গত কয়েক মাসে ভারতীয় রেল (Indian Railways) একের পর এক দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়েছে, যা নিয়ে দেশের জনগণের মনে চরম উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে বাংলায় ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ট্রেন দুর্ঘটনা নিয়ে বারবার প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে ভারতীয় রেলকে। এই অবস্থায় রেলের পরিকাঠামো নিয়ে জোরালো আলোচনা চলছে, এবং এবার ভারতীয় রেল একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে ‘লিডার’ (LiDAR) প্রযুক্তির (Technology) ব্যবহার করতে চলেছে।
‘লিডার’ বা লাইট ডিটেকটিং অ্যান্ড রেঞ্জিং টেকনোলজি (LiDAR) ট্রেন দুর্ঘটনা প্রতিরোধে নতুন প্রযুক্তির একটি আধুনিক উদাহরণ। এই প্রযুক্তি রেলের লাইনে যেকোনো ধরনের গাফিলতি বা সমস্যা ঘটলেই সঙ্গে সঙ্গে সতর্কতা জানাবে। এটি একটি থ্রি-ডি ছবি তুলে ধরবে, যাতে ট্রেন চালক এবং রেল আধিকারিকদের অবহিত করা যায়। পাশাপাশি, একটি বিশেষ অ্যালার্মও বাজবে, যা ট্রেন চালকের কেবিনে এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত রেল আধিকারিকের ঘরে পৌঁছাবে।
রেল কর্তৃপক্ষের দাবি, এই নতুন প্রযুক্তি চালকের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি শক্তিশালী সহায়ক হবে। ‘কবচ’ প্রযুক্তি ইতোমধ্যে ব্যবহার হচ্ছে, কিন্তু ‘লিডার’ প্রযুক্তির ওপর আস্থা রেখে রেল মন্ত্রক আরো উন্নত সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চায়।
প্রাথমিকভাবে, ভারতীয় রেল দূরপাল্লার এক হাজার মেল ও এক্সপ্রেস ট্রেন এবং দেড় হাজার কিলোমিটার রেল লাইনে এই প্রযুক্তির ইনস্টলেশন করবে। এর জন্য প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার দরপত্র প্রকাশ করা হবে। ধাপে ধাপে পুরো দেশের রেল নেটওয়ার্কে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করার পরিকল্পনা রয়েছে, বিশেষ করে স্পর্শকাতর লাইনে।
লিডার প্রযুক্তি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে কাজ করবে, যা ট্র্যাকে কোন ধরনের অবাঞ্ছিত বস্তু বা গাফিলতি থাকলে তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করবে। এই প্রযুক্তির সাহায্যে রিয়েল টাইম তথ্য প্রদান করার ক্ষমতাও রয়েছে, যা দুর্ঘটনার সম্ভাবনা কমাতে সহায়ক হবে।
তবে, নতুন এই প্রযুক্তি কতটা কার্যকর হবে, তা সময়ে্র সঙ্গে সঙ্গে প্রমাণিত হবে। অনেকের আশঙ্কা রয়েছে যে, এই প্রযুক্তি পূর্বের ফগ ডিভাইসের মতো সীমাবদ্ধতায় পড়ে যেতে পারে। অতীতে কয়েকশ কোটি টাকা খরচ করে ফগ ডিভাইস স্থাপন করা হলেও, ঘন কুয়াশার সময়ে ট্রেনের বিলম্ব বন্ধ করা যায়নি।
এখন আশা করা হচ্ছে, ‘লিডার’ প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে ট্রেন দুর্ঘটনা কমবে এবং নিরাপত্তার মান বৃদ্ধি পাবে। ভারতীয় রেলের আধিকারিকদের প্রত্যাশা, এই প্রযুক্তি কার্যকরভাবে কাজ করলে রেলওয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেকটাই শক্তিশালী হবে।
এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ, যা ভারতীয় রেলের সুরক্ষা ব্যবস্থাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। দেশের ট্রেন যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রেল কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানানো উচিত। সময়ের পরীক্ষায় নতুন এই প্রযুক্তির সাফল্য নিশ্চিত করবে, এবং আশা করা যায়, এর মাধ্যমে ট্রেন চলাচল আরও নিরাপদ হবে।