Monday, December 8, 2025
HomeBharatসংবিধান থেকে সম্ভবত সরছে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ ও ‘সমাজতান্ত্রিক’ শব্দ!

সংবিধান থেকে সম্ভবত সরছে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ ও ‘সমাজতান্ত্রিক’ শব্দ!

- Advertisement -

সংবিধানের (Indian Constitution) প্রস্তাবনা থেকে “ধর্মনিরপেক্ষ” (secular) এবং “সমাজতান্ত্রিক” (socialist) শব্দ দুটি বাদ দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে সংসদে ঝড় তুলেছেন বিজেপির রাজ্যসভা সাংসদ ভীম সিং (Bhim Singh)। শীতকালীন অধিবেশনের শুরুতেই তাঁর আনা একটি বেসরকারি সদস্য–বিল (Private Member’s Bill) রাজনৈতিক মহলে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তিনি দাবি করছেন—এই দুই শব্দ ১৯৪৯ সালের মূল প্রস্তাবনায় ছিল না; ১৯৭৬ সালের জরুরি অবস্থার সময় “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে” এগুলো যুক্ত করা হয়েছিল। ফলে মূল সংবিধানের চেতনাকে ফিরিয়ে আনতেই তাঁর এই উদ্যোগ।

বিজেপি সাংসদের দাবি — “শব্দ দু’টি যুক্ত হয়েছিল অনাগরিকিকভাবে”

ভীম সিং সংসদে বলেন— ৪২তম সংশোধনী-র সময় “secular” ও “socialist” শব্দ দুটি “অগণতান্ত্রিক” পন্থায় যুক্ত করা হয়েছিল। সংবিধানের বাকি ধারাগুলিই যথেষ্টভাবে দেশকে ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক করে। তাই “অতিরিক্ত এই শব্দ দু’টি বিভ্রান্তি তৈরি করে।”

   

তাঁর মতে, ১৯৭৬ সালে “socialist” শব্দটি সম্ভবত আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক চাপের কারণে—বিশেষত তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করতে—যোগ করা হয়। “secular” শব্দটি যুক্ত হয়েছিল “এক বিশেষ সম্প্রদায়ের ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতিকে তুষ্ট করার জন্য”—এমনই অভিযোগ তুলেছেন বিজেপি সাংসদ।

তবে তিনি এটাও স্বীকার করেছেন যে, বিল পাস হওয়ার সম্ভাবনা কম, কারণ বেসরকারি সদস্য বিল সাধারণত আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। তবুও, তিনি চান—এই বিতর্কটি জাতীয় পর্যায়ে আরও বিস্তৃত হোক।

ইতিহাসে কী বলা আছে?

সংবিধানের প্রথম খসড়া প্রস্তাবনায় “secular” বা “socialist” কোনো শব্দই ছিল না। ভারত নিজেকে একটি সার্বভৌম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র (Sovereign Democratic Republic) হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছিল।

  • ১৯৭৫–৭৭ সালের জরুরি অবস্থা জারি হওয়ার পর ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস সরকার ৪২তম সংশোধনী আনে।
  • সেই সংশোধনীর মাধ্যমেই “Sovereign Socialist Secular Democratic Republic” শব্দবন্ধটি যুক্ত হয়।
  • সমালোচকদের মতে, জরুরি অবস্থায় বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করা হয়, এবং সংবিধান সংশোধনী নিয়ে তেমন গণতান্ত্রিক আলোচনা হয়নি।
  • ভীম সিং মূলত এই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটই সামনে এনেছেন। তাঁর দাবি—“মূল” সংবিধানের ভাবধারা ফিরিয়ে আনাই উচিত।

সমর্থন বনাম বিরোধিতা — দুই শিবিরেই চরম বিভাজন

সমর্থকরা বলছেন—

  • ভারত সংবিধানগতভাবে ধর্মনিরপেক্ষ, শব্দ না থাকলেও মূল্যবোধ অক্ষুণ্ন থাকে।
  • জরুরি অবস্থায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো পুনর্বিবেচনা করা উচিত।
  • ৪২তম সংশোধনী “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” ছিল।

বিরোধীরা বলছেন—

  • “ধর্মনিরপেক্ষতা” এবং “সমাজতন্ত্র” — ভারতের মৌলিক কাঠামোর অংশ।
  • শব্দ দুটি বাদ দেওয়া মানে সংবিধানের মূল্যবোধে হস্তক্ষেপ।
  • এটি সামাজিক সম্প্রীতি ও রাজনৈতিক ভারসাম্যের বিরুদ্ধে যেতে পারে।
  • সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রস্তাবনাও সাংবিধানিক ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

বিরোধী দলগুলি ইতিমধ্যেই দাবি তুলেছে—এটি “ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রকে আঘাত করার রাজনৈতিক চেষ্টা।”
আইনি জটিলতা কোথায়?

ভারতের সংসদে বেসরকারি সদস্য বিল খুব কমই পাস হয়। ১৯৭০-এর পর থেকে কোনো Private Member’s Bill পূর্ণাঙ্গ আইন হিসেবে কার্যকর হয়নি। ফলে:

  • বিলটি আইন হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় প্রবল।
  • এমনকি পাস হলেও আদালতে চ্যালেঞ্জ আসা নিশ্চিত।
  • কারণ ধর্মনিরপেক্ষতা বিচারব্যবস্থার বহু রায়ে “Basic Structure” বা মৌলিক কাঠামোর অংশ হিসেবে উল্লেখিত।
  • সেক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত নির্ধারক।

* দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিক্রিয়া — বিশেষ নজরে বাংলাদেশ

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষ শব্দ মুছে গেলে:

  • দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক পরিবেশে তার প্রতিক্রিয়া পড়বে।
  • প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে এর প্রভাব বেশি পড়তে পারে, কারণ সেখানকার রাজনীতিতে ধর্মীয় পরিচয়ের ভূমিকা অত্যন্ত প্রবল।
  • ভারত ধর্মনিরপেক্ষ পরিচয় বাদ দিলে আঞ্চলিক কূটনীতি পর্যন্ত নতুন প্রশ্নের জন্ম দিতে পারে।

২০২৫ সালের শীতকালীন অধিবেশনে ভীম সিং-এর বিল নিঃসন্দেহে বড় রাজনৈতিক আলোচনার খোরাক হয়ে উঠেছে। এটি কেবল একটি বিল নয়—এটি ভারতের রাষ্ট্রচরিত্র, সামাজিক ন্যায়বোধ, রাজনৈতিক দর্শন ও সংবিধানের ব্যাখ্যা নিয়ে একটি মৌলিক বিতর্ক।
বিল পাস হোক বা বাতিল—এই প্রস্তাব ভারতের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। বহু বিশেষজ্ঞের মতে, এই বিতর্ক আরও দীর্ঘস্থায়ী হবে, এবং দেশের সাংবিধানিক ভবিষ্যৎ নিয়েও নতুন প্রশ্ন তুলবে।

- Advertisement -
এই সংক্রান্ত আরও খবর
- Advertisment -

Most Popular