পুঞ্চ জেলার কৃষ্ণা ঘাটি সেক্টরে নিয়ন্ত্রণ রেখা (LoC) বরাবর পাকিস্তানি সেনার গোলাবর্ষণে (Pakistani Firing) ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক জওয়ান শহিদ হয়েছেন। শহিদ জওয়ানের নাম দিনেশ কুমার। তিনি হরিয়ানার পালওয়াল জেলার বাসিন্দা ছিলেন। এই ঘটনায় পাকিস্তানি সেনার গোলাবর্ষণে দিনেশ কুমার গুরুতরভাবে আহত হন। তাকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বৃহস্পতিবার, শহিদ জওয়ানের পার্থিব দেহ তাঁর নিজ জেলা হরিয়ানার পালওয়ালে পাঠানো হবে।
এই ঘটনা ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনার আরেকটি দৃষ্টান্ত। পাকিস্তানের এই আগ্রাসী কার্যকলাপের ফলে সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসকারী বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। দিনেশ কুমারের শহিদ হওয়ার খবর তাঁর পরিবার এবং গ্রামবাসীদের মধ্যে গভীর শোকের ছায়া ফেলেছে। তিনি দেশের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন, যা তাঁর সাহস এবং দেশপ্রেমের এক উজ্জ্বল নিদর্শন।
সীমান্তবর্তী গ্রামগুলি খালি করল প্রশাসন
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষিতে সাম্বা জেলা প্রশাসন বুধবার সন্ধ্যায় সীমান্তবর্তী গ্রামগুলি খালি করার নির্দেশ জারি করে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সন্ধ্যা চারটার দিকে ঘোষণা করা হয় যে সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত গ্রামের বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হবে। এই নির্দেশের ফলে বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা তাদের বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে স্থানান্তরিত হয়েছেন।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে গ্রামগুলির বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে বাইনগ্লাড, ফকিরা চক, সদোহ, চক সদা, চক দুলমা, সধওয়াল, জরাই, মঙ্গুচক, দোলিয়ান, চচওয়াল, চিল্লিয়ারি, খোড়া, রিগাল, সুচেতগড় এবং কুল্লিয়ান। এই গ্রামগুলি সীমান্তের ডিচের কাছাকাছি অবস্থিত, যার ফলে এখানকার বাসিন্দারা পাকিস্তানি গোলাবর্ষণের ঝুঁকির মুখে রয়েছেন। প্রশাসনের এই পদক্ষেপ বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য গৃহীত হয়েছে।
উত্তেজনার পটভূমি
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর উত্তেজনা নতুন কিছু নয়। সময়ে সময়ে পাকিস্তানি সেনার অকারণ গোলাবর্ষণের ফলে ভারতীয় সেনা এবং বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এই ধরনের ঘটনা শুধুমাত্র সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসকারী মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে না, বরং দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ককেও আরও জটিল করে তোলে। দিনেশ কুমারের শহিদ হওয়ার ঘটনা এই উত্তেজনার একটি মর্মান্তিক ফলাফল।
শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা
দিনেশ কুমারের শহিদ হওয়ার খবরে স্থানীয় প্রশাসন, সেনাবাহিনী এবং তাঁর গ্রামবাসীরা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তাঁর পার্থিব দেহ পালওয়ালে পৌঁছানোর পর সামরিক মর্যাদায় তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, দিনেশ কুমার ছিলেন একজন নিষ্ঠাবান এবং সাহসী জওয়ান, যিনি সবসময় দেশের জন্য নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর এই আত্মত্যাগ দেশের প্রতিটি নাগরিকের কাছে একটি প্রেরণা।
সীমান্তবাসীর দুর্দশা
সীমান্তবর্তী গ্রামগুলির বাসিন্দারা প্রায়ই এই ধরনের গোলাবর্ষণের ফলে তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হন। তাদের জীবনযাত্রা, কৃষিকাজ এবং দৈনন্দিন কার্যকলাপ ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা হলেও, এই পরিস্থিতি তাদের মানসিক এবং আর্থিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। স্থানীয় বাসিন্দারা শান্তি এবং নিরাপত্তার জন্য দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সমাধানের আশা প্রকাশ করেছেন।
দিনেশ কুমারের শহিদ হওয়ার ঘটনা আমাদের সকলকে দেশের জন্য সেনাবাহিনীর ত্যাগ ও সাহসের কথা মনে করিয়ে দেয়। পাকিস্তানের এই আগ্রাসী কার্যকলাপের প্রতি ভারতীয় সেনাবাহিনী যথাযথ জবাব দেবে বলে আশা করা যায়। একই সঙ্গে, সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ প্রশংসনীয়। আমরা শহিদ দিনেশ কুমারের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই এবং তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করি।