নয়াদিল্লি: বর্তমানে ভারতের সব থেকে গরিব মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে পরিচিত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। সাম্প্রতিক অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্ম (এডিআর)-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ মাত্র ১৫.৩৮ লক্ষ টাকা, যার পুরোটা নগদ অর্থ বা অস্থাবর সম্পত্তি। জমি, বাড়ি বা অন্য কোনো স্থাবর সম্পত্তি তাঁর নেই।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরাবরই সাদামাটা জীবনযাপন পছন্দ করেন। তিনি সরকারি বেতন পান না এবং সাংসদ পদে থাকা অবস্থায় প্রাপ্ত পেনশনও গ্রহণ করেন না। তার আয়ের প্রধান উৎস হলো নিজের লেখা বই বিক্রি এবং গানের রয়্যালটি। এডিআর-এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই সাদামাটা জীবনযাপন এবং সীমিত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও মমতা দেশের অন্যান্য মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যে আলাদা স্থানে আছেন।
বর্তমান সময়ে দেশের ৩০ জন মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা-রাই আছেন যাদের সম্পদ ১ কোটি টাকার নিচে। ওমর আবদুল্লার মোট সম্পত্তি ৫৫.২০ লক্ষ টাকা। অন্য সব মুখ্যমন্ত্রীরা কোটিপতি। দেশের সবচেয়ে ধনী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে উঠে এসেছে অন্ধ্রপ্রদেশের এন চন্দ্রবাবু নায়ডু। তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৯৩১ কোটি টাকা, যা দেশের সমস্ত মুখ্যমন্ত্রীর সম্পদের মোট ৫৭ শতাংশের সমান।
ধনীর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন অরুণাচলের মুখ্যমন্ত্রী প্রেমা খান্ডু, যাঁর মোট সম্পত্তি ৩৩২ কোটি টাকা। তৃতীয় স্থানে আছেন কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া, যাঁর একক সম্পত্তি ৫২ কোটি টাকা। এ তথ্যগুলো দেশের মুখ্যমন্ত্রীরা নিজেদের রাজ্যের গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে জমা দেওয়া হলফনামার ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে।
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পদ সংক্রান্ত তথ্য ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ভবানীপুর উপনির্বাচনের আগে নির্বাচনে জমা দেওয়া হলফনামার ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় যে, মমতা সাধারণ মানুষের মতো জীবন যাপন করতে পছন্দ করেন এবং সম্পদের দিক থেকে অন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের তুলনায় অনেক কম সুবিধাপ্রাপ্ত।
সাধারণভাবে দেখা যায়, ভারতের মুখ্যমন্ত্রীরা সম্পদের ক্ষেত্রে বড় ধরনের বৈচিত্র্য দেখাচ্ছেন। কেউ কয়েক লাখ টাকার সম্পদ নিয়ে সাদামাটা জীবনযাপন করছেন, আবার কেউ কয়েক শত কোটি টাকার মালিক। এই রিপোর্ট দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সম্পদ স্বচ্ছতা এবং সাধারণ নাগরিকদের তথ্যগত সচেতনতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেশের সবচেয়ে গরিব মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে শুধুমাত্র অর্থের পরিমাণের ভিত্তিতে নয়, বরং তাঁর জীবনধারা, বেতন না নেওয়া এবং নিজের আয়ের উৎসকে স্বচ্ছ রাখার কারণে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই ধরনের জীবনযাপন সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা এবং রাজনৈতিক নৈতিকতা প্রদর্শনের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।
সারসংক্ষেপে বলা যায়, ভারতের মুখ্যমন্ত্রীরা সম্পদের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভিন্নতা দেখাচ্ছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সাদামাটা জীবন এবং সীমিত সম্পদ দিয়ে অন্যদের তুলনায় আলাদা পরিচয় গড়েছেন। আর এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে এডিআর রিপোর্টে, যা দেশের নাগরিকদের জন্য রাজনৈতিক স্বচ্ছতার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।