ওড়িশার ভদ্রক (bhadrak) জেলায় গরু চোরাচালান নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় একজনের মৃত্যুর পর ইন্টারনেট পরিষেবা স্থগিতকরণের সময়সীমা আরও ১২ ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে। জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, ভদ্রক, তিহিডি এবং ধামনগর ব্লক, সেইসঙ্গে ভদ্রক পৌরসভা এবং ধামনগর নোটিফায়েড এরিয়া কাউন্সিল (এনএসি) এলাকায় শুক্রবার (১৩ জুন ২০২৫) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকবে।
এই নিষেধাজ্ঞা ১২ জুন থেকে কার্যকর করা হয়েছিল, যখন গরু চোরাচালান নিয়ে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়(bhadrak)। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট-কাম-কালেক্টর দিলীপ রাউতরায় পিটিআই-কে জানিয়েছেন, পরিস্থিতি এখন “সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে” এবং এখনও পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তবে, শান্তি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে এই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ইন্টারনেট স্থগিতকরণের কারণ (bhadrak)
ভদ্রক (bhadrak) জেলায় গত ৩০ মে একটি সংঘর্ষের ঘটনায় সন্তোষ পারিদা নামে এক যুবক গুরুতরভাবে আহত হন। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১১ জুন মারা যান। এই ঘটনার পর জেলায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক মাধ্যমে ভুল তথ্য ছড়ানো এবং উস্কানিমূলক বার্তা প্রচার রোধ করতে জেলা প্রশাসন ১২ জুন থেকে ২৪ ঘণ্টার জন্য ইন্টারনেট পরিষেবা স্থগিত করে।
পরবর্তীতে, পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই নিষেধাজ্ঞা শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। জেলা কালেক্টর দিলীপ রাউতরায় বলেন, “আমরা পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রাখছি। এখনও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। শান্তি বজায় রাখতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।”
ইস্টার্ন রেঞ্জের ডিআইজি সত্যজিৎ নায়ক জানিয়েছেন, “ভুল তথ্য ছড়ানো রোধ করতে এবং শান্তি বজায় রাখতে ভদ্রক, (bhadrak) তিহিডি, ধামনগর ব্লক এবং ভদ্রক পৌরসভা ও ধামনগর এনএসি এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবা স্থগিত করা হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা সতর্ক অবস্থায় রয়েছি এবং পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
প্রশাসনের পদক্ষেপ
এই ঘটনায় জড়িত (bhadrak) থাকার অভিযোগে পুলিশ এখন পর্যন্ত ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে, যার মধ্যে প্রধান অভিযুক্তও রয়েছেন। ভদ্রকের এসপি মনোজ রাউত জানিয়েছেন, বাকি অভিযুক্তদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে জেলার সংবেদনশীল এলাকায় ২৭ প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ফের হতাশা! টি-টোয়েন্টি ফাইনালে ক্যাপ্টেন শ্রেয়াসের টানা দ্বিতীয় পরাজয়
এছাড়া, শান্তি কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চলছে। মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝি মৃত সন্তোষ পারিদার পরিবারের জন্য ১০ লক্ষ টাকার আর্থিক ক্ষতিপূরণ এবং পরিবারের একজন সদস্যের জন্য সরকারি চাকরির ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা শোকাহত পরিবারের পাশে রয়েছি এবং শান্তি বজায় রাখতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।”
সামাজিক মাধ্যম ও উত্তেজনা
ভদ্রক (bhadrak) জেলায় এর আগেও সামাজিক মাধ্যমে উস্কানিমূলক পোস্টের কারণে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার ঘটনা ঘটেছে। ২০১৭ সালের এপ্রিলে একটি উস্কানিমূলক ফেসবুক পোস্টের জেরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে ৪৫০টি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয় এবং ৯ কোটি টাকার সম্পত্তির ক্ষতি হয়।
ওই ঘটনায় এক মাসের জন্য কারফিউ জারি করা হয়েছিল, যা ওড়িশার ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী কারফিউ ছিল। ১৯৯১ সালেও রাম নবমীর সময় ভদ্রকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল। জেলাটির প্রায় ৪০% মুসলিম জনসংখ্যার কারণে এটি সাম্প্রদায়িকভাবে সংবেদনশীল এলাকা হিসেবে বিবেচিত হয়।
সাম্প্রতিক ঘটনায়, সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভুল তথ্য এবং উস্কানিমূলক বার্তা রোধ করতে ইন্টারনেট স্থগিতকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাজ্যের গৃহ সচিব সত্যব্রত সাহু জানিয়েছেন, “হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, এক্স-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলি সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়াতে পারে। শান্তি ও সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনতে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।”
প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা
জেলা প্রশাসন ভদ্রক (bhadrak) শহরের পুরুনাবাজার এবং ধামনগর থানা এলাকায় ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা (বিএনএসএস)-এর ১৬৩ ধারার অধীনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এই আদেশে পাঁচজনের বেশি লোকের জমায়েত, মিছিল বা আন্দোলন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
পুলিশের ১৪ প্লাটুন (প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন) পুরুনাবাজার এবং ধামনগরে মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দুটি কোম্পানি র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স (আরএএফ) পাঠানো হয়েছে, যার একটি ভদ্রকে এবং অপরটি ধামনগরে মোতায়েন করা হয়েছে। রবিবার ডিআইজি, জেলা কালেক্টর দিলীপ রাউতরায় এবং এসপি বরুণ গুন্তুপল্লির উপস্থিতিতে ফ্ল্যাগ মার্চ করা হয়।
জনসাধারণের প্রতি আহ্বান
প্রশাসন জনসাধারণের কাছে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে। ভদ্রক (bhadrak) এসপি মনোজ রাউত বলেন, “আমরা জনগণের কাছে অনুরোধ করছি, সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো ভুল তথ্যে বিশ্বাস না করে শান্তি বজায় রাখতে সহযোগিতা করুন।” শান্তি কমিটির সদস্যরা স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন, যাতে সম্প্রদায়গুলির মধ্যে সম্প্রীতি ফিরে আসে।
ভদ্রকের (bhadrak) এই ঘটনা আমাদের সামাজিক মাধ্যমের অপব্যবহার এবং তার ফলে সৃষ্ট উত্তেজনার বিষয়ে সতর্ক করে। ইন্টারনেট স্থগিতকরণের মতো পদক্ষেপ সাময়িকভাবে শান্তি বজায় রাখতে সাহায্য করলেও, দীর্ঘমেয়াদে সম্প্রদায়গুলির মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সহনশীলতা বৃদ্ধির প্রয়োজন। ওড়িশা সরকার এবং জেলা প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে, তবে এই ঘটনা আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দেয়।