ভারতের মহাকাশ গবেষকদের বেতন জানলে অবাক হবেন!

ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো (ISRO) গোটা বিশ্বের কাছে এক বিস্ময়ের নাম। চাঁদে, মঙ্গলে সফল অভিযানের পাশাপাশি স্বল্প বাজেটে অসাধারণ সব প্রকল্প সম্পন্ন করে আন্তর্জাতিক…

India’s ISRO Scientists Earn

ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো (ISRO) গোটা বিশ্বের কাছে এক বিস্ময়ের নাম। চাঁদে, মঙ্গলে সফল অভিযানের পাশাপাশি স্বল্প বাজেটে অসাধারণ সব প্রকল্প সম্পন্ন করে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত হয়েছে ইসরো। কিন্তু এত কৃতিত্বের পরেও ইসরো বিজ্ঞানীদের বেতন কত জানেন? শুনলে আপনি অবাক হবেন!

প্রথমেই জানা দরকার, ইসরোর কর্মীদের মধ্যে মাত্র ২ শতাংশ আইআইটি (IIT) পাস। বাকি ৯৮ শতাংশই দেশের অন্যান্য ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণ বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদ। অথচ তাঁদের মেধা, নিষ্ঠা ও পরিশ্রম দেশের মহাকাশ গবেষণাকে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে।

   

কত বেতন পান ইসরোর বিজ্ঞানীরা?
ইসরোর একজন নবীন বিজ্ঞানীর প্রাথমিক বেতন মাসে মাত্র ₹৫৬,১০০ (লেভেল ১০ পে স্কেল অনুযায়ী)। এর সঙ্গে ডিএ (Dearness Allowance), এইচআরএ (House Rent Allowance), এবং অন্যান্য কিছু ভাতা যুক্ত হয়, তবে তা সরকারি নিয়মে নির্ধারিত। তবুও একজন অভিজ্ঞ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার বা কর্পোরেট সেক্টরের সমপদস্থ কর্মচারীর তুলনায় এই বেতন বেশ কম।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মহাকাশ গবেষকদের বেতনের তুলনায়ও ভারতীয় বিজ্ঞানীরা অনেক কম পারিশ্রমিক পান। উদাহরণস্বরূপ, আমেরিকার নাসা-তে একজন জুনিয়র রিসার্চারের বার্ষিক বেতন প্রায় ₹৬০–৭০ লক্ষ টাকার সমান। সেখানে ভারতের একজন বিজ্ঞানী বছরে প্রায় ₹৮–৯ লক্ষ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ।

ইসরো প্রধানের বেতন
এত বড় সংস্থা পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ইসরো-র চেয়ারম্যানের বেতনও খুব বেশি নয়। বর্তমান হিসাব অনুযায়ী, ইসরো প্রধানের বেতন প্রায় ₹২.৫ লক্ষ টাকা মাসিক। এটি অনেকের কাছেই বিস্ময়কর, কারণ একটি বহুজাতিক কোম্পানির সিইও বা ম্যানেজিং ডিরেক্টরের মাসিক বেতন যেখানে ₹২০-৩০ লক্ষ ছুঁয়েছে, সেখানে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক সংস্থার প্রধানের বেতন এত কম কেন?

কেন এত কম বেতন?
ইসরো ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন একটি সংস্থা, এবং এটি পুরোপুরি সরকারি বেতন কাঠামোর মধ্যেই পরিচালিত হয়। তাই বেতন নির্ধারণেও থাকে সরকারি বিধি-বিধান। দেশের অন্যান্য কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরির মতোই এখানে পে কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বেতন বৃদ্ধি পায়।

Advertisements

কিন্তু তারপরেও বিজ্ঞানীরা ইসরো-তেই থাকতে চান কেন?
এই প্রশ্নের উত্তরে অনেক বিজ্ঞানী বলেন, “বেতন কম হলেও দেশের জন্য কিছু করার গর্বই আমাদের সবচেয়ে বড় পারিশ্রমিক।” ইসরো-তে কাজ মানে এক গভীর দেশপ্রেম, গবেষণার অবারিত সুযোগ এবং ইতিহাস গড়ার অংশীদার হওয়ার স্বপ্ন।

অনেকে মনে করেন, কর্পোরেট জগতের মোটা বেতন ছেড়ে ইসরোতে কাজ করার মানে আত্মতৃপ্তির পথে হাঁটা। কারণ, এই সংস্থার প্রতিটি মিশনের সাফল্যে গোটা দেশের মাথা উঁচু হয়।

ভারতের মহাকাশ গবেষণার পেছনে থাকা মস্তিষ্কগুলো যে কতটা নীরবে, পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তা আমরা প্রায়শই ভুলে যাই। তাঁদের বেতন শুনে অবাক লাগলেও, তাঁদের অবদান নিঃসন্দেহে অমূল্য।

সময় এসেছে, যখন শুধু প্রশংসা নয়, এই বিজ্ঞানীদের উপযুক্ত আর্থিক স্বীকৃতিও দেওয়া উচিত — কারণ মহাকাশে পৌঁছনো শুধু প্রযুক্তি নয়, এটি দেশের গর্বের প্রতীক।