নয়াদিল্লি, ৮ ডিসেম্বর: ইন্ডিগো এয়ারলাইন্সে বিগত কয়েক দিন ধরে একাধিক প্রযুক্তিগত সমস্যা,(IndiGo crisis) বিলম্ব এবং হঠাৎ ফ্লাইট বাতিল সব মিলিয়ে দেশজুড়ে হাজার হাজার যাত্রীর ভোগান্তি তুঙ্গে। এরই প্রেক্ষিতে আজ রাজ্যসভায় উদ্বেগ প্রকাশ করে গুরুত্বপূর্ণ বিবৃতি দিলেন কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী রাম মোহন নাইডু কিনজারাপু।
মন্ত্রী জানান, সরকারের পক্ষ থেকে যাত্রী নিরাপত্তা এবং সুবিধাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে, এবং এই ধরনের পরিস্থিতিতে এয়ারলাইন্সগুলোর জন্য কঠোর Civil Aviation Requirements (CARs) কার্যকর রয়েছে, যা প্রতিটি সংস্থাকেই বাধ্যতামূলকভাবে মেনে চলতে হবে। রাম মোহন নাইডুর কথায়, “যাত্রীদের যে অসুবিধা হয়েছে বিলম্ব, বাতিল কিংবা সেবা ব্যাঘাত তার জন্য কঠোর CAR নির্দেশিকা আছে। এয়ারলাইন অপারেটরদের সেগুলো সম্পূর্ণভাবে মানতেই হবে।”
অভিনেত্রী ধর্ষণ মামলায় ৮ বছর পর বেকসুর খালাস অভিযুক্ত অভিনেতা
তিনি আরও জানান, ইন্ডিগোর সফটওয়্যার বিভ্রাট সংক্রান্ত অভিযোগের ওপর ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু হয়েছে। তাঁর কথায়, “এয়ারলাইন সেক্টর অত্যন্ত দ্রুত পরিবর্তনশীল। প্রতিনিয়ত প্রযুক্তির আপগ্রেডেশন হয়। সফটওয়্যার ইস্যু নিয়ে একটি ইনকোয়ারি করা হয়েছে।” হঠাৎ বিলম্ব, বাতিল, আর অপেক্ষার অনিশ্চয়তা যাত্রীদের ক্ষোভ বাড়ছে
দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরে গত দুই দিনে চিত্র ছিল এক: দীর্ঘ সারি, ডিসপ্লে বোর্ডে ক্রমাগত ‘Delayed’ বা ‘Cancelled’ নোটিশ, আর অপেক্ষমাণ যাত্রীদের হতাশ মুখ। বহু সফর বাতিল হয়ে যাওয়ায় ব্যবসায়িক যাত্রা, চিকিৎসাজনিত অ্যাপয়েন্টমেন্ট এবং পারিবারিক জরুরি কাজ সবকিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একজন যাত্রী, যিনি দিল্লি থেকে গুয়াহাটি যাওয়ার কথা ছিল, বলেছেন “চার ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর জানতে পারলাম ফ্লাইট বাতিল। হোটেল বুকিং নষ্ট, পরের মিটিং নষ্ট। ক্ষতিপূরণের কথাও জানাতে পারে না কেউ।”
যাত্রীদের ক্ষোভের মুখে এয়ারলাইন সংস্থাগুলোর ওপর চাপ বেড়েছে কিন্তু মন্ত্রীর বার্তায় পরিষ্কার, এই নিয়ম না মানলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা থেকে শুরু করে জরিমানাও আসতে পারে। মন্ত্রী রাজ্যসভায় জোর দিয়ে বলেন, ভারতের বিমান পরিবহন ব্যবস্থাকে বিশ্বের সেরা মানে নিয়ে যেতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। “দেশের এভিয়েশন সেক্টরের জন্য আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট—global standards বজায় রাখা এবং উন্নতি করা। যাত্রী নিরাপত্তা, প্রযুক্তি উন্নয়ন, এবং সেবা মান সবক্ষেত্রেই আমরা উন্নত মান চাই,” বলেন তিনি।
এয়ারলাইনগুলোর সফটওয়্যার ম্যানেজমেন্ট, সিস্টেম ব্যাকআপ, রিয়েল-টাইম মনিটরিং এই সব ক্ষেত্রে নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে বলে সূত্রে জানা গেছে। ভারতের বৃহত্তম বিমান সংস্থা ইন্ডিগোর হঠাৎ ব্যাঘাতে প্রায় সব এয়ার টার্মিনালে ব্যাপক স্নায়ুচাপ তৈরি হয়েছে। গন্তব্য পরিবর্তন, বিকল্প ফ্লাইটে যাত্রী সজ্জা, খাবার ও থাকার ক্ষতিপূরণ সবকিছুই সমন্বয় করতে হিমশিম খাচ্ছে এয়ারলাইন কর্তৃপক্ষ।
একজন এভিয়েশন বিশ্লেষক বলেন “ইন্ডিগোর মতো বড় সংস্থার সফটওয়্যার ব্যর্থতা পুরো নেটওয়ার্ককে প্রভাবিত করে। শৃঙ্খলাবদ্ধ সেক্টরে একটি ভুল মানেই হাজারো মানুষের দিনের পরিকল্পনা ভেঙে পড়া।” মন্ত্রীর বক্তব্যে বোঝা গেল, যাত্রী অধিকারের ক্ষেত্রে সরকার কোনোভাবেই শিথিল হতে চাইছে না।
রিপোর্ট এসেছে DGCA ইতিমধ্যেই এয়ারলাইন অপারেটরদের সঙ্গে জরুরি মিটিং করছে এবং ভবিষ্যতে এমন ব্যাঘাত রোধে অতিরিক্ত গাইডলাইন তৈরি হতে পারে। দেশের বিমানচলাচল ব্যবস্থায় প্রযুক্তির ওপর নির্ভরতা যত বাড়ছে, ততই সফটওয়্যার ব্যর্থতা বা সার্ভার ডাউন—এই ধরনের সমস্যার প্রভাব বাড়ছে। তবে সরকারের বার্তা স্পষ্ট—যাত্রী নিরাপত্তা এবং সুবিধাই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।

