হিমাচলপ্রদেশে পাক চর গ্রেফতার, পরিচয় জানলে অবাক হবেন

হিমাচলপ্রদেশে পাক গুপ্তচর (Pakistani Spy) সন্দেহে এক যুবককে গ্রেফতার করল পুলিশ। ওই ব্যক্তির নাম অভিষেক, যিনি হিমাচলেরই দেহরা এলাকার বাসিন্দা। এমন একজন ভারতীয় নাগরিক, যিনি…

Indian Youth Arrested as Suspected Pakistani Spy in Himachal Pradesh

হিমাচলপ্রদেশে পাক গুপ্তচর (Pakistani Spy) সন্দেহে এক যুবককে গ্রেফতার করল পুলিশ। ওই ব্যক্তির নাম অভিষেক, যিনি হিমাচলেরই দেহরা এলাকার বাসিন্দা। এমন একজন ভারতীয় নাগরিক, যিনি দীর্ঘদিন ধরেই পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করে আসছিলেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের দাবি, এই ব্যক্তি বিভিন্ন সংবেদনশীল তথ্য পাকিস্তানের কাছে পাচার করছিলেন।

বুধবার কাংড়া জেলার উনা-কাংড়া সীমান্তবর্তী এলাকায়, শ্রীমাতা চিন্তাপূর্ণী মন্দির থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। দেহরা সিটি পুলিশের এসপি ময়ঙ্ক চৌধুরী জানান, “গোপন তথ্যের ভিত্তিতে আমরা অভিযানে নেমেছিলাম এবং সফলভাবে অভিযুক্তকে পাকড়াও করা হয়েছে। তাঁর মোবাইল ফোন থেকে গুপ্তচরবৃত্তির একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।”

   

এসপি আরও জানান, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (Bharatiya Nyaya Sanhita)-এর ধারা ১৫২-এর অধীনে মামলা রুজু করা হয়েছে। তাঁকে বৃহস্পতিবার আদালতে তোলা হবে। পাশাপাশি, তার মোবাইল ফোনটি ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে, যাতে আরও তথ্য উঠে আসে।

পরিচয়েই চমক
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, অভিযুক্ত অভিষেক স্থানীয়দের কাছে একজন সাধারণ যুবক হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। কোনও রাজনৈতিক বা উগ্রপন্থী সংগঠনের সঙ্গে তাঁর প্রত্যক্ষ যোগাযোগের প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিষেক বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি ও যোগাযোগ যন্ত্র সম্পর্কে ভাল জানতেন এবং ফোন ও ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহারেও দক্ষ ছিলেন।

পুলিশের ধারণা, এই প্রযুক্তিগত জ্ঞানকে কাজে লাগিয়েই তিনি ভারতের সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা কাঠামো সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে পাকিস্তানে পাচার করছিলেন। ঠিক কী ধরনের তথ্য পাঠানো হয়েছে, তা নিয়ে তদন্ত এখনও চলছে।

পাক চরের নেটওয়ার্ক?
এই গ্রেফতারির পর হিমাচলপ্রদেশে পাক গুপ্তচর চক্রের বিস্তৃতি নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিষেক একা নয়। তার সঙ্গে আরও কিছু লোক যোগাযোগ রাখত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তদন্তকারীরা এখন তার কল রেকর্ড, হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট এবং অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম খতিয়ে দেখছেন।

Advertisements

বিশেষজ্ঞদের মতে, সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলিতে পাক গুপ্তচরদের সক্রিয়তা নতুন কিছু নয়, তবে একেবারে নিজের রাজ্যের বাসিন্দা হয়ে এমন কার্যকলাপ চালানো বেশ বিপজ্জনক ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশেষ করে যখন দেশের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসবাদের হুমকি ও বিদেশি গুপ্তচর চক্রের সক্রিয়তা নিয়ে বারবার সতর্কতা জারি হচ্ছে।

প্রশাসনের সতর্ক বার্তা
এই ঘটনার পর হিমাচলপ্রদেশ প্রশাসন নাগরিকদের প্রতি সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে। সন্দেহভাজন কোনও কার্যকলাপ চোখে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে। এসপি চৌধুরী বলেন, “জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে আমরা কোনও রকম গাফিলতি সহ্য করব না। দেশের প্রতি দায়িত্ব পালনে সাধারণ মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন।”

এই ঘটনা প্রমাণ করে, পাকিস্তানি গুপ্তচর চক্র কতটা গভীরভাবে ভারতের ভিতরে প্রবেশ করেছে এবং স্থানীয়দের ব্যবহার করেই তথ্য পাচারের ছক কষছে। অভিষেকের মতো ভারতীয় নাগরিকেরা এই ষড়যন্ত্রে জড়িয়ে পড়ছেন—এটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

তদন্ত চলছে পুরোদমে, এবং পুলিশ আশাবাদী আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে আসবে যা পাকিস্তানি গুপ্তচর চক্রের পর্দাফাঁস করবে। ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোনও ফাঁক রাখা যাবে না—এই বার্তাই যেন আবারও উঠে এল হিমাচলপ্রদেশের এই ঘটনায়।