ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (DRDO) আবার একবার প্রমাণ করেছে তার প্রযুক্তিগত শক্তি ও সামরিক ক্ষমতা। গতকাল, ১৭ জুলাই ২০২৫-এ, উড়িষার চান্দীপুরে অবস্থিত ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট রেঞ্জ থেকে ভারত সফলভাবে দুটি ব্যালিস্টিক মিসাইল—পৃথিবী-২ এবং অগ্নি-১—পরীক্ষা করেছে। এই পরীক্ষা সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে একটি বড় কৌশলগত কাঠামোর অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা পাকিস্তানের জন্য একটি স্পষ্ট সতর্কবার্তা হিসেবে গৃহীত হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনার পর বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পেয়েছে, যেখানে কেউ কেউ বলছেন, “পাকিস্তান আজ রাতে ঘুমোতে পারবে না।”
পৃথিবী-২ একটি ট্যাকটিকাল সারফেস-টু-সারফেস শর্ট-রেঞ্জ ব্যালিস্টিক মিসাইল, যার পরিসীমা প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার। অন্যদিকে, অগ্নি-১ একটি মাঝারি-রেঞ্জ ব্যালিস্টিক মিসাইল, যার পরিসীমা ৭০০ থেকে ১,২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত। এই মিসাইলগুলো নিউক্লিয়ার ক্ষমতা সম্পন্ন, যা ভারতের স্ট্র্যাটেজিক ফোর্সেস কমান্ডের হাতে রয়েছে। ডিআরডিও-এর একজন সিনিয়র কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “এই পরীক্ষা আমাদের মিসাইল ফোর্সেসের যুদ্ধ প্রস্তুতি যাচাই করার জন্য পরিচালিত হয়েছে। ফলাফল অত্যন্ত সন্তোষজনক।” এই সফলতা ভারতের জন্য একটি গর্বের বিষয় হলেও, এটি পাকিস্তানের সাথে চলমান সীমান্তবরাবরী তনাবকে আরও তীব্র করতে পারে।
ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে এই পরীক্ষার গুরুত্ব
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা শত্রুতা এবং কাশ্মীর নিয়ে বিবাদের কারণে দুই দেশের মধ্যে সামরিক প্রস্তুতি সবসময় চূড়ান্ত স্তরে থাকে। ২০১৯ সালে ঘটে যাওয়া বালাকোট বিমান হামলা ও তার পরবর্তী সংঘর্ষের পর থেকে ভারত তার মিসাইল প্রযুক্তি উন্নয়নে আরও গুরুত্ব আরোপ করেছে। এই পরীক্ষা ঠিক তখন হয়েছে, যখন দুই দেশের মধ্যে সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২৫ সালের মে মাসে ঘটে যাওয়া পাহালগাম হামলার পর থেকে ভারত পাকিস্তানের উপর গোয়েন্দা কার্যক্রম ও সীমান্ত অতিক্রমের অভিযোগ জানিয়ে এসেছে, যা এই পরীক্ষার পটভূমিকা হতে পারে।
চান্দীপুরের ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট রেঞ্জ ১৯৯৬ সাল থেকে মিসাইল পরীক্ষার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে। এই কেন্দ্রে সর্বশেষ প্রযুক্তির মাধ্যমে মিসাইলের গতি, পরিসীমা এবং নির্ভুলতা যাচাই করা হয়। ২০২৩ সালে দ্য হিন্দু পত্রিকায় প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, পৃথিবী-২ ও অগ্নি-১-এর সফল পরীক্ষা ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করেছে।
সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনার পর সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য দেখা গেছে। ইন্ডিয়া ওয়ার জোন নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা হয়েছে, “পাকিস্তান আজ রাতে ঘুমোতে পারবে না, ভারত পৃথিবী-২ ও অগ্নি-১ মিসাইল পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন করেছে।” এর উত্তরে পাকিস্তানী ব্যবহারকারীরা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। একজন লিখেছেন, “আমাদের সাহসী সেনাবাহিনী জেগে আছে, আমরা ঘুমোবো ইনশাআল্লাহ।” অন্যদিকে, ভারতীয় ব্যবহারকারীরা এই পরীক্ষাকে পাকিস্তানের উপর চাপ সৃষ্টির হিসেবে দেখছেন।
তবে, এই পরীক্ষার ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের মিসাইল পরীক্ষা দুই দেশের মধ্যে সামরিক প্রতিযোগিতাকে আরও তীব্র করতে পারে। ইতিহাসে দেখা গেছে, ১৯৮৬-৮৭ সালে ভারতের ব্রাসট্যাকস অপারেশনের পর পাকিস্তান যুদ্ধের ভয়ে সেনাবাহিনী সীমান্তে স্থানান্তর করেছিল।
ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
ভারতের এই সফলতা তার প্রযুক্তিগত উন্নয়নের পরিচয় দেয়, তবে এর ফলে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে জটিলতা বাড়তে পারে। পাকিস্তান তার নিজস্ব মিসাইল প্রযুক্তি উন্নয়নে ব্যস্ত, যেমন ফাতেহ-১ মিসাইল, যা সাম্প্রতিক বছরে পরীক্ষা করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বাড়তে পারে, যা অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করবে।
অথচ, ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে এই পরীক্ষা তার সীমানা রক্ষার জন্য একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। ডিআরডিও-এর অধীনস্থ বিজ্ঞানীদের কঠোর পরিশ্রম ও উদ্ভাবনের ফলেই এই সফলতা সম্ভব হয়েছে। ভবিষ্যতে ভারত আরও উন্নত মিসাইল প্রযুক্তি উন্নয়নে কাজ করছে, যা এই অঞ্চলে তার সামরিক সামরিক প্রভাব বাড়াতে সাহায্য করবে।
সাধারণ মানুষের কাছে এই ঘটনা গর্বের, তবে এর ফলে যুদ্ধের ভয়ও কম নয়। দুই দেশের নেতৃত্বের উপর এখন নির্ভর করছে, কীভাবে এই তনাব থেকে শান্তির পথে ফিরে আসা যায়। ভারতের এই যুগান্তকারী পদক্ষেপ পাকিস্তানের ঘুম ছোটাতে পারে, কিন্তু এর ফলাফল কতদূর গুরুতর হবে, তা সময়ই বলবে।