সিঙ্গাপুরে একটি মর্মান্তিক ঘটনায় ২২ বছর বয়সী ভারতীয় ছাত্র (Indian Student) লেঘা পাওয়ানকে ৩৫ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তিনি মাতাল অবস্থায় একজন স্বদেশী ভারতীয় নাগরিক জসবীর সিংকে নদীতে ঠেলে দেওয়ার কারণে তার মৃত্যুর জন্য দায়ী বলে অভিযুক্ত হয়েছেন। গত বছর ৩০ জুন রাতে ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় লেঘা পাওয়ান গুরুতর শারীরিক ক্ষতি করার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
প্রাথমিকভাবে তার বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ আনা হয়েছিল, যা পরে কমিয়ে গুরুতর ক্ষতির অভিযোগে রূপান্তরিত হয়। আরেকটি অভিযোগ বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এই ঘটনার খবর চ্যানেল নিউজ এশিয়ার একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।৩৩ বছর বয়সী জসবীর সিং ছিলেন একজন নির্মাণ শ্রমিক, যিনি ভারতে তাঁর স্ত্রী এবং দুই ছোট সন্তানের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন।
আদালতে শোনানো হয়েছে যে ঘটনার রাতে লেঘা এবং জসবীর উভয়েই মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। ঘটনাটি ঘটেছিল সিঙ্গাপুরের জনপ্রিয় নদীতীরবর্তী বিনোদন এলাকা ক্লার্ক কোয়েতে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, লেঘা তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে ক্লার্ক কোয়ের কাছে প্যারাডক্স সিঙ্গাপুর মার্চেন্ট কোর্ট হোটেলের সামনে মদ্যপান করছিলেন। এ সময় তিনি দুই ক্যান বিয়ার পান করেন এবং একটি তর্কের জেরে এক মহিলার চুল টানেন, যার জন্য তাঁর বন্ধুরা তাঁকে সংযত করেন।
রাত ১০:১০ নাগাদ জসবীর সিং, যিনি তাঁর মায়ের মৃত্যুর পর থেকে অতিরিক্ত মদ্যপান করছিলেন, একটি ল্যাম্পপোস্ট ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এই সময় লেঘা তাঁর কাছে গিয়ে তাঁকে নদীতে ঠেলে দেন।ঘটনার পরপরই একটি দম্পতি বিপদ সংকেত দেন, এবং উদ্ধারকারী ডুবুরিরা কয়েক ঘণ্টা পর জসবীরের মৃতদেহ উদ্ধার করেন।
উপ-পাবলিক প্রসিকিউটর জিয়ং সিউ ইয়িন আদালতে বলেন, লেঘা জানতেন যে জসবীর মাতাল অবস্থায় ছিলেন এবং তাঁর ধাক্কা দেওয়ার ফলে গুরুতর ক্ষতি হওয়া সম্ভব ছিল। তিনি আরও উল্লেখ করেন, লেঘা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন এবং ভুক্তভোগীকে সাহায্য করেননি। প্রতিরক্ষা আইনজীবী সিমরান কৌর সান্ধু ৩০ মাসের সাজার জন্য আবেদন করেন, যুক্তি দিয়ে বলেন যে কোনও অস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি এবং ধাক্কাটি ছিল “সাধারণ ধাক্কা”, যা শরীরের কোনও দুর্বল অংশকে লক্ষ্য করে দেওয়া হয়নি।
তবে, আদালত ৩৫ মাসের কারাদণ্ডের রায় দিয়েছে। গুরুতর ক্ষতির জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের জেল এবং ১০,০০০ সিঙ্গাপুর ডলার জরিমানার বিধান রয়েছে।এই ঘটনা ভারতীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। জসবীর সিংয়ের পরিবার, যারা তাঁর উপর নির্ভরশীল ছিল, এই ঘটনায় গভীর শোকাহত।
লেঘা পাওয়ান, যিনি সিঙ্গাপুরের বার্মিংহাম অ্যাকাডেমিতে পড়াশোনা করছিলেন, ঘটনার পরদিন সকালে গ্রেপ্তার হন। তাঁর এই কাজকে আদালত অপ্রত্যাশিত এবং বেপরোয়া হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “একটি মুহূর্তের বেপরোয়া সিদ্ধান্ত একটি পরিবারকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
২০২৬-এ বাংলায় ফের ক্ষমতায় তৃণমূল, দিল্লি দখলের বার্তা মমতার
এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।” আরেকজন লিখেছেন, “মদ্যপানের পরিণতি কতটা ভয়াবহ হতে পারে, এই ঘটনা তার প্রমাণ।”এই ঘটনা সিঙ্গাপুরে মদ্যপান এবং জননিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। ক্লার্ক কোয়ের মতো জনপ্রিয় এলাকায় এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে আরও কঠোর নজরদারি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এই ঘটনা ভারতীয় ছাত্র এবং শ্রমিক সম্প্রদায়ের জন্যও একটি সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করছে, যাতে তারা বিদেশে থাকাকালীন আরও সতর্ক থাকেন।