নয়াদিল্লি: গুরু নানক দেবের ৫৫৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শিখ তীর্থযাত্রীদের জাঠায় যোগ দিয়েই পাকিস্তানে গিয়েছিলেন পাঞ্জাবের কপূরথলা জেলার বাসিন্দা সরবজিত কৌর। ৪ নভেম্বর ওয়াঘা–আটারি সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করেছিলেন তিনি। তীর্থযাত্রীদের এই দলটি নানকানা সাহিবের গুরুদ্বারা জনম আস্থান, কর্তারপুরের গুরুদ্বারা শ্রী দরবার সাহিব এবং পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থানে দর্শনে যায়। আকাল তখতের ভারপ্রাপ্ত জথেদার জিয়ানী কুলদীপ সিং গারগজের নেতৃত্বে এগিয়েছিল জাঠাটি। কিন্তু তীর্থের সেই সফরেই সামনে আসে অপ্রত্যাশিত এক ঘটনা। ১৩ নভেম্বর যখন প্রায় ১,৯০০ তীর্থযাত্রী ভারতে ফিরে এলেন, তখনই স্পষ্ট হয় যে সরবজিত কৌর তাঁদের সঙ্গে নেই।
ইমিগ্রেশন দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ
ভারতীয় কর্তৃপক্ষ দ্রুত বিষয়টি পাকিস্তানের ইমিগ্রেশন দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করে। সেখান থেকে জানানো হয়, সরবজিত সীমান্তে ফেরার জন্য প্রয়োজনীয় এক্সিট ক্লিয়ারেন্সের আবেদনই করেননি। এর পরই ভারতীয় পুলিশ একটি প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দেয় এবং পাকিস্তান প্রশাসনের কাছে তাঁর অবস্থান সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হয়। ভারতীয় আধিকারিকরাও সরবজিতের গ্রামে গিয়ে তাঁর পরিবার-পরিজনের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন।
উদ্ধার ‘নিকাহনামা’
ঠিক এই সময়ই প্রকাশ্যে আসে নতুন একটি নথি- উর্দু ভাষায় লেখা একটি ‘নিকাহনামা’। সেই নথিতে দাবি করা হয়েছে, সরবজিত ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে ‘নূর’ নাম নিয়েছেন এবং লাহোরের কাছে শেখুপুরার বাসিন্দা নাসির হুসেন নামে এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেছেন। এই নথি প্রকাশ্যে আসার পরই দুই দেশেই জল্পনা শুরু হয়েছে। তদন্তকারীরা বলছেন, নিকাহনামার সত্যতা এখনও যাচাই করা হয়নি এবং নথিটি আদৌ বৈধ কি না, তা যাচাই না হলে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যাবে না।
৫২ বছর বয়সি সরবজিত কৌরের ব্যক্তিগত জীবনের তথ্যও তদন্তের পরিধিতে এসেছে। তাঁর বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে বহু বছর আগে। প্রাক্তন স্বামী কর্নেল সিং প্রায় তিন দশক ধরে ইংল্যান্ডে থাকেন। সরবজিতের দুই ছেলে রয়েছে। তাঁর পাসপোর্ট পাঞ্জাবের মুক্তসর জেলা থেকে ইস্যু করা, যেখানে স্বামীর নামের জায়গায় বাবার নাম উল্লেখ করা রয়েছে— যা তদন্তকারীদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে ধরা হচ্ছে।
ইচ্ছায় পাকিস্তানে থেকে গিয়েছেন?
সরবজিত নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় এখন একাধিক প্রশ্ন সামনে এসেছে। তিনি কি নিজ ইচ্ছায় পাকিস্তানে থেকে গিয়েছেন? ধর্মান্তর ও বিয়ে কি তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত? নিকাহনামাটি যদি সত্যি হয়, তা হলে কেন তিনি জাঠা থেকে আলাদা হলেন? আবার নথিটি যদি ভুয়ো হয়, তবে কে বা কারা এই ঘটনার পিছনে? তাঁর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় কোনও জোরজবরদস্তি বা প্ররোচনার উপাদান রয়েছে কি? এসব প্রশ্নের উত্তর এখনও অমীমাংসিত।
সরকারি সূত্র জানিয়েছে, সরবজিতের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য না পাওয়া পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত জানানো হবে না। পাকিস্তানে ভারতের দূতাবাসের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ চলছে, এবং নথি-সহ সব তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সংবেদনশীল এই ঘটনায় কেন্দ্র এবং পাঞ্জাব পুলিশ উভয়ই সতর্কতার সঙ্গে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে চলেছে।


