ভাষার শিকড় সংস্কৃতকে বিশেষ সম্মান ইরানের

বিশ্ব সংস্কৃত দিবস (World Sanskrit Day) উপলক্ষে ইরানের ভারতবর্ষে অবস্থিত দূতাবাস একটি অসাধারণ পদক্ষেপ নিয়ে সাম্প্রতিক কালে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা শুরু করে দিয়েছে। ইরান ইন ইন্ডিয়া…

Iran Honors Sanskrit on World Sanskrit Day, Highlights Deep Linguistic Ties with Indian Heritage

বিশ্ব সংস্কৃত দিবস (World Sanskrit Day) উপলক্ষে ইরানের ভারতবর্ষে অবস্থিত দূতাবাস একটি অসাধারণ পদক্ষেপ নিয়ে সাম্প্রতিক কালে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা শুরু করে দিয়েছে। ইরান ইন ইন্ডিয়া (@Iran_in_India) নামে একটি পোস্টে তারা সংস্কৃত ভাষাকে সম্মান জানিয়ে বলেছে যে, এটি বিশ্বের প্রাচীনতম ভাষা হিসেবে পরিচিত এবং ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি অপরিহার্য অংশ। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ইরানী ভাষাগুলির সঙ্গে সংস্কৃতের গভীর ভাষাগত সম্পর্কের কথা তুলে ধরা হয়েছে, যা দুই দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধনের একটি প্রতীক। এই পদক্ষেপটি শুধুমাত্র একটি সাংস্কৃতিক প্রকাশ নয়, বরং ভারত ও ইরানের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী সম্পর্ককে পুনরুদ্ধার করার একটি চেষ্টা হিসেবেও দেখা যাচ্ছে।

বিশ্ব সংস্কৃত দিবসটি প্রতি বছর শ্রাবণ পূর্ণিমার দিন উদযাপন করা হয়, এবং ৯ আগস্ট ২০২৫ তারিখে এই উৎসবে ইরানের দূতাবাস একটি চিত্রসহ পোস্ট শেয়ার করে বলেছে, “আমরা বিশ্ব সংস্কৃত দিবসে একটি প্রাচীনতম ভাষাকে সম্মান জানাই, যা ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি মূল স্তম্ভ। সংস্কৃত ও ইরানী ভাষার মধ্যে রয়েছে গভীর সম্পর্ক—এটি ইন্ডিয়া ও ইরানের মধ্যে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধনের একটি স্মরণীয় প্রমাণ।” পোস্টটিতে সংস্কৃত ভাষার একটি সুন্দর চিত্র প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে “মম ভব সুকুতম” শিরোনামে একটি ঐতিহাসিক পাঠ্যের উল্লেখ রয়েছে, যা ভারতীয় সংস্কৃতির সমৃদ্ধতার প্রতীক।

   

সংস্কৃত ও ইরানী ভাষার সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে গভীরভাবে জড়িত। ভাষাবিদরা বিশ্বাস করেন যে, উভয় ভাষা প্রোটো-ইন্ডো-ইরানী ভাষা থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যা প্রায় ২০০০ খ্রিষ্টপূর্বে বিকশিত হয়েছিল। এই সম্পর্কের প্রমাণ পাওয়া যায় বেদ ও আবেস্তার মতো প্রাচীন পাঠ্যে, যেখানে শব্দ যেমন র্ত (সংস্কৃত) ও আশা (আবেস্তান) একই ধর্মীয় ও দার্শনিক ধারণাকে প্রকাশ করে। আর্কিওলজিকাল প্রমাণ, বিশেষ করে বাক্ট্রিয়া-মার্গিয়ানা আর্কিওলজিকাল কমপ্লেক্স থেকে পাওয়া তথ্য, এই মাইগ্রেশনের কথা নিশ্চিত করে, যা ইন্ডো-আর্য ও ইরানী সম্প্রদায়কে আলাদা করেছিল প্রায় ১৫০০ খ্রিষ্টপূর্বে।

ইরানের এই পদক্ষেপটি শুধুমাত্র সাংস্কৃতিক সম্মান নয়, বরং ভারত ও ইরানের মধ্যে বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক চাপের মধ্যেও একটি ঐতিহাসিক বন্ধন পুনরুদ্ধারের চেষ্টা। ইরান ও ভারতের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে, যা প্রাচীনকালে শিবাজি ও মুঘল আমলের সময় আরও গাঢ় হয়েছিল। আজকের দিনে, যখন এই দুই দেশ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংঘাতের মধ্যে রয়েছে, তখন এই ভাষাগত সংযোগটি একটি শান্তির সেতু হতে পারে, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে।

Advertisements

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্প্রতি সংস্কৃত ভাষার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন এবং সরকারি পদক্ষেপগুলোর কথা বলেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, গত দশক ধরে সরকার কেন্দ্রীয় সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, সংস্কৃত শিক্ষা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা এবং পুঁথি-পত্র ডিজিটালকরণের মতো উদ্যোগ নিয়েছে। ইউনেস্কোর ২০২৩ সালের ভাষাগত বৈচিত্র্য রিপোর্ট অনুযায়ী, সংস্কৃত ২০০ এরও বেশি আধুনিক ভাষার উপর প্রভাব ফেলেছে, যা ভারতীয় উপমহাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি অংশ। এই প্রচেষ্টা সংস্কৃতকে শুধুমাত্র ধর্মীয় ভাষা হিসেবে সীমাবদ্ধ রাখছে না, বরং এটিকে আধুনিক শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে জনপ্রিয় করার চেষ্টা চলছে।

এই প্রসঙ্গে, ইরানের দূতাবাসের পোস্টটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি একটি আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সমর্থন করে। এই পোস্টটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে, যেখানে বহু ব্যক্তি ও সংস্থা সংস্কৃতের সংরক্ষণ ও প্রচারের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। তবে, কিছু বিতর্কও দেখা দিয়েছে—কিছু বিশ্লেষক জানাচ্ছেন যে সংস্কৃতের আধুনিক চাকরির বাজারে ব্যবহারিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। তবুও, এই ভাষার সঙ্গে জড়িয়ে ইতিহাস। সভ্যতার শিকড়।