অনুপ্রবেশের আড়ালে ফের দেশভাগের ছক: রাজ্যপাল

তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল আর এন রবি গত বৃহস্পতিবার দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক (Infiltration Conspiracy)ভাইস-রিগাল লজে আয়োজিত “সীমা বিমর্শ” নামক দুই দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে গুরুতর সতর্কবার্তা…

Infiltration Conspiracy

তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল আর এন রবি গত বৃহস্পতিবার দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক (Infiltration Conspiracy)ভাইস-রিগাল লজে আয়োজিত “সীমা বিমর্শ” নামক দুই দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে গুরুতর সতর্কবার্তা জারি করেছেন। তিনি বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য রাজ্যগুলিতে ব্যাপক মাত্রায় যে অনুপ্রবেশ ঘটছে।

তিনি আরও বলেছেন শুধুমাত্র জীবিকার সন্ধানে অভিবাসন নয়, বরং ভারতকে আরেকভাগে বিভাজনের লক্ষ্যে একটি “কৌশলগত” পরিকল্পনা। তিনি এই হুমকিকে গুরুতর আখ্যা দিয়ে বলেছেন, “কোনও সেনাবাহিনী এটি ঠেকাতে পারবে না। এটি ভারতের ঐক্য ও অখণ্ডতার প্রশ্ন।”রাজ্যপাল রবি জানিয়েছেন, স্বাধীনতার পর থেকে অবৈধ অভিবাসনের সমস্যা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিদ্যমান।

   

তিনি অভিযোগ করেছেন, স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে পরপর সরকারগুলি এই অঞ্চলকে একটি দূরবর্তী সীমান্ত হিসেবে বিবেচনা করেছে এবং এখানকার জনগণকে নিজেদের ভাগ্যের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “স্বাধীনতার পর আমরা আমাদের সীমান্ত সৈন্যদের হাতে ছেড়ে দিয়েছিলাম, এই ভেবে যে এটি দূরের এলাকা।

উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবৈধ অভিবাসন স্বাধীনতার পর থেকেই সবচেয়ে বড় সমস্যা। আমরা এই অঞ্চলের মানুষকে ভিন্ন বলে মনে করে তাদের একা ফেলে রেখেছিলাম।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, এই মানসিকতার কারণে স্বাধীনতার পর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উপজাতিদের সঙ্গে দেশের বাকি অংশের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়, যা স্বাধীনতার পূর্বে ছিল না।

রবি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)-এর ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, এই সংগঠন উত্তর-পূর্বাঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় জনগণের মধ্যে ঐক্য ও অন্তর্ভুক্তির বোধ জোরদার করার জন্য কাজ করে চলেছে। তিনি বলেন, “একটি গোষ্ঠী যারা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে উন্নতি ও অন্তর্ভুক্তির জন্য সবসময় কাজ করে এসেছে, তা হল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ। আমি আরএসএস-এর কর্মীদের বছরের পর বছর ধরে এমন ভালো কাজ করার জন্য ধন্যবাদ জানাই।”

সম্মেলনের সভাপতিত্বকারী দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য যোগেশ সিং এক বিতর্কিত মন্তব্য করে বলেন, ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘সারে জাহান সে আচ্ছা’ গানটি বাজানো বন্ধ করা উচিত, কারণ এর রচয়িতা কবি মুহাম্মদ ইকবাল হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে সাংস্কৃতিক অসঙ্গতির কথা বলেছিলেন।

তিনি বলেন, “দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমরা ইকবালকে পড়াব না। যিনি জিন্নাহকে মুসলিমদের সাংবিধানিক অধিকারের কথা না বলে হিন্দু-মুসলিম সাংস্কৃতিক অসঙ্গতির কথা বলতে পরামর্শ দিয়েছিলেন, তার কবিতা আমাদের পড়ানো উচিত নয়।”

তিনি আরও বলেন, ইকবালের এই যুক্তি সম্প্রতি পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরও পুনরাবৃত্তি করেছেন। তিনি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের ইকবালের রচনা পাঠ্যক্রম থেকে বাদ দেওয়ার কথা ভাবতে আহ্বান জানান।

Advertisements

যোগেশ সিং সীমান্ত নিরাপত্তা এবং জাতীয় সীমানা নিয়ে একাডেমিক বিতর্কের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়ে বলেন, “৮০০ বছর ধরে দাসত্বের শিকার হওয়া দেশে সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আমাদের অর্থনৈতিক উন্নতি ও নিরাপত্তা নির্ভর করে সুরক্ষিত সীমান্তের উপর।”

তিনি ১৯৪৭ সালের দেশভাগের উল্লেখ করে বলেন, এই ধরনের আলোচনা জনগণের জ্ঞান বৃদ্ধি করবে এবং তাদের মানসিকভাবে শক্তিশালী করবে। তিনি ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত সিন্ধু জল চুক্তির সমালোচনা করে বলেন, এই চুক্তিতে ভারতের স্বার্থের কথা বিবেচনা করা হয়নি, কারণ তিনটি নদীর ৮০ শতাংশ জল পাকিস্তানের হাতে দেওয়া হয়েছে। তিনি বর্তমান সরকারের এই চুক্তি স্থগিত করার পদক্ষেপের প্রশংসা করেন।

“সীমা বিমর্শ” সম্মেলনটি, যার থিম “অন্তঃসীমান্ত অনুপ্রবেশ: সামাজিক-অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও পরিবেশগত প্রভাব”, সীমা জাগরণ মঞ্চ, মতিলাল নেহরু কলেজ (সান্ধ্যকালীন) এবং দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা ও বিভাজন অধ্যয়ন কেন্দ্রের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত।

এই দুই দিনের হাইব্রিড ফরম্যাটের সম্মেলনে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও চেয়ারপার্সন, সরকারি কর্মকর্তা, বিদেশি প্রতিনিধি, সেনাবাহিনীর প্রবীণ সদস্য, ডিজিপি, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক এবং ১৫০-এর বেশি অংশগ্রহণকারী অংশ নিচ্ছেন।

বিরল ‘আর্থ ম্যাগনেট’-এর অভাবে বন্ধ ছিল Bajaj Chetak-এর উৎপাদন, সংকট কাটতেই ফের শুরু হল

এই সম্মেলনের মাধ্যমে সীমান্ত নিরাপত্তা ও জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার প্রত্যাশা করা হচ্ছে, যা ভারতের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নতুন দিশা প্রদান করতে পারে।