মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান (ডিরেক্টর অফ ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স) তুলসী গাব্বার্ড (tulsi) শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে একটি চিঠি লিখে জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ঘটে যাওয়া জঙ্গি হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
তিনি এই হামলাকে “ভয়াবহ ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী হামলা” হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, এতে ২৬ জন হিন্দু নাগরিক নিহত হয়েছেন। গাব্বার্ড (tulsi) মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে ভারতের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করে বলেছেন, “আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি এবং এই জঘন্য হামলার জন্য দায়ীদের খুঁজে বের করতে আপনাদের সমর্থন করছি।”
পহেলগাঁও হামলার বিবরণ
২২ এপ্রিল ২০২৫, পহেলগাঁওয়ের বাইসারান মেডোতে সন্ত্রাসবাদীরা পর্যটকদের উপর এলোপাথাড়ি গুলি চালায়, যার ফলে ২৫ জন ভারতীয় এবং একজন বিদেশি নাগরিক নিহত হন। হামলাকারীরা শিকারদের ইসলামের প্রতি আনুগত্য প্রমাণ করতে বলেছিল, এবং এটি ধর্মীয় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হত্যাকাণ্ড হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
এই হামলার দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তান-ভিত্তিক লস্কর-ই-তৈবার একটি ছায়া সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)। তদন্তে প্রকাশ পেয়েছে, হামলার সঙ্গে পাকিস্তান এবং এর অবৈধভাবে দখলকৃত অঞ্চলের সংযোগ রয়েছে। এই ঘটনা কাশ্মীরে ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর সবচেয়ে মারাত্মক হামলা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ভারতের প্রতিক্রিয়া
বুধবার, ২৩ এপ্রিল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাপতিত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা বৈঠকে হামলার সীমান্তের ওপারের সংযোগ নোট করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, “এই হামলা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে সফলভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার এবং এর অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে অগ্রগতির প্রেক্ষাপটে ঘটেছে।”
মোদী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে ১৯৬০ সালের সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিতকরণ, পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের মান হ্রাস, ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ এবং ভারতীয় হাইকমিশনের সামরিক উপদেষ্টাদের বহিষ্কার। মোদী প্রতিজ্ঞা করেছেন, “ভারত সন্ত্রাসীদের এবং তাদের সমর্থকদের পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে খুঁজে বের করে অকল্পনীয় শাস্তি দেবে।”
পাকিস্তানের উদ্বেগ
ভারতের সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপের আশঙ্কায় পাকিস্তান ভারতীয় বিমানের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করেছে এবং সীমান্তে উচ্চ সতর্কতা জারি করেছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, পাকিস্তান দিনরাত বায়বীয় নজরদারি মিশন পরিচালনা করছে। পাকিস্তান শিমলা চুক্তি এবং অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্থগিত করেছে, বাণিজ্য বন্ধ করেছে এবং ভারতীয়দের জন্য সার্ক ভিসা ছাড়ের সুবিধা বাতিল করেছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, “সিন্ধু জল চুক্তির জলপ্রবাহ বন্ধ বা ডাইভার্ট করা হলে তা যুদ্ধের কাজ হিসেবে বিবেচিত হবে।”
ময়দানের ‘যুদ্ধে’ ভারতীয় মহিলা ব্রিগেডের কাছে পরাজিত পাকিস্তান!
তুলসী গাব্বার্ডের চিঠি ও মার্কিন সমর্থন (tulsi)
তুলসী গাব্বার্ড (tulsi), যিনি মার্কিন কংগ্রেসে ভারত-মার্কিন সম্পর্কের সমর্থক এবং ইন্ডিয়া ককাসের সহ-সভাপতি ছিলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী মোদীকে লেখা চিঠিতে এবং এক্স-এ পোস্টে বলেছেন, “আমরা পহেলগাঁওয়ে ২৬ জন হিন্দুকে লক্ষ্য করে সংঘটিত ভয়াবহ ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী হামলার পর ভারতের পাশে আছি।
যারা প্রিয়জন হারিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ভারতের সমস্ত মানুষের প্রতি আমার প্রার্থনা ও গভীর সমবেদনা (tulsi)।” তিনি আরও বলেন, “এই জঘন্য হামলার জন্য দায়ীদের খুঁজে বের করতে আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি (tulsi)।” মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মোদীর সঙ্গে ফোনে কথা বলে বলেছেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াবে।”
বৈশ্বিক নিন্দা ও সমর্থন
এই হামলার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী নিন্দা জানানো হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ছাড়াও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, “আমরা আশা করি হামলার সংগঠক ও অপরাধীরা তাদের প্রাপ্য শাস্তি পাবে।” তিনি রাশিয়ার ভারতের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় সহযোগিতা বাড়ানোর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
ইসরায়েলের নেতানিয়াহু, ফ্রান্সের ম্যাক্রোঁ, ইতালির মেলোনি, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, চীন, জাপান, শ্রীলঙ্কা এবং অন্যান্য দেশের নেতারা হামলার নিন্দা করে ভারতের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। ইসলামী বিশ্ব থেকেও সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান এবং জর্ডান শোক ও সংহতি প্রকাশ করেছে। মোদী হামলার সময় সৌদি আরবে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠকে ছিলেন।
ভারত-মার্কিন সম্পর্ক ও গাব্বার্ডের ভূমিকা
তুলসী গাব্বার্ডের ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে। তিনি ২০২৫ সালের মার্চ মাসে ভারতে সফরে এসে মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং রাইসিনা ডায়ালগে মূল বক্তৃতা দেন। তিনি ভারত-মার্কিন সম্পর্ক জোরদার করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন, বিশেষ করে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা, গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতায়। তাঁর এই চিঠি ভারতের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ় সমর্থনের প্রতিফলন।
পহেলগাঁও জঙ্গি হামলা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। তুলসী গাব্বার্ডের চিঠি এবং মার্কিন সমর্থন ভারতের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ব সম্প্রদায়ের নিন্দা ও সংহতি ভারতের অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে। মোদীর প্রতিজ্ঞা এবং পাকিস্তানের উদ্বেগ পরিস্থিতির গুরুত্ব তুলে ধরে। এই ঘটনা ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলবে।