ইন্দোর: দেশজুড়ে চলছে আইসিসি মহিলা ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৫। অথচ এই উৎসবের মধ্যেই এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায় কেঁপে উঠেছিল ক্রিকেটপ্রেমী দেশ। ইন্দোরে দুই অস্ট্রেলীয় মহিলা ক্রিকেটারকে এক বাইক আরোহী প্রকাশ্য রাস্তায় শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে। ঘটনায় অভিযুক্তকে গ্রেফতার করলেও, এরপর মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রী কৈলাশ বিজয়বর্গীয়র মন্তব্যে আরও তীব্র বিতর্কের ঝড় উঠেছে রাজ্য রাজনীতিতে।
এই ঘটনায় ক্রীড়া জগৎ ও মহিলা সংগঠনগুলির মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লেও, এর মাঝেই মন্ত্রী কৈলাশ বিজয়বর্গীয়র বক্তব্যে নতুন বিতর্কের জন্ম হয়েছে। তিনি বলেন, “এই ঘটনার থেকে খেলোয়াড়দেরও শিক্ষা নেওয়া উচিত। আমরা যখন কোথাও যাই, তখন অন্তত স্থানীয় প্রশাসন বা নিরাপত্তারক্ষীদের জানাই।
কুর্ণুলের দুর্ঘটনায় গ্রেফতার বাস-চালক!
ক্রিকেটারদের জনপ্রিয়তা অনেক, তাই সাবধান হওয়া উচিত।” তিনি আরও বলেন, “যখন আমরা বিদেশে ফুটবল ম্যাচে যেতাম, তখন দেখেছি, ভিড়ের চাপে খেলোয়াড়দের জামাকাপড় ছিঁড়ে যায়। জনপ্রিয়তা অনেক বড় বিষয়, তাই নিজেদেরও সচেতন থাকতে হবে।”
মন্ত্রী বিজয়বর্গীয়র এই মন্তব্যেই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিরোধীরা। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা অরুণ যাদব বলেন, “এটি ঘৃণ্য মানসিকতার প্রকাশ। রাজ্যের অতিথিদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ সরকার এখন ভুক্তভোগীদেরই দোষারোপ করছে। এটি মহিলাদের প্রতি অসম্মানজনক মন্তব্য।”
তবে বিজেপি শিবিরের একাংশের দাবি, মন্ত্রীর বক্তব্যকে বিকৃত করে উপস্থাপন করা হচ্ছে। তাঁদের মতে, তিনি কেবল সতর্ক থাকার বার্তা দিয়েছেন। কিন্তু সমাজকর্মী ও মহিলা অধিকার কর্মীরা বলছেন, এই ধরনের বক্তব্যেই দায় এড়ানো হয় এবং নারীর উপর অপরাধের দায় ভুক্তভোগীর কাঁধে চাপানো হয়।
এর আগে একাধিকবার মহিলাদের পোশাক ও আচরণ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন বিজয়বর্গীয়। গত বছর এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, “আমি ছোট পোশাক পরা মেয়েদের পছন্দ করি না। পশ্চিমে যেটাকে সৌন্দর্য বলা হয়, ভারতে তা শালীনতার সঙ্গে যায় না।” এমনকি একবার তিনি দাবি করেন, “মেয়েরা কখনও কখনও আমার সঙ্গে ছবি তুলতে আসে, আমি বলি বেটা, পরের বার ঠিকঠাক পোশাক পরে এসো।”
২০২২ সালে হনুমান জন্মজয়ন্তীর মঞ্চ থেকেও তিনি বলেছিলেন, “আজকাল মেয়েরা এমন পোশাক পরে যে তারা দেবীর মতো নয়, শূর্পণখার মতো লাগে।” এই পরপর মন্তব্যে বিরোধী শিবিরের দাবি, “এটি কেবল একজন মন্ত্রীর ব্যক্তিগত মত নয়, বরং শাসক দলের নারীসমাজ সম্পর্কে বিকৃত মনোভাবের প্রতিফলন।”
ইন্দোরের এই ঘটনার পর আন্তর্জাতিক মহলও ভারতের মহিলা নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। বিশ্বকাপের সময় এমন ঘটনার ফলে ভারতীয় আতিথেয়তা প্রশ্নের মুখে। মহিলাদের সুরক্ষা, প্রশাসনিক তৎপরতা এবং রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা এই তিনটি ক্ষেত্রেই ব্যর্থতার অভিযোগ উঠেছে মধ্যপ্রদেশ সরকারের বিরুদ্ধে।


