নয়াদিল্লি: ভারতীয় রেলওয়ে যাত্রীদের জন্য টিকিট বুকিং প্রক্রিয়াকে আরও সহজ ও যাত্রী-বান্ধব করার লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। এ বছরের শুরুতেই তারা রেলওয়ান অ্যাপ চালু করেছে, যা রিজার্ভড এবং আনরিজার্ভড দুই ধরনের টিকিটই বুক করার সুবিধা দেয়। এই সুপার অ্যাপটি যাত্রীদের বিভিন্ন সেবার একক স্থান হিসেবে কাজ করে।
এছাড়া, রিজার্ভড ট্রেন টিকিটের অ্যাডভান্স রিজার্ভেশন পিরিয়ড (এআরপি) কমিয়ে ১২০ দিন থেকে ৬০ দিন করা হয়েছে, যাত্রার তারিখ বাদে। এই পরিবর্তনগুলো যাত্রীদের জন্য নতুন আশার আলো জ্বালিয়েছে, বিশেষ করে বয়স্ক, নারী এবং প্রতিবন্ধী যাত্রীদের জন্য।নিচের বার্থ রিজার্ভেশন নিয়মাবলীতে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হলো স্বয়ংক্রিয় বরাদ্দ ব্যবস্থা।
গর্ভবতী মহিলা, ৪৫ বছরের বেশি বয়সী নারী, ৬০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষ এবং ৫৮ বছরের বেশি বয়সী নারী যাত্রীদের টিকিট বুকিংয়ের সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিচের বার্থ বরাদ্দ করা হবে, যদি তা উপলব্ধ থাকে। এমনকি তারা নির্দিষ্টভাবে নিচের বার্থ চাইলেও না, তবু এই ব্যবস্থা কার্যকর হবে। রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব সংসদে জানিয়েছেন, স্লিপার ক্লাসে প্রতি কোচে ৬-৭টি নিচের বার্থ, এসি ৩ টায়ারে ৪-৫টি এবং এসি ২ টায়ারে ৩-৪টি নিচের বার্থ বিশেষ কোটা হিসেবে সংরক্ষিত রাখা হয়েছে।
তোলপাড় ক্রিকেট দুনিয়া! অবসরের ইঙ্গিত তারকা ক্রিকেটারের
এছাড়া, প্রতিবন্ধী যাত্রীদের জন্য স্লিপার ক্লাসে ৪টি বার্থ (যার মধ্যে ২টি নিচের), ৩এসি/৩ই-তে ৪টি এবং চেয়ার কারে ৪টি সিট সংরক্ষিত।এই নিয়মাবলী চালু হওয়ার পর থেকে লক্ষ লক্ষ যাত্রী উপকৃত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, গত কয়েক মাসে ১.৫ লক্ষেরও বেশি গর্ভবতী মহিলা এবং ১ লক্ষের বেশি প্রতিবন্ধী যাত্রী নিচের বার্থ পেয়েছেন।
যাত্রার মাঝখানে যদি নিচের বার্থ খালি হয়, তাহলে সেই অগ্রাধিকারও বয়স্ক, গর্ভবতী বা প্রতিবন্ধী যাত্রীদের দেওয়া হবে। এটি শুধু আরাম দেয় না, নিরাপত্তাও বাড়ায়। রেলওয়ে মনে করে, উপরের বা মাঝের বার্থে উঠতে গিয়ে অনেকেরই অসুবিধা হয়, বিশেষ করে বয়স্কদের। তাই এই স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালু করে তারা যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে চাইছে।এছাড়া, রেলওয়ান অ্যাপের চালু হওয়া যাত্রীদের জন্য এক বড় সুবিধা।
এই অ্যাপটি ১ জুলাই চালু হয়েছে এবং এটি সব রেল সেবার একক প্ল্যাটফর্ম। রিজার্ভড, আনরিজার্ভড এবং প্ল্যাটফর্ম টিকিট বুকিং থেকে শুরু করে পিএনআর ট্র্যাকিং, ট্রেন স্ট্যাটাস চেক, কোচ পজিশন খোঁজা, রেল মদদ (অভিযোগ নিবেদন), খাবার অর্ডার এবং রিফান্ড রিকোয়েস্ট সবই এখানে এক জায়গায়। অ্যাপটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় ফিচার হলো সিঙ্গল সাইন-অন সিস্টেম।
আপনার আগের আইআরসিটিসি বা ইউটিএস অনমোবাইলের লগইন দিয়েই এখানে লগইন করা যায়, আরেকটি পাসওয়ার্ড মনে রাখতে হবে না। আরআর-ওয়ালেট ইন্টিগ্রেশনের মাধ্যমে সুরক্ষিত পেমেন্টও সম্ভব, যা বায়োমেট্রিক বা এমপিন দিয়ে করা যায়। অ্যাপটি একাধিক ভাষায় উপলব্ধ, যাতে গ্রামীণ এলাকার যাত্রীরাও সহজে ব্যবহার করতে পারেন।
এআরপি কমানোর ঘোষণাও যাত্রীদের জন্য বড় স্বস্তির খবর। আগে ১২০ দিন আগে বুকিং করা যেত, কিন্তু এখন ৬০ দিনে সীমাবদ্ধ। এই পরিবর্তন ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর, যাত্রার তারিখ বাদে। রেলওয়ের তথ্য অনুসারে, ৮৫ শতাংশ বুকিং দু’মাসের মধ্যেই হয়, আর ৬১-১২০ দিনের বুকিংয়ের ২১ শতাংশ ক্যানসেল হয়ে যায়। এতে টাকা আটকে যাওয়া এবং সিটের অপচয় হতো।
এখন এই সমস্যা কমবে, আর সত্যিকারের যাত্রীরা সহজে টিকিট পাবেন। তাজ এক্সপ্রেস বা গোমতী এক্সপ্রেসের মতো দিনের ট্রেনে এই নিয়ম প্রযোজ্য নয়, আর বিদেশী পর্যটকদের ৩৬৫ দিনের অপশন অপরিবর্তিত।এই উদ্যোগগুলো রেলওয়ের ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনের অংশ। রেলমন্ত্রক আশ্বিনী বৈষ্ণব বলেছেন, “যাত্রীদের আরাম এবং নিরাপত্তা আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার।
এই পরিবর্তনগুলো সেই লক্ষ্যে এগিয়ে নেবে।” যাত্রীরা বলছেন, নিচের বার্থের স্বয়ংক্রিয় বরাদ্দ তাদের জন্য বড় উপহার। এক বয়স্ক যাত্রী বলেন, “আগে উপরের বার্থে উঠতে কষ্ট হতো, এখন চিন্তা নেই।” তবে কিছু যাত্রী মনে করছেন, উৎসবে টিকিট পাওয়া এখনও চ্যালেঞ্জিং। রেলওয়ে জানিয়েছে, ততকাল বুকিংয়ে সতর্কতা বাড়ানো হবে।



