ধীরে তাদের মগজধোলাই করা হয় এবং জনগণের নজরের বাইরে থেকেও শত্রুর কাজ করে যায় তাতেই সবচেয়ে বড় ঝুঁকি।
বিশেষ উদ্বেগের বিষয়, গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়তে যাওয়া ভারতীয় ছাত্রদের ওপর বিশেষ নজরদারি চলছে। প্রায় ১২,০০০ ভারতীয় মেডিক্যাল ছাত্র বর্তমানে গোয়েন্দা সংস্থার স্ক্যানারে আছেন বিশেষত যাঁরা ২০২৪ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় বাংলাদেশে অবস্থান করেছিলেন, যে অস্থিরতার পর ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হয়েছিল শেখ হাসিনাকে। তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে সন্দেহ, সেই সময় বিদেশি শক্তি ও কট্টরপন্থী গোষ্ঠীগুলোর প্রভাবে কিছু ভারতীয় ছাত্র অনলাইন র্যাডিক্যালাইজেশনের জালে জড়িয়ে পড়েছে।
গোয়েন্দা সূত্রের বক্তব্য, “যে ছাত্ররা চিকিৎসাশাস্ত্র ও প্রযুক্তি শিখছে, তাদের ব্যবহার করলে সন্ত্রাসবাদ অনেক বেশি মারাত্মক হতে পারে। কারণ এদের রয়েছে এনাটমি, কেমিস্ট্রি, টেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, সাইবার সিস্টেম ও আর্থিক লেনদেন সব বিষয়ে পেশাদার দক্ষতা। এগুলো ভুল হাতে পড়লে ক্ষতির মাত্রা কল্পনার বাইরে।”
এমন পরিস্থিতিতে ভারত-সহ একাধিক দেশের গোয়েন্দা সংস্থা যৌথভাবে তথ্য আদানপ্রদান শুরু করেছে। নজরদারি চলছে আইএসআই ঘনিষ্ঠ অনলাইন গ্রুপ, তহবিল সরবরাহকারী ক্রিপ্টো ওয়ালেট, সন্দেহজনক ব্যাংক লেনদেন, বিদেশি স্কলারশিপ, প্রচারমূলক ধর্মীয় শিক্ষা কর্মসূচি ও মানবাধিকার সংগঠনের আড়ালে পরিচালিত চক্রগুলোর উপর।
গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বক্তব্য স্পষ্ট “এটি শুধু জাতীয় নিরাপত্তার ইস্যু নয়; এ এক মানসিক যুদ্ধ।” তারা বলছেন, কেউ যদি ভারতে ফিরে চিকিৎসক, প্রকৌশলী বা গবেষক হিসেবে কাজ শুরু করেন সাধারণ মানুষের চিন্তার ধারেও আসবে না যে তিনি হয়তো কোনও স্লিপার সেলের সদস্য। আর এটাই শত্রুপক্ষের সবচেয়ে বড় সুবিধা।
এক্ষেত্রে সরকারের প্রধান তিনটি লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে বিদেশে থাকা ভারতীয় ছাত্রদের নিরাপত্তা ও মনিটরিং জোরদার করা, অনলাইনে র্যাডিক্যালাইজেশন প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক সাইবার নজরদারি বৃদ্ধি করা এবং আইনি সাহায্য, পরামর্শ ও কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে ছাত্রদের সঠিক পথে থাকার সহায়তা দেওয়া। সূত্র জানাচ্ছে, তদন্ত চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত ছাত্রদের বিরুদ্ধে কোনও একতরফা পদক্ষেপ নয় বরং “সুরক্ষা ও পুনর্বাসনকেই” অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। কারণ সবাই সন্দেহভাজন নয় তবে বিপদের সম্ভাবনাকে হালকা করে দেখা যাচ্ছে না।
